শিশির কণার দু’জনা

S M Ashraful Azom
রিয়াজ ও তিশার অভিনয় গুণ দেখে সবাই মুগ্ধ হন। এবার তারা জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করলেন ঈদের এক খণ্ডের নাটক ‘শিশির কণা’-তে। এই নাটকে দর্শকরা রিয়াজ ও তিশাকে একটু আলাদাভাবে আবিষ্কার করবেন। মো. তাবারক হোসেন ভূঁঞার রচনায় নাটকটি পরিচালনা করেছেন আবু হায়াত মাহমুদ। নাটকের গল্প ও তাদের অনুভূতির কথা জানাচ্ছেন খালেদ আহমেদ
 
তরুণ ঔপন্যাসিক রাইয়ানের লেখা সর্বশেষ উপন্যাস ‘শিশির কণা’ তার আগের সব লেখার চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু এই ঔপন্যাসিকের মতে এটা তার আর দশটা লেখা থেকে খুব ব্যতিক্রম কিছুই না, শুধু পার্থক্য হলো এই গল্পটা একটা জায়গা থেকে চুরি করা আর তাই হয়তো মানুষ বেশি পড়ছে নিজেদের খুঁজে পাচ্ছে বলে। শিশির কণা নিয়ে একটা টিভি ইন্টারভিউতে এমনটাই বলছিলেন এই তরুণ লেখক। রাইয়ানের লেখক হওয়ার পেছনে অন্যতম একটা অবদান রেখেছে আরেক তরুণ ঔপন্যাসিক নুসরাত সাকী। মূলত নুসরাতের হাত ধরেই সাহিত্যের বিশাল জগতে রাইয়ানের প্রবেশ, প্রতিষ্ঠা ও বিশাল জনপ্রিয়তা লাভ। তবে রাইয়ানের মেধাও ছিল যথেষ্ট কিন্তু সেটা আলোর মুখ দেখছিল না শুধু তার অখ্যাতির কারণে। আর এই কারণেই তার একের পর এক লেখা প্রকাশকদের টেবিলের ড্রয়ার থেকে ডাস্টবিনে চলে যেত, প্রেসের কালির আঁচড় আর পড়ত না, ঠিক যেমনটা সচরাচর হয় আরও দশজন প্রতিভাবান তরুণ লেখকদের বেলাতেও। শুধু ব্যতিক্রম বলতে দেরিতে হলেও নুসরাতের মতো একজন জনপ্রিয় লেখিকা তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। শুধু নুসরাতের একটা অনুরোধেই প্রকাশকরা রাইয়ানের লেখাগুলো পড়তে শুরু করে এবং যারপনারই মুগ্ধ হয়। এরপর আর রাইয়ানকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর শুধুই সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। প্রতিটা সফল মানুষই জীবনে কোনো না কোনোভাবে আরেকজন মানুষকে অবলম্বন হিসেবে পেয়েছে সেই সফলতার পথে হাঁটতে। আর দেরিতে হলেও রাইয়ান তার ব্যতিক্রম নয় কিন্তু এই দেরিটুকুই রাইয়ানের জীবনে এক বিরাট কালো দাগের আঁচড় দিয়ে যায়। তার জীবনটকে ওলট-পালট করে দেয় একেবারে। রাইয়ানের জীবন সংগ্রামের সেই কঠিন মুহূর্তে বৃষ্টির সাথে বিচ্ছেদ হয় তার। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রেম এরপর বিয়ে। এই পুরো সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিতে রাইয়ানের চেয়ে বৃষ্টির ভূমিকাই ছিল অনেক বেশি। উপন্যাসের চরিত্রগুলো শুধু তার কলমের ডগাতেই ছিল ব্যক্তিজীবনে তার বিন্দুমাত্র প্রতিফলন সে ঘটাতে পারেনি। বৃষ্টির প্রতি অতিমাত্রায় উদাসীনতা, জীবনের প্রতি নিরাসক্ততা, প্রয়োজনীয় মুহূর্তগুলোকে ভাবাবেগহীন যুক্তির নির্মম প্রহারে ক্ষতবিক্ষত করা এসবকিছু মেনে নিয়েও বৃষ্টি চেষ্টা করেছিল তাকে সঙ্গ দিতে, তার লেখালেখিতে সাহায্য করতে। লেখা ছাপা হচ্ছিল না বলে রাইয়ানকে কখনো ভেঙে পড়তে দেয়নি বরং উত্সাহ দিয়ে গেছে। বিয়ের পর সংসারের ভার যাতে রাইয়ানের লেখালেখিতে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্য