ভারতে অবসান হতে চলেছে মোদির এক দলীয় শাসনের

Seba Hot News
0

সেবা ডেস্ক: এক দশক পরে আবারও একদলীয় শাসনের ইতি হতে চলেছে প্রতিবেশি দেশ ভারতের। একইসাথে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরতে চলেছে বিরোধী দল-নেতার পদ। 

ভারতে অবসান হতে চলেছে মোদির এক দলীয় শাসনের




মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ভোটগণনার ঘোষিত ফলাফল এবং প্রবণতা এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তৃতীয় বারের জন্য নরেন্দ্র মোদির হাতেই দেশের ভার দিতে চলছে জনতা। তবে ভোটগণনার প্রবণতা বলছে, ২০১৪ এবং ২০১৯-এর মতো এবার আর সংসদের নিম্নকক্ষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না তার দল বিজেপি। ‘৪০০ পার’ দূর অস্ত, আড়াইশো পার করাও কঠিন হতে চলেছে পদ্মশিবিরের। ৫৪৫ আসনের (দু’টি মনোনীত আসন-সহ) লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭৩টি। প্রবণতা অনুযায়ী বিজেপির দৌড় আড়াইশোর আগেই থেমে যেতে পারে!

অর্থাৎ, কেন্দ্রে সরকার গড়ার জন্য টিম মোদিকে নির্ভর করতে হবে এনডিএ-র দুই শরিক, চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নীতীশ কুমারের জেডিইউ-এর উপর। ঘটনাচক্রে অতীতে ওই দুই নেতারই একাধিক বার এনডিএ ত্যাগের এবং প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস রয়েছে। দেশের ইতিহাসে মোদিই হতে চলেছেন দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি পর পর তিন বার ক্ষমতায় এলেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে জওহরলাল নেহরুর মতো পর পর তিন বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা দখলের রেকর্ড করা সম্ভবত হচ্ছে না তার। যদিও প্রধানমন্ত্রী নিজে একাধিক বার দাবি করেছিলেন, এককভাবে বিজেপি ৩৭০ আসনে জিতবে।

অন্যদিকে, এই লোকসভা নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা ফিরিয়ে আনতে পারে বলে গণনার ইঙ্গিত। বিরোধী দলনেতার পদের জন্য লোকসভায় ৫৫টি আসনে জেতা প্রয়োজন। কিন্তু ২০১৪-য় ৪৪ এবং ২০১৯-এ ৫২টি আসনে জেতা কংগ্রেস সংসদীয় বিধি অনুযায়ী সেই মর্যাদা পায়নি। এ বার ভোটগণনার প্রবণতা বলছে ৯০ থেকে ১০০টির মধ্যে আসন জিততে পারে মল্লিকার্জুন খড়্গের দল। ‘ইন্ডিয়া’র সব সহযোগী দল মিলে দু’শোর গণ্ডি টপকাতে চলেছে। ফলে লোকসভার অধিবেশনেও এ বার বিরোধীদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে মোদীকে।

মাত্র এক বছর আগে গড়ে ওঠে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির যৌথমঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)-র (যে জোটের যার নামকরণে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে বিরোধী শিবির সূত্রের খবর) ফল যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। গত ১৯ জুলাই বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী নেতাদের দ্বিতীয় বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’র আবির্ভাবের সঙ্গেই ইতিহাসের পাতায় চলে গিয়েছিল ১৯ বছর আগে গড়ে ওঠা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ (ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স)।

‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলির মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ বা আংশিক আসন সমঝোতা হয়েছিল এ বারের ভোটে। বাংলায় তৃণমূল, কেরলে বাম, পঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ), জম্মু ও কাশ্মীরে পিডিপির মতো কেউ আবার কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ভোটের পর জোটের প্রতিশ্রুতিতে নিজেদের রাজ্যে আলাদা করে লড়েছেন। ২০২৩ সালের ২৩ জুন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমারের ডাকে পটনার বিরোধী জোটের বৈঠকে ১৫টি দল ছিল। জুলাইয়ে বেঙ্গালুরুতে সেই তালিকা বেড়ে হয়েছিল ২৬। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে নীতীশ সদলবলে ফিরে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-তে। কিন্তু তাঁর দল ভাল ফল করলেও ২০১৯-এর তুলনায় মগধভূমে আসন কমল ‘পদ্মে’র।

