দুই দেশের মানচিত্রের নকশায় আসছে সামান্য পরিবর্তন স্থল-সীমান্ত বিরোধের অবসান

S M Ashraful Azom
বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত চুক্তি চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়িত হলে দুই দেশের মানচিত্রের নকশায় সামান্য পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের চার রাজ্য- আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের সীমানা রেখায় এই পরিবর্তন আনা হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট জেলার সীমারেখায় পরিবর্তন আসছে। দুই দেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বিশেষজ্ঞ কমিটি ‘জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপ’-এর বৈঠকে নতুন মানচিত্রের এই নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। এখন দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়, অপদখলীয় ভূমি হস্তান্তর এবং প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটারব্যাপী অচিহ্নিত সীমানা চিহ্নিত করে ওই মানচিত্র অনুযায়ী খুঁটি (পিলার) বসিয়ে দুই দেশের সীমান্ত চিহ্নিত করা হবে।
 
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার স্থলসীমান্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধানের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে করা রেডক্লিফ কমিশনের চিহ্নিত সীমান্ত আর থাকছে না। সে অনুযায়ী আগামী ১ আগস্ট থেকে দুই দেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহলও থাকছে না। দুই দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ে চূড়ান্ত হওয়া এই মানচিত্র উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ জুলাই মধ্যরাতেই বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হবে।
 
জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে একটি যৌথ কর্মপন্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। এই কর্মপন্থা অনুযায়ী দুই দেশ ছিটমহলের বাসিন্দাদের নাগরিকত্বের গেজেট প্রকাশ করবে। আর আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব ছিটমহলের ভূমির খতিয়ান তৈরি করা হবে। এছাড়া বৈঠকে মানচিত্রের চূড়ান্ত নকশা অনুমোদনের আগে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১ হাজার ১১৪টি ‘স্ট্রিপ ম্যাপ’ বিনিময় ও সই হয়। ২০১১ সালে ছিটমহলে সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ জরিপ হয়। সে অনুযায়ী বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর এবং জনসংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৮৩ জন। আর ভারতে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের আয়তন ৭ হাজার ১১০ দশমিক শূন্য ২ একর এবং লোকসংখ্যা ১৪ হাজার ৯০ জন পাওয়া গিয়েছিল।
 
স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহল বিনিময়, সেখানকার অধিবাসীদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের বিষয়ে গত প্রায় এক মাস ধরে যৌথ জরিপ পরিচালিত হয়েছে। এতে ৯৭৯ জন বাংলাদেশে ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দা ভারতের নাগরিকত্ব বেছে নিয়েছেন।
 
ছিটমহলের নাগরিকদের সাময়িক চলাচলের জন্য তিনটি নতুন পয়েন্ট চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ছিটমহল বিনিময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানকার বাসিন্দারা হলদিবাড়ী, বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা পয়েন্ট দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন।
 
তবে অপদখলীয় ভূমি ও অচিহ্নিত এলাকার ৩৫টি স্ট্রিপ ম্যাপ এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত করেনি দুই দেশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা সেক্টরে মোট ২৫টি অপদখলীয় ভূ-খণ্ডকে ঘিরে। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের দখলে সাতটি এবং ভারতের দখলে রয়েছে ১৮টি। পশ্চিমবঙ্গের ৯টি, ত্রিপুরার তিনটি, মেঘালয়ের ১০টি এবং আসামের একটি অপদখলীয় জমির যৌথ জরিপের কাজ আগেই সম্পন্ন হয়েছে। সে অনুযায়ী ভারত বাংলাদেশকে দুই হাজার ২৬৭ একর জমি হস্তান্তর করবে এবং বাংলাদেশ ভারতকে দেবে দুই হাজার ৭৭৭ একর জমি।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top