নিজেই একটা চাকরি জোগাড় করে নেয়। পুরো সংসারের ভার একার কাঁধে তুলে নেয় শুধু এই সান্ত্বনায় যে রাইয়ান একদিন প্রতিষ্ঠিত হলে আর কোনো কষ্ট থাকবে না। কিন্তু একটা সময় বৃষ্টিও হার মেনে যায় যখন তার চোখের সামনে অফিসের অন্য মানুষদেরক তাদের প্রিয়জনদের কাছ থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা আর গুরুত্ব পেতে দেখে তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। এরপরের গল্প তো বলাই হয়েছে নুসরাতকে কেন্দ্র করে। এত জনপ্রিয়তার ভিড়েও বৃষ্টিকে কিন্তু ভুলতে পারেনি রাইয়ান। একটা টিভি ইন্টারভিউতে কোনো কিছু চিন্তা না করেই অকপটে নুসরাতের সামনেই স্বীকার করে সেটা আর এভাবে মিডিয়ার সবার সামনে বলাতে নুসরাত নিজেও খুব বিব্রত বোধ করে সেদিন, এরপরই ঘটনা এক অন্য অপ্রত্যাশিত বাঁকে মোড় নেয়—এমনি ভিন্ন ধারার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে এক খণ্ডের নাটক ‘শিশির কণা’। মো. তাবারক হোসেন ভূঁঞার রচনায় নাটকটি পরিচালনা করেছেন আবু হায়াত মাহমুদ। ইনভেনশনের ব্যানারে নির্মিত এই নাটকে আরও অভিনয় করেছেন শবনম ফারিয়া, রামিজ রাজু, রাখি চৌধুরী প্রমুখ। নাটকে অভিনয় প্রসঙ্গে রিয়াজ বলেন, ‘আমি প্রথমত গল্প ভালো না হলে কাজ করি না, আর সেই অর্থে এটা অবশ্যই ভালো একটা গল্প। তার চেয়ে বড় যে বিষয়টা আমার মনে হয়েছে যে এখনকার নাটকের বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অনেক ডিটেইল কাজ হয়েছে এখানে। অনেক গভীর রাত পর্যন্ত আমাদের কাজ করতে হয়েছে। পুরো টিম তাদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টাই করেছে। আমার দিক থেকেও এর কমতি ছিল না।’ এবার মুখ খুললেন তিশা। তিনি বলেন, ‘বলব না যে গল্পটা খুব আলাদা কিছু তবে খুব বেশি জীবনমুখী, যেখানে আমরা আমাদেরকেই আসলে দেখতে পাব আর এটাই এই নাটকের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব। আমরা পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, লক্ষ্মীবাজার, সদরঘাট, ভিক্টোরিয়া পার্ক, ওয়ারি থেকে শুরু করে পান্থপথ, দিয়াবাড়ি, উত্তরা হয়ে হাতিরঝিল পর্যন্ত ছুটে বেড়িয়েছি এই নাটকের শুটিংয়ের প্রয়োজনে। সব মিলিয়ে যেমন ধকল গেছে, তেমনি উপভোগ করেছি কাজ করে। আর দর্শক যখন কাজটা উপভোগ করবে তখনই আমাদের সবার সব পরিশ্রম সার্থক হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস দর্শক অবশ্যই আশাহত হবেন না।’ পরিচালক বলেন, ‘এই নাটকের গল্পটার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এর বিস্তৃত প্রেক্ষাপট, যা ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হয়ে আমাদের এটাই জানান দেবে যে আমাদের জীবনটাও পরিবর্তনশীল। আর এই পরিবর্তনের সাথে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। শুধু যুক্তি কিংবা আবেগ দিয়ে জীবন চলবে না, লাগবে এই দুইয়ের সমন্বয়।’ ‘শিশির কণা’ নাটকটি আসছে ঈদের তৃতীয় দিন সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে এনটিভিতে প্রচার হবে।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top