ভাড়াভিত্তিক চার বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ল

S M Ashraful Azom
গ্যাসচালিত ভাড়াভিত্তিক চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। এর মধ্যে ‘ঘোড়াশাল ১৪৫ মেগাওয়াট’ ও ‘ফেঞ্চুগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট’-এর চুক্তির মেয়াদ তিন বছর এবং এগ্রিকো পরিচালিত ‘বিবাড়িয়া ৮৫ মেগাওয়াট’ ও ‘আশুগঞ্জ ৯৫ মেগাওয়াট’-এর চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। মেয়াদ বাড়ানো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি (ফেঞ্চুগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট) পরিচালনা করছে ‘এনার্জি প্রিমা লিমিটেড’ এবং অন্য তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করছে ‘মেসার্স এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট লিমিটেড’।
সচিবালয়ে বুধবার ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে গ্যাসচালিত ভাড়াভিত্তিক এ চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে মোট ১২টি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভাড়াভিত্তিক চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি প্রস্তাব এবং পল্লী বিদ্যুতায়নের আওতায় কন্ডাক্টর, এসিএসআর, বেয়ার ক্রয়, এসিএসআর গ্রস বিক কন্ডাক্টর ক্রয়, ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার ক্রয় ও এসপিসি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্রয় সংক্রান্ত পৃথক ছয়টি প্রস্তাব রয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বর্ধিত মেয়াদের ট্যারিফও নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্যারিফ মূল্য আগের চেয়ে কমেছে। চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রেরই বর্ধিত মেয়াদের প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ট্যারিফ হচ্ছে ৩ টাকা ২৬ পয়সা। এর মধ্যে ‘ঘোড়াশাল ১৪৫ মেগাওয়াট’-এর আগের ট্যারিফ ছিল ৪ টাকা ৭৫ পয়সা, ‘ফেঞ্চুগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট’-এর ছিল ৪ টাকা ৬৫ পয়সা, ‘বিবাড়িয়া ৮৫ মেগাওয়াট’ ও ‘আশুগঞ্জ ৯৫ মেগাওয়াট’-এর ছিল ৪ টাকা ৮০ পয়সা।
পল্লী বিদ্যুতায়নের আওতাধীন প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ‘পল্লী বিদ্যুৎতায়ন সম্প্রসারণ ঢাকা বিভাগীয় কার্যক্রম-২’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর ডিডিপি-২-জি-৯-এর আওতায় ৭ হাজার ৬৫ কিলোমিটার কন্ডাক্টর, এসিএসআর, বেয়ার সরবরাহের কাজটি পেয়েছে বিআরবি ক্যাবলস লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ৫০ কোটি ৫১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
একই প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর ডিডিপি-২-জি-১২-এর আওতায় ৩ হাজার ৯২০টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার ক্রয় করা হবে। এটি সরবরাহ করবে ‘টিএস ট্রান্সফরমার লিমিটেড’। এতে ব্যয় হবে ৩১ কোটি ৬৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।
‘পল্লী বিদ্যুৎতায়ন সম্প্রসারণ রাজশাহী-রংপুর বিভাগীয় কার্যক্রম-২’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর আরআরডিপি-২-জি-১২-এর আওতায় ৩ হাজার ৪৬০টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার সরবরাহের কাজটি পেয়েছে ‘কনফিডেন্স ইলেকট্রিক লিমিটেড’। এতে ব্যয় হবে ২৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীন পিডিএসডিপি, চট্টগ্রাম জোন প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৩৭০ কিলোমিটার এসিএসআর গ্রস বিক কন্ডাক্টর ক্রয় করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, ২৭৪ কিলোমিটার করে ৫টি লটে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান এগুলো সরবরাহ করবে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ‘এসকিউ ওয়্যার লিমিটেড’ (১০ কোটি ৭ লাখ টাকা), ‘এসবিএস ক্যাবলস লিমিটেড দুটি লট (প্রতিটি ১০ কোটি ৬ লাখ টাকা), ‘বিআরবি ক্যাবলস ইন্ডাস্ট্রিজ’ (১০ কোটি ৫ লাখ টাকা) ও ‘বিএ্যান্ডটি ক্যাবলস লিমিটেড’ (১০ কোটি ৬ লাখ টাকা)।
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ‘পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষমতাবর্ধন প্রকল্প’র প্যাকেজ নম্বর ইউআরইডিএস-জি-০২-এর আওতায় ১৪ হাজার ৭০০ কিলোমিটার কন্ডাক্টর, এসিএসআর ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৬৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। দুটি লটে (৮ হাজার ২০০ কিলোমিটার এবং ৬ হাজার ৫০০ কিলোমিটার) এগুলো সরবরাহ করবে ‘বিআরবি ক্যাবলস ইন্ডাস্ট্রিজ’।
একই প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর ইউআরইডিএস-জি-০৪-এর আওতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জন্য ৬৬ হাজার ৮০০টি এসপিসি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্রয় করা হবে। এতে ব্যয় হবে ২৪১ কোটি টাকা। ৩৩ হাজার ৪০০টি করে দুটি লটে এ সব খুঁটি সরবরাহ করবে যৌথভাবে কন্টেক-দাদা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (১২০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা) এবং ক্যাসেল-ইলেক্ট্রপ্যাক (১২০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা)।
অতিরিক্ত সচিব জানান, অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে বৈঠকে চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি অবকাঠামো ও নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ (তৃতীয় ধাপ) প্রকল্পের আওতায় সরকার-টু-সরকার পর্যায়ে চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’-এর কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পণ্য, ভৌত কাজ ও সেবা ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ জন্য চীনা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে ১ হাজার ৩১৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২’ (ভ্যাট অনলাইন) বাস্তবায়নে ‘কমার্শিয়াল-অব-দ্য-শেলফ সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, নেটওয়ার্কিং ও ম্যানেজড সার্ভিস’ ক্রয়ে ব্যয় হবে ২০৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এ কাজটি পেয়েছে ভিয়েতনামভিত্তিক কোম্পানি ‘এফবিটি ইনফরমেশন সিস্টেম লিমিটেড’।
এ ছাড়া ‘উত্তরা আদর্শ আবাসিক শহর (তৃতীয় পর্ব)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৮ নম্বর ব্রিজ এবং তৎসংলগ্ন এ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণকাজের ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যৌথভাবে এ কাজটি পেয়েছে ‘এসএফএল-উদয়ন লিমিটেড’। এতে ব্যয় হবে ২৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। 
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top