শফিকুল ইসলাম : গত কয়েক দিনের অভিরাম ভারী বর্ষনে ও উজান থেকে নেমেআসা ভারতীয় পাহাড়ী ঢলে কুড়িগ্রামের রৌমারী ও চর রাজিবপুরে ২টি উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৫৬টি মৌজার ৩’শ টি গ্রামের মধ্যে ২০টি গ্রামের ৪০ হাজার মানুষসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলের ও নিম্নাঞ্চল পানিবন্ধি হয়েছে।
অপর দিকে কৃষকের বীজতলা,শাকসবজি ও রোপাআমন ধানসহ নানান প্রকার ফসল তলিয়ে গেছে। চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
রবিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানিবন্ধি হয়েছে রৌমারী উপজেলার ফলুয়ারচর, পালেরচর, গোয়ালেরচর, ঠাকুরেরচর, বাইশপাড়া, কান্দাপাড়া, সুখেরচর, খেরুয়ারচর, পাখিউড়া, ধনারচর চরেরগ্রাম, গুচ্ছগ্রাম অপরদিকে রাজিবপুর উপজেলার চরশাজাই, ডাটিয়ারচর, কোদালকাটি, শংকরমাধবপুর, কোদালকাটি, বড়চর, নাওশালা,জালছিড়া, সাজাই মন্ডলপাড়াসহ ২০টি গ্রাম। বন্যার পানি বৃদ্ধি হওয়ায় ব্রহ্মপুত্র ও জিঞ্জিরাম নদী উপচে গিয়ে ওইসব নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্ধি হয়ে পড়ে ২০টি গ্রাম। ফলে ওই এলাকার মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে নৌকা বা ভেলা দিয়ে পারাপার হচ্ছে।
শংকরমাধবপুর গ্রামের ছকিনা বেওয়া বলেন, আমরা গরিব মানুষ নদীতে আমাগরে সর্বনাশ করেদিয়েছে। আমরা নদীর মধ্যে বসবাস করি আমাগরো নদী পাড় হতে অনেক ভয় হয়। কয়দিনের বৃষ্টির কারনে আমরা পাকশাক করবার পারিনা। না খেয়ে আমাদের অনেক সময় থাকা নাগে।
কোদালকাটি গ্রামের মানিক মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, আমরা কামলা (দিনমুজুর) দিয়ে সামান্য যে কয়টাকা পাই তাই দিয়া আমাদের কনোমতে সংসার চলে। সব সময় কামলা চলে না। গত কয়দিনের বৃষ্টির করনে কোথাও যাইতে পারিনা। বাড়িতে পানি খাবার অভাবে সন্তানদেরকে নিয়া কিভাবে যে বাইচা আছি তা আল্লাহই ভালোজানে।
চরসাজাই মন্ডলপাড়া গ্রামের আমিনুল মাষ্টার বলেন, কোদালকাটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম পানি বন্ধি হয়েছে। এবং কয়েক দিনের অভিরাম ভারী বর্ষনে ভিজে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রী অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে।
রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের ফলুয়ারচর স্বত্বত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার মাদ্রাসাটির চাল ছিদ্র থাকার কারনে ঘরের ভিতরে পানি পড়ে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষনের কারনে মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো অনেক কষ্ট হচ্ছে। ঘরটি ভালো করার জন্য উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার বললেও এখন পর্যন্ত কনো ব্যবস্থা নেইনি।
বন্দবেড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল কাদের সরকার বলেন, কয়েক দিনের টানা বর্ষন ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে আমার এলাকার ফলুয়ারচর, পালেরচর, বাইসপাড়াসহ কয়েকটি গ্রাম পানিবন্ধি ও প্লাবিত হয়েছে। ওই এলাকার মানুষ বর্তমানে নৌকা দিয়ে পারাপার হচ্ছে। আরো কয়েকদিন এ অবস্থা থাকলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।
রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আঃ’লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির ছক্কু বলেন, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষন ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে আমার এলাকার কোদালকাটি, সাজাই মন্ডলপাড়া, শংকরমাধবপুরসহ কয়েকটি গ্রাম পানিবন্ধি ও প্লাবিত হয়েছে। এতে সবচেয়ে ঝুকিতে রয়েছে শংকরমাধবপুর গ্রামটি তিনি আরো বলেন, শুকনা খাবার না থাকার কারনে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় আক্রান্ত রোপা আমন ধান ৩১০ হেক্টর, শাকসবজি ৩২ হেক্টর ও বীজতলা ৬ হেক্টর প্রায় ৩ ৪৮ হেক্টর তলিয়ে গেছে।
রৌমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেশকাতুর রহমান বলেন, ঝুকিপূর্ণ এলাকায় আমাদের শুকনা খাবার বিতারণ চলোমান রয়েছে। জেলা প্রশাসক থেকে শুকনা খাবারের বরাদ্দ পেয়েছি। শুকনা খাবার কেনাও হয়েছে তা প্যাকেট চলছে অল্প সময়ের মধ্যে তা বিতরণ করা হবে।
চর রাজিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার ফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
চর রাজিবপুর উপজেলার নির্বহী অফিসার তানভির আহমেদ বলেন, নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নীচে রয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত মানুষের জানমালের উপর তেমন কনো প্রভাব পড়েনি। তবে নদ-নদীতে পানি এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রৌমারী উপজেলার নির্বহী অফিসার নাহিদ হাসান খান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য শুকনো খাবারসহ সকল বিষয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।