ছবিটির দ্বিতীয়
সপ্তাহ চলছে। তবুও আনন্দ সিনেমা হলে সাধারণ দর্শকদের ভিড় উপচেপড়া। লাইন ধরে
হলে ঢোকার দৃশ্য অনেকদিনের অচেনা। কারণ টিভি চ্যানেলের সিনেমা রিভিউ দেখে
এখন আর বোঝা যায় না দর্শক প্রতিক্রিয়া! কারণ হল থেকে বেরুনো ওই যে ছেলে বা
মেয়েটি ছবিটি নিয়ে ভালো বলবে, তার বাইটটুকুই অনএয়ার হয়। বাকিটা খুব একটা
দেখানো হয় না। কারণ আজ পর্যন্ত সিনেমা রিপোর্ট প্রচারের অনুষ্ঠানগুলোতে
কোনো মিশ্র মন্তব্য প্রচার হতে দেখলাম না।
বি.দ্র. ঈদের বাকি ছবিগুলোর আলোচনাও ধারাবাহিকভাবে খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
ছবির
নাম ‘লাভ ম্যারেজ’। কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম বেশ কজনকে। এর ভেতরে একজনকে
পাওয়া গেল দ্বিতীয়বারের মতো এই ছবি দেখতে এসেছেন। আরেকজন বললেন,
শাকিব-মিশা একসাথে আছে এমন ছবি সে কখনো মিস করেনি।
এখনকার
ফেসবুক আর অনলাইন নিউজ পোর্টালের মনগড়া ব্যাখ্যা আর কোন ছবি কত টাকা
কালেকশন করল এই হিসাবের ঝড়ে ছবির ব্যবসা কোনটা কতটা করল, তা নিয়ে আমি নিজেও
বিভ্রান্তিতে ভুগেছি।
বুকিং এজেন্টদের হিসেব মতে এবারের ঈদেও সর্বাধিক হল ও দর্শকসংখ্যায় শাকিব-অপু জুটির ছবিটিই সবদিক দিয়ে এগিয়ে।
যাই
হোক কমার্শিয়াল ছবির ক্ষেত্রে আমাদের ইন্টেলেকচুয়াল ঘরানার একটি কমন
সন্দেহ থাকে। ছবিটি কোনো তামিল, তেলেগু ছবি থেকে নকল করা হলো কি না? তবে এই
যাত্রায় শাহীন সুমন পরিচালিত এই ছবিটি অন্তত হুবহু নকলের অভিযোগ থেকে
রেহাই পাবে। ছবিটির গল্প বলতে দুই প্রেমিক-প্রেমিকের পাগলামি। এছাড়া আর
কিছু নেই। তবে পরিচ্ছন্ন ঈদ বিনোদনের জন্য সব কটি অনুষঙ্গই রয়েছে।
বিশেষ
করে শাকিব খান এন্ট্রির পর থেকে অনবরত খাঁটি ঢাকাইয়া ভাষায় যেভাবে অনবদ্য
অভিনয় করে চললেন, তাতে তার অভিনয়ের প্রশংসা করতেই হয়। মাঝে মাঝে সাদেক
বাচ্চু-শিরিন বকুল বা মিজু আহমেদের ঘর সংসারের কিছু ডায়লগ মনে হয়েছে অতিকথন
বা তথাকথিত সিনেম্যাটিক, বাকি প্রায় সবকিছু ছিল নির্জলা, ঝরঝরা সংলাপ।
বিশেষ করে হলে গিয়ে সাধারণ দর্শকের তালি গোনাটা আমার অভ্যেস। কারণ অন্ধকার
ঘরে এই গাঁটের পয়সা খরচ করে বসে যখন দর্শকেরা বারকয়েক আপন আনন্দেই তালি
দিয়ে ওঠে তখন বুঝতেই হয় ছবিটির অন্তঃসার মোটেই শূন্য নয়।
প্রশংসা
করার মতো ছবিটির বড় দিক হলো ছবির গান। বিশেষ করে আসিফের গাওয়া টাইটেল গান ও
এর চিত্রায়ণকে ফুল অব এন্টারটেইনমেন্ট বলা যায়। এছাড়া মিষ্টি রোমান্টিক
কণ্ঠে হূদয় খানের গানের চিত্রায়ণ কিছু সেকেলে গ্রাফিক্স বাদ দিলে দারুণ।
এবার আসা যাক অপু বিশ্বাসের দিকে। নীল রঙা একগাছি জামা, আর পুরো ছবিতে গাঢ়