ছয় রাজ্যে বিজেপির আসন কমেছে ৩ কারণে

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে আসন কমেছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের। তবে কী কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো তা খতিয়ে দেখতে চায় বিজেপি।
প্রাথমিকভাবে বিজেপি মনে করছে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট এবার এই রাজ্যগুলোতে ব্যাপক কাজ করেছে। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশে। সেই রাজ্যে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির ভোট একে অপরের দিকে পুরোপুরি বদলও হয়েছে। এই ভোট স্থানান্তরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দলিত-অনগ্রসর ভোটে ব্যাপক ভাঙন। এই রাজ্যে দলিত ও অনগ্রসর ভোট বিজেপি তার দিকে টেনে এনেছিল প্রধানত সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং মারফত। 

মায়াবতীর দল বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) দিনে দিনে হীনবল হয়েছে। কিন্তু এবার কংগ্রেস সংবিধান রক্ষার প্রশ্নটি বড় করে তুলে ধরে। প্রতিটি জনসভায় রাহুল গান্ধী সংবিধান হাতে নিয়ে দলিত-অনগ্রসর সমাজের উদ্দেশে বলেছেন, বিজেপি ৪০০ আসন পেতে চায়, যাতে তারা আম্বেদকরের সংবিধান নিজেদের মতো করে লিখতে পারে। তারা সেটা করতে চায় সংরক্ষণ প্রথা তুলে দিতে।

কংগ্রেসের এই প্রচার উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিজেপি সেই প্রচারের মোকাবিলা করতে পারেনি। এসব রাজ্যে বিজেপি দলিত-অনগ্রসরদের সমর্থন হারিয়েছে। খুইয়েছে ৩৭টি আসন।

দ্বিতীয় যে প্রচার বিজেপিকে বিপদে ফেলেছে, সেটা হচ্ছে ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প। উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও রাজস্থান থেকে হাজার হাজার তরুণ সেনাবাহিনীতে ভর্তি হন। ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প সেনাবাহিনীতে স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা তুলে দিয়ে চুক্তিভিত্তিক চার বছরের চাকরি এনেছে। মেয়াদ শেষে জওয়ানরা কিছু টাকা পেয়ে বেকার হবেন। চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে থাকাকালে শহিদ হলে ক্ষতিপূরণ পাবেন, কিন্তু শহিদের মর্যাদা পাবেন না। অন্যান্য সুযোগ–সুবিধাও পাবেন না।

রাহুল প্রতিটি জনসভায় বলেছেন, সরকার গড়ার পর এই প্রথা তুলে দেওয়া হবে। সেনাবাহিনীতে দুই ধরনের শহিদের স্থান থাকবে না। সবাই একই রকম মর্যাদা পাবেন। একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও পেনশন পাবেন। নিয়োগ হবে স্থায়ী। ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকেরাও সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর প্রভাবও বিজেপি ব্যর্থ করতে পারেনি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার কথা বললেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।

তৃতীয়ত কৃষক আন্দোলনের রেশও এই রাজ্যগুলোতে ব্যাপকভাবে পড়েছে এবং তা বিজেপির বিরুদ্ধে গেছে। কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোটের প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এলে কৃষিপণ্যের সহায়ক মূল্য বা এমএসপির আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কংগ্রেসের ইশতেহারেও এই প্রতিশ্রুতি লিখিতভাবে দেওয়া হয়। বিজেপি সেই প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

ভোটের ফল নিয়ে যা বললেন মোদি

বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সকে (এনডিএ) বিজয়ী করার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মঙ্গলবার ফলাফল নিয়ে মন্তব্য জানাতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স পোস্টে মোদি বলেন, টানা তৃতীয়বারের জন্য মানুষ এনডিএ’র ওপর আস্থা রেখেছে। এটা ভারতের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ঘটনা।

লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ২৯৭ আসনে এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে ভারতের বিরোধী জোট ইন্ডিয়া ২৩২ আসনে এগিয়ে আছে।

এদিকে ভোটের অবস্থা দেখে বিজেপির নেতৃত্বে গঠিত এনডিএ জোটের বৈঠক ডেকেছেন বিজেপির প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, আগামীকাল বুধবার বৈঠকের ডাক দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এতে চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি ও নীতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড উপস্থিত থাকবে বলে জানা গেছে। এর আগে বিজেপিও নিজেদের মধ্যে বৈঠক করবে।

গত ১৬ মার্চ লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছিল ভারতের নির্বাচন কমিশন। প্রথম দফার নির্বাচন হয় ১৯ এপ্রিল। সেই থেকে ১ জুন পর্যন্ত মোট সাত দফায় ভারতের ৫৪৩ লোকসভার আসনে ভোট নেয়া হয়েছে। এবারের নির্বাচনে প্রায় ৬৫ কোটি ভারতীয় ভোটার ভোট দিয়েছেন।

