কোরআনের সর্ব মহান আয়াত আয়াতুল কুরসির আমল ও ফজিলত

S M Ashraful Azom
0
কোরআনের সর্ব মহান আয়াত আয়াতুল কুরসির আমল ও ফজিলত



সেবা ডেস্ক: উবাই বিন কাব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) উবাই বিন কাব (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমার কাছে কোরআন মজিদের কোন আয়াতটি সর্ব মহান? তিনি বলেছিলেন, (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুআল্ হাইয়ুল কাইয়ুম…) তারপর প্রিয় নবী রাসুল (সা.) নিজ হাত দিয়ে তার বুকে আঘাত করে বলেন, ‘আবুল মুনজির! এই ইলমের কারণে তোমাকে ধন্যবাদ।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৯৬)


আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ

'আল্লাহু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম, লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহু মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্ব। মান জাল্লাজি ইয়াশফা’উ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহিতুনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহি ইল্লা বিমা- শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা, ওয়া হুয়াল আলিয়্যূল আজিম।'


ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন ‘প্রতি ফরজ নামাজের পর যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পড়বে তার জান্নাতে যাওয়ার পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নাসায়ি, হাদিস : ১০০)


এই হাদিস শরিফ থেকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ার নির্দেশনা পাওয়া গেল।


ঘুমানের আগে আয়াতুল কুরসি

এ প্রসঙ্গে সহিহ বোখারিতে এক আশ্চর্য ঘটনা বর্ণিত আছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে রমজানে জাকাত (সাদাকাতুল ফিতরের খেজুর) দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। (রাতে) এক আগন্তুক এসে সেই (স্তূপিকৃত) খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে মুঠিভরে নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, তোমাকে আল্লাহর রাসুল (সা.) এর কাছে হাজির করবো। সে বলল, দেখুন, আমি এক অভাবী, প্রয়োজনগ্রস্ত ও পরিবারের ভারগ্রস্ত লোক! আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।


সকালে নবী রাসুল (সা.) বললেন, আবু হুরায়রা! তোমার গত রাতের বন্দির কী হাল? আমি বললাম, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! সে তার অভাব-অনটন ও পরিবারের ভারগ্রস্ততার কথা বলায় আমার দয়া জেগেছে। তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি! নবী রাসুল (সা.) বললেন, দেখ, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে; সে আবারও আসবে।


ফলে আমার জানা হয়ে গেল, রাসুল (সা.) যখন বলেছেন আসবে, অবশ্যই সে আসবে। আমি তার অপেক্ষায় প্রস্তুত হয়ে রইলাম। এরই মধ্যে সে এসে সেই স্তূপিকৃত খাদ্যবস্তু থেকে মুঠি ভরে নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে বললাম, তোমাকে আল্লাহর রাসুল (সা.) এর কাছে হাজির করবোই। সে তখন বলতে লাগল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি তো অভাবি লোক, পরিবারের ভারগ্রস্ত, আর আসবো না। তার এ কথায় আমার দয়া হলো, ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসুল (সা.) বললেন, তোমার বন্দির কী খবর? আমি বললাম, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! সে তার প্রচণ্ড অভাবগ্রস্ততা ও পরিবারের ভারগ্রস্ততার কথা বলছিল, তাই আমার দয়া হয়েছে, তাকে ছেড়ে দিয়েছি।


তিনি বললেন, দেখ, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আবারও আসবে। তার এ কথায় তৃতীয় রাতেও আমি অপেক্ষায় রইলাম। এক পর্যায়ে সে এসে মুঠিভরে খাদ্য নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেলি এবং বলি, এবার তোমাকে রাসুল (সা.) এর কাছে হাজির করেই ছাড়ব। এ নিয়ে তিনবার ঘটল যে, তুমি বল, আসবে না; কিন্তু আবারও আস। সে তখন বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আপনাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ আপনাকে উপকৃত করবেন। বললাম, কী সেই কথা? সে বলল, যখন বিছানায় যাবেন, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বেন, শেষ পর্যন্ত। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত আপনার জন্য একজন রক্ষাকর্তা নিযুক্ত থাকবেন এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান আপনার কাছে ভিড়বে না। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, গত রাতে তোমার বন্দি কী করল? বললাম, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! সে বলল যে, আমাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দেবে, যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি।


জিজ্ঞাসা করলেন, সে কথাগুলো কী? বললাম, সে বলেছে, যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে। সে বলল, আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত তোমার জন্য এক রক্ষাকর্তা নিযুক্ত থাকবেন আর (সকাল পর্যন্ত) কোনো শয়তান তোমার কাছে ভিড়বে না। সাহাবিরা তো কল্যাণের ব্যাপারে খুবই লালায়িত ছিলেন।


