শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী প্রতিনিধি : বন্যহাতির খাদ্য সঙ্কট বেড়েছে, এদের চলাচলের করিডোরে নিত্য গড়ে উঠেছে স্থাপনা। ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হচ্ছে তাদের বসবাসের স্থান। তাদের চলাফেরায় তৈরি হয়েছে নানা ব্যাঘাত। এ কারণে প্রায়ই বেপরোয়া আচরণ করছে বন্য হাতির দল।
বাঁশখালীর পূর্ব চাম্বল লেবুর ঝিরি পাহাড়ি এলাকায় হাতির পাল। |
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এখন প্রায় প্রতিরাতেই হানা দিচ্ছে বন্য হাতির দল। সন্ধ্যা নামার পরপরেই ভাঙচুর করছে বসতঘর, দোকানপাট। তছনছ করছে খেতের ফসল।
গত শুক্রবার (৬ জানুয়ারী) রাতে বন্যহাতির আক্রমণে বাণীগ্রামে দু'টো বসতঘরের দরোজা জানালা ভেঙেছে। ওই এলাকার রণধীর চৌধুরী এবং শ্রীহরি দে'র ঘরের ধান-চাল খেয়ে গেছে হাতির দল। ইতিপূর্বেও বহু জমির ফসল ও ধান খেয়েছে হাতির দল। হাতির তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধনপুর ইউনিয়নের অনেক পরিবার, পান চাষী ও প্রান্তিকের কৃষকরা। এভাবে প্রায় সময় দলবদ্ধ বন্যহাতির রোষানলে পড়ে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বনবসতি এমটি জানান সাধানপুর ইউপির চেয়ারম্যান কে.এম সালাহ উদ্দিন কামাল।
বাঁশখালীর পূর্বসীমায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে বনাঞ্চল। বনবিভাগের দেওয়া তথ্যমতে এ অঞ্চলে হাতির সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০টির মতো। পূর্বসীমান্তে পুঁইছড়ি, জঙ্গল নাপোড়া, চাম্বল, শীলকূপ, জলদী, বৈলছড়ি, কালীপুর, সাধনপুর, পুকুরিয়া চাঁদপুর বৈলগাঁও এলাকায় প্রতিদিনই হাতিরপাল প্রবেশ করছে লোকালয়ে। খেতের ফসল নষ্ট করছে। হানা দিচ্ছে বসতঘরে। প্রতি বছরই পূর্বে পাহাড়ি অঞ্চলের লোকজন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
বন বিভাগের সাধনপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, 'বন উজাড় হচ্ছে প্রতিদিন। খাদ্য সংকট বেড়েছে। খাবারের জন্য হাতিরপাল লোকালয়ে প্রবেশ করছে প্রতিদিন। বসতঘরে হানা সহ ফসলী জমি নষ্ট করছে। আমার আওতাধীন পুকুরিয়া, সাধনপুর, কালীপুর, চেচুরিয়া এলাকায় গত আগস্ট মাস পর্যন্ত হাতির তান্ডবে ক্ষয়ক্ষতির ১৮টি আবেদন আসে। এভাবে প্রতিদিনই বাঁশখালীর পূর্ব পাহাড়ী এলাকায় হাতিরপাল তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।'
বাঁশখালীর সাধনপুরে লোকালয়ে হাতির তান্ডবে দু'বসতঘরে ভাঙচুর। |
উপজেলার বাঁশখালী ইকোপার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও জলদী অভয়ারণ্য রেঞ্জার কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ জানান, 'বাঁশখালীর প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার জুড়ে পাহাড়ি অঞ্চল। এ অঞ্চলে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টির অধিক হাতি রয়েছে। জলদীর পাহাড়ি অঞ্চলে হাতির সংখ্যা একটু বেশী। উপজেলার পুঁইছড়ি থেকে পুকুরিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন লোকালয়ে প্রতিদিনই হাতিরপাল প্রবেশ করছে। বিশেষ করে টেকনাফ, মায়ানমার, কক্সবাজার, চট্টগ্রামের বাঁশখালী করিডোরে হাতির চলাচলের পথে স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে। যার কারণে হাতির স্বাভাবিক চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। দোহাজারী চুনতি রেললাইন চালু হলে হাতির চলাচলে আরো সমস্যা বাড়বে। মূলত খাদ্য সংকট ও হাতির আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও বন্য হাতির তান্ডব চলছে।'
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, 'বনভূমি ধ্বংসের কারণে হাতির আবাসস্থল ও খাদ্য সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। চলাচলের জন্য নতুন করিডোর হিসেবে আনোয়ারা-বাঁশখালীকে ব্যবহার করছে। খাবারের সন্ধানে হাতি দলবেঁধে লোকালয়ে ঠাঁই নিয়েছে। তাতে মানুষের মুখোমুখি হয়ে পড়ায় বসতঘরসহ নানা স্থাপনা ভাঙচুর ও ফসলহানি ঘটছে। ঘটছে প্রাণহানিও।'
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।