হঠাৎ সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন রাহুল গান্ধী

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার মধ্যেই হঠাৎ নয়াদিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় সংবিধানের একটি অনুলিপি তুলে ধরে কংগ্রেস নেতা রাহুল বলেছেন, দলের কর্মীরা সংবিধান বাঁচানোর প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কংগ্রেস পার্টি দেশবাসীকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।

তিনি বলেন,  দেশের মানুষ বলেছে, তারা চায় না নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ এই দেশ পরিচালনা করুক।
 
এদিকে নির্বাচনে ভালো ফলের কথা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, এটা শুধু আমাদের নয়, জনগণের বিজয়। এটা গণতন্ত্রের জয়। ভারতের জনগণ মোদির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার পথ বেছে নিয়েছে এবং তার নৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে।
 
কংগ্রেস সভাপতি বলেন, আমাদের লড়াই এই দেশের বেকার, কৃষক এবং দরিদ্রদের নিয়ে। এটিই আমাদের পথ খুলে দিয়েছে। আর বিজেপি মিথ্যা এবং ঘৃণা ছড়িয়েছে, মানুষ যা প্রত্যাখ্যান করেছে।
 
নির্বাচনে এখন পর্যন্ত মোট ৭৭টি আসনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়েছে। চূড়ান্ত ফলাফলে ৭৭টি আসনের মধ্যে ৪৮টিতে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। ১৬টি আসনে জিতেছে কংগ্রেস। দুটি আসনে জয় পেয়েছে  জনতা দল (জেডি-এস)। 


কংগ্রেস জোটের চমকের নেপথ্যে যে কারণ

ভারতের উত্তর প্রদেশে লোকসভা আসন ৮০টি। গত নির্বাচনে সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিজেদের দখলে রেখেছিল ক্ষমতাসীন বিজেপি। তবে এবার এই রাজ্যে এখন অবধি ৪৫টি আসন এসেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের হাতে। রাজ্যটিতে ইন্ডিয়া জোটের এগিয়ে থাকার পেছনে কারণ কী? 
বিজেপি–শাসিত উত্তর প্রদেশে প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি (এসপি)। এবারের লোকসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের হয়ে ৩৭টি আসনে এগিয়ে রয়েছে দলটি। এই অগ্রগতির পেছনে তাদের একটি কৌশল কাজে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেটি হলো, এবার প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যাদবদের চেয়ে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) বাইরের প্রার্থীদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছে সমাজবাদী পার্টি।

এবার পাঁচজন যাদব প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে সমাজবাদী পার্টি। তারা সবাই দলটির প্রধান অখিলেশ যাদবের পরিবারের সদস্য। যাদব নয়, এমন ওবিসি সম্প্রদায়ের প্রার্থীরা মনোনয়ন পেয়েছেন ২৭ আসনে। উচ্চ বর্ণের প্রার্থীদের দেওয়া হয়েছে ১১টি আসন। দলটি থেকে চারটি আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মুসলমান প্রার্থীরা। এছাড়া সংরক্ষিত আসনে ১৫ জন দলিত প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি।

২০১৯ সালে শেষ লোকসভা নির্বাচনে বিএসপি ও আরএলডির সঙ্গে জোট করেছিল সমাজবাদী পার্টি। সেবার ৮০টি আসনের মধ্যে ৩৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল দলটি। ঐ নির্বাচনে ১০ আসনে যাদব প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়। নির্বাচনে মাত্র ৫টি আসনে জয় পেয়েছিল সমাজবাদী পার্টি। বিএসপি পেয়েছিল ১০টি আসন। আর বিজেপি ৬২ আসন নিজেদের দখলে রেখেছিল।

অপর দিকে এবার বিজেপি উত্তর প্রদেশে ৭৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। রাজ্যের দলটির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের তিন মিত্র পেয়েছে বাকি পাঁচটি আসন। ৭৫ আসনের মধ্যে উচ্চ বর্ণের প্রার্থীদের ৩৪টি আসন দিয়েছে বিজেপি। ২৫টি আসন দিয়েছে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের প্রার্থীদের। তাদের মধ্যে একজন যাদব রয়েছেন। বাকি ১৬টি সংরক্ষিত আসন।

এবার নির্বাচন ঘিরে উত্তর প্রদেশে এনডিএ ও ইন্ডিয়া জোটের প্রচার–প্রচারণায়ও বড় তফাৎ ছিল। নির্বাচনের আগে প্রচারের জন্য বড় বড় সভা–সমাবেশ করেছে বিজেপি। এসব আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তবে ছোট শহর বা গ্রামের দিকে তাদের নজর ছিল কম।