নবী রাসুল (সা.) বললেন, শোন, সে তোমাকে সত্যই বলেছে, যদিও সে ডাহা মিথ্যুক। এরপর বললেন, আবু হুরায়রা! তুমি কি জান পরপর তিনরাত কার সঙ্গে কথা বলেছ? তিনি বললেন, না। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, সে ছিল এক শয়তান। (বোখারি, হাদিস ২৩১১)।


এই হাদিস থেকে শয়তানের বৈশিষ্ট্য ও অন্যান্য বিষয়েও অনেক কিছু জানা যায়। যেমন, যেসব খাদ্যবস্তু দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায় (খেজুর, যব, পনির, কিশমিশ, গম) ইত্যাদি ঈদের দিনের আগে সংগ্রহ করা এবং কাউকে তা সংরক্ষণ ও বণ্টনের দায়িত্ব দেওয়ার বৈধতা। তবে আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, রাতে শোবার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠের সুফল ও ফজিলত।


সকাল-সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসি

উবাই ইবনে কা’ব (রা.) থেকে বর্ণিত, তার একটি খেজুর শুকানোর জায়গা ছিল। তাতে খেজুর হ্রাস পেত। এক রাতে তিনি পাহারায় রইলেন। হঠাৎ তিনি কিশোরের মতো এক প্রাণী দেখতে পেলেন। সে তাকে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোন জাতির? জিন না মানব? সে বলল, জিন। তিনি বললেন, তোমার হাত দাও তো দেখি। সে হাত বাড়িয়ে দিল। দেখা গেল, তার হাত ও পশম কুকুরের মতো। সে বলল, এটা জিনের গঠন। সে আরও বলল, জিনরা জানে, তাদের মধ্যে আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কোনো পুরুষ নেই। তিনি বললেন, কী উদ্দেশ্যে এসেছ? সে বলল, আমি জানতে পেরেছি, আপনি সদকা করতে পছন্দ করেন। তাই আপনার খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে নিতে এসেছি। তিনি বললেন, তোমাদের (অনিষ্ট) থেকে আত্মরক্ষার উপায় কী? সে বলল, সুরা বাকারার এই (আয়াতুল কুরসি) আয়াতটি। যে তা সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। আর যে সকালে পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। সকালে তিনি রাসুল (সা.) এর কাছে এসে বিষয়টি জানালেন। নবী রাসুল (সা.) বললেন, সত্য বলেছে। (ইবনে হিব্বান : ৭৮৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ২০৬৪)।


উপরোক্ত দুই ঘটনায় নবী রাসুল (সা.) এর সমর্থনসূচক উক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, দুর্বৃত্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই আয়াতের আমল কত ফলপ্রসূ।


এ পর্যন্ত আয়াতুল কুরসির ফজিলত সংক্রান্ত মোট তিনটি হাদিস উল্লিখিত হয়েছে। এই হাদিসগুলো থেকে প্রতিদিন আটবার এই আয়াত পাঠ করার নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে, সকাল-সন্ধ্যায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ও শোওয়ার সময়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কেউ যদি এই মোবারক আয়াতের অর্থ-মর্ম স্মরণ রেখে উপলব্ধির সঙ্গে তা পাঠ করে, তাহলে তা তার জন্য অত্যন্ত বরকতের বিষয় হবে।


অর্থ-মর্ম স্মরণ রাখার গুরুত্ব

কোরআন মাজিদের তেলাওয়াত যেহেতু একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইবাদত, তাই অর্থ না বুঝলেও তা অর্থহীন নয়। অর্থ না বুঝলেও তেলাওয়াতের সওয়াব অবশ্যই পাওয়া যাবে। কিন্তু এই মাসআলার অর্থ কিছুতেই এই নয় যে, কোরআন মাজিদের অর্থ বোঝার চেষ্টা না- করা কাম্য বা অর্থ বোঝার চেয়ে অর্থ না- বোঝাই শ্রেষ্ঠ!


পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে এই মোবারক কালামের অর্থ-মর্ম বোঝার এবং গভীর অভিনিবেশ সহকারে তা পাঠ করার নির্দেশ আছে। তাই কোরআন মাজিদের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিক্ষার মতো কোরআনে কারিমের অর্থ-মর্ম বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করা এবং চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে তা তেলাওয়াত করা কাম্য। এতে যেমন মুমিনের জ্ঞান ও ঈমান বৃদ্ধি পায়, তেমনি তার মন-মস্তিষ্ক, আত্মা ও হৃদয় কোরআনের নুরে নুরানি হয়ে ওঠে। 


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top