লাল লিপস্টিক পরেই স্যাড, হ্যাপি, অ্যাকশন—সবরকম ডায়লগ আওড়িয়ে গেলেন।
ড্রেসের ব্যাপারে অপু ও সংশ্লিষ্ট টিমের অন্তত সচেতন হওয়া জরুরি ছিল। আর এই
লাল লিপস্টিকের উপকরণ কি কমার্সের তাগিদে কি না তা বোঝা মুশকিল। তবে ছবি
পাড়ায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় অপু বিশ্বাস পাকা অভিনেত্রী। সেটা সংলাপবিহীন নানা
এক্সপ্রেশনেই বোঝা যায়।
আর
ঈদের ছবি বলেই কোনো হালকা গোছের শিল্পীকে কাস্ট করে কোনো ঝুঁকিতে পড়তে
চাননি পরিচালক। সেই অর্থে একাধিক শক্তিমান অভিনেতা এক ছবিতে পেয়ে দর্শকেরাও
দারুণ উপভোগ করেছেন। আহমেদ শরীফ, মিজু আহমেদ, সাদেক বাচ্চু আর হাল আমলের
ক্রেজ ভিলেন মিশা সওদাগরকে এক ফ্রেমে পাওয়া দুর্লভ বৈকি। সেই ভারীক্কিটা
পর্দাতেও স্পষ্ট দেখা মিলল। যদিও দারুণ মেধাবী অভিনেতা মিশা সওদাগর তার
সাবলীল অভিনয়ের সাথে ওই একই রকম মুখভেংচিটা কিছু কমালেই বরং তা আমাদের
চোখের আরাম দেবে। আশা করি মিশা সওদাগর তার অযথা মুখভেংচিটা পরবর্তী ছবিতে
কিছুটা হলেও কমাবেন। এছাড়া ছবির একটি সিকোয়েন্সে শাকিব, অপু ও মিশা একটি
সিনেমা দেখতে যাওয়ার দৃশ্যে তরুণ নির্মাতা নঈম ইমতিয়াজ নিয়ামুলের ‘এক কাপ
চা’ ছবিটির বেশ বড়োসড়ো প্রমোশন করেছেন। সেটা পরিচালক শাহীন-সুমন যার
সূত্রেই করে থাকুক না কেন, এক ছবির ভেতরে অন্য ছবির প্রমোশনটা দারুণ
লেগেছে। এছাড়া ছবিতে একটি টেলিকম কোম্পানির ক্যাম্পেইনও রয়েছে। সেটিও
প্রফেশনালি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সেই অর্থমূল্য আদায় করতে পারলে বাংলা ছবির
জন্য দারুণ একটি ঘটনা। পাশাপাশি অ্যাকশন দৃশ্যে এই ডিজিটাল সময়ে এসে আরও
একটু গ্রাফিক্যাল উন্নতি প্রত্যাশা করছি, কারণ এই অ্যানিমেশন ফাইটিংয়ের
যুগে ছবির বাজেট ফাইট দৃশ্যে আরও খানিকটা বাড়ালেই বরং তার আরও উত্কর্ষ
বাড়বে। ছবির গল্পে অনেকদিন পর গরিব-বড়লোকের সেই চিরায়ত প্রেমের কাহিনী নেই।
তবে বড় ব্যবসায়ী হিসেবে শাকিবের হেলিকপ্টার যোগ ঠিক আছে, কিন্তু মিজু
আহমেদ ও মিশা সওদাগরদের অন্তত চলাফেরার জিপ বা গাড়ির চৌকস বহর ও দারুণ
চেম্বার দেখালে ভালো হতো। নায়ক-নায়িকার বন্ধু-বান্ধবরা কিছু কিছু জায়গায়
হাসানোর চেষ্টা করেছেন বৈকি, তবে তা বৃথা আস্ফাালন। এর বাইরে ‘লাভ ম্যারেজ’
তথাকথিত পণ্ডিত ছবি বিশেষজ্ঞদের জন্য একটি অন্যরকম উদাহরণ দিয়ে বলার মতো
ছবি, তাদের চোখে আঙুল দিয়ে বলার মতো ছবি, ব্যবসা আর এন্টারটেইনমেন্টকে
মাথায় রাখলে সাধারণ দর্শকদের উপযোগী সাবলীল গল্প বলেও দর্শক ধরে রাখা
যায়—অযথা ভাষা বিকৃতি বা যৌনতার সুড়সুড়ির প্রয়োজন হয় না।