অপরদিকে সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস তৃণমূলের মানুষের কাছে পৌঁছানোর বিষয়ে বেশি জোর দিয়েছে। যেমন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী রায়বেরিলি ও আমেথি আসনে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে বড় কোনো সমাবেশ করেননি। এর বিপরীতে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০টির বেশি জনসচেতনতামূলক সভা করেছেন তিনি।

ভারতে বর্তমানে তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল সমাজবাদী পার্টি। এবারের নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের পশ্চিম, মধ্য ও পূর্ব—মোটামুটি সব অঞ্চলেই জয়ের পথে রয়েছে দলটি। বুন্দেলখন্দ অঞ্চলেও কয়েকটি আসনে জয় পেয়ে চমক দেখিয়েছে তারা। এই আসনগুলো ২০১৪ ও ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির দখলে ছিল।

ভারতীয় লোকসভা নির্বাচনে কোথায় কতটি আসন

বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে মাসব্যাপী নির্বাচনি যজ্ঞ শেষ হয়েছে। আজ ফল ঘোষণার পালা। ফল নির্ধারণ হয় ভোট গণনার ভিত্তিতে। বিজেপি নাকি কংগ্রেস, এনডিএ নাকি ইন্ডিয়া জোট- ১৯শে এপ্রিল থেকে পহেলা জুন পর্যন্ত লোকসভা নির্বাচনে কারা বিজয়ী হয়ে নতুন সরকারের দায়িত্ব নিচ্ছেন, সেটা আজ জানা যাবে।
গত কয়েক বছর ধরেই লোকসভা নির্বাচনে সব কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণ করা হয়ে থাকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের মাধ্যমে। এবারেও তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। 

ভারতের পার্লামেন্টে দু’টি কক্ষ রয়েছে – নিম্নকক্ষ (লোকসভা) ও উচ্চকক্ষ (রাজ্যসভা)। লোকসভার ৫৪৩ জন পার্লামেন্ট সদস্যকে বেছে নেওয়ার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একজন করে এমপি পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনি বিজয়ী হন।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে: ভোটারদের অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে, বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে, তাকে একজন নিবন্ধিত ভোটার হতে হবে, সেইসাথে তাদের একটি বৈধ সরকারি আইডি কার্ডও প্রয়োজন।

পার্লামেন্টে ১৩১টি সংরক্ষিত আসন আছে – ভারতে যেসব গোষ্ঠী সরকারীভাবে সুবিধাবঞ্চিত হিসেবে স্বীকৃত এবং ভারতের জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ; তারাই এই সংরক্ষিত আসনগুলোর প্রতিনিধিত্ব করেন।

ভারত যদিও এক তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য বরাদ্দ করতে একটি আইনও পাস করেছে, তবে এটি কয়েক বছর ধরে কার্যকর হচ্ছে না।

ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলভিত্তিক লোকসভা আসন বণ্টন:

উত্তরপ্রদেশ- ৮০ মহারাষ্ট্র- ৪৮ পশ্চিমবঙ্গ- ৪২ বিহার- ৪০ তামিলনাড়ু- ৩৯ মধ্যপ্রদেশ- ২৯ কর্ণাটক- ২৮ গুজরাট- ২৬ অন্ধ্রপ্রদেশ- ২৫ রাজস্থান- ২৫ ওড়িশা- ২১ কেরালা- ২০ তেলেঙ্গানা- ১৭ আসাম- ১৪ ঝাড়খণ্ড- ১৪ পাঞ্জাব- ১৩ ছত্তিশগড়- ১১ হরিয়ানা- ১০ দিল্লি- ৭ জম্মু ও কাশ্মীর- ৫ উত্তরাখণ্ড- ৫ হিমাচল প্রদেশ- ৪ অরুণাচল প্রদেশ- ২ গোয়া- ২ মণিপুর- ২ মেঘালয়- ২ মিজোরাম- ২ ত্রিপুরা- ২ আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ- ১ চণ্ডীগড়- ১ দাদরা ও নগর হাভেলি- ১ দমন ও দিউ- ১ লাদাখ- ১ লাক্ষাদ্বীপ- ১ নাগাল্যান্ড- ১ পন্ডিচেরী- ১ সিকিম- ১

ভারতের ৫৪৩ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭২টি আসন। ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো ভারত। কোন রাজ্যে কে জয়ী হবে তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। বিজেপি নাকি কংগ্রেস, এনডিএ জোট (নরেন্দ্র মোদি) নাকি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট (রাহুল গান্ধী); লোকসভা নির্বাচনে কারা বিজয়ী হয়ে নতুন সরকার গঠন করবে, এগিয়ে চলছে সেই প্রক্রিয়া। 

(ads1)

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top