সেবা ডেস্ক: শাহজালাল বিমানবন্দরে নতুন রাডার স্থাপনের মাধ্যমে দেশের আকাশপথের নিরাপত্তা জোরদার হচ্ছে এবং ওভারফ্লাইং ফি আদায় সহজতর হচ্ছে, যা আর্থিকভাবে দেশকে উপকৃত করবে।
অত্যাধুনিক রাডার স্থাপন: শাহজালাল বিমানবন্দরে আকাশপথ নজরদারিতে যুগান্তকারী উন্নয়ন
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক রাডার স্থাপন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে। অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ৪৫ মিটার উঁচু কন্ট্রোল টাওয়ারটি দূর থেকেই চোখে পড়ে। নতুন রাডারটি ইতোমধ্যে চালু হলেও পুরোপুরি উদ্বোধনের আগে কিছু কাজ বাকি রয়েছে। ফ্রান্সের বিখ্যাত কোম্পানি থ্যালাস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে, যা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে আগামী এপ্রিলেই হস্তান্তর করা হবে।
প্রকল্পের অগ্রগতি ও থ্যালাসের ভূমিকা
বেবিচক সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সাল থেকে নতুন রাডার দিয়ে দেশের আকাশপথের নজরদারি চালানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৯৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই রাডার দিয়ে বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকা এবং বাংলাদেশের আকাশের উপর নজরদারি চালানো সম্ভব হচ্ছে। এটিসি টাওয়ার ও সিস্টেম ইনস্টলেশনের কাজ বাকি থাকলেও এপ্রিলের মধ্যে সবকিছু হস্তান্তর করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এই অত্যাধুনিক রাডার ব্যবস্থায় রয়েছে হেলমেট, এডিএস-বি, ও মাল্টিলেটারেশনের মতো সুবিধা, যা উড়োজাহাজের নিখুঁত অবস্থান নির্ধারণ করতে সক্ষম। এটি ঢাকা থেকে ২৮০ নটিক্যাল কিমি দূরের আকাশসীমায় সব ধরনের প্লেনের অবস্থান নির্ভুলভাবে ধরতে পারে।
বর্তমান রাডার সিস্টেমের সমস্যা
বর্তমানে ব্যবহৃত রাডার ৪৪ বছরের পুরনো। এই পুরনো প্রযুক্তির কারণে দেশের আকাশপথ এবং বঙ্গোপসাগরের বড় অংশ নজরদারির বাইরে থেকে যায়। ফলে ওভারফ্লাইং ফি পুরোপুরি আদায় করা সম্ভব হয় না। এখন নতুন রাডার বসানোর মাধ্যমে প্রতিটি বিদেশি উড়োজাহাজ থেকে ফি আদায় করা সম্ভব হচ্ছে, যা দেশের আর্থিক উপার্জনে বড় ভূমিকা রাখবে।
ব্যয়ের সাশ্রয় এবং থ্যালাসের সঙ্গে চুক্তি
রাডার প্রকল্পটি শুরুতে ২১০০ কোটি টাকার বাজেটে অনুমোদিত হলেও, ফ্রান্সের থ্যালাস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এটি মাত্র ৬৫৮ কোটি টাকায় সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। এর ফলে সরকারের প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এর আগেও নানা প্রতিবন্ধকতা ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রকল্পটি বিলম্বিত হয়েছিল। তবে বর্তমানে থ্যালাসের মাধ্যমে প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে চলছে। বেবিচক এবং থ্যালাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় দ্রুত কাজ শেষ হচ্ছে।
নতুন রাডারের সুবিধা ও নিরাপত্তা
নতুন রাডার ব্যবস্থা বসানোর ফলে বাংলাদেশের আকাশপথের নিরাপত্তা অনেক বেশি জোরদার হয়েছে। এখন দেশের আকাশে নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া ড্রোন এবং অন্যান্য আকাশযানও সহজেই শনাক্ত করা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রাডার ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের আকাশপথের সার্বভৌমত্ব এবং বাণিজ্যিক ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ আরও উন্নত হবে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রথম শ্রেণির বিমানবন্দরের পর্যায়ে উত্তীর্ণ হবে বাংলাদেশ।
শাহজালাল বিমানবন্দরে নতুন রাডার স্থাপনের মাধ্যমে দেশের বাণিজ্যিক আকাশসীমা পূর্ণাঙ্গ সারভেইল্যান্স ও অটোমেশনের আওতায় আসছে। এটি দেশের বিমান চলাচলকে আরও নিরাপদ করবে এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। এছাড়া, ওভারফ্লাইং ফি আদায়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।