ঢাবির গৌরব ও ঐতিহ্যের ৯৪ বছর

S M Ashraful Azom
আষাঢ়। মেঘ ও সূর্য মেতে উঠেছিল লুকোচুরি খেলায়। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে এই বুঝি বৃষ্টি নামবে অঝড় ধারায়। এরই মধ্যে ঢাবি ক্যাম্পাস সেজেছে বাহারি রঙের বাতি, বেলুন ও ব্যানারে। বিভাগ, অনুষদ আর ইনস্টিটিউটে আয়োজনের কমতি ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডরগুলো সাজানো হয়েছে বেলুন, ফেস্টুন আর আলপনায়। আর টিএসসিসহ সকল প্রান্তর ছিল নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত। দিনটি ছিল পহেলা জুলাই, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য, উচ্চশিক্ষা ও  টেকসই উন্নয়ন।পহেলা জুলাই সকালে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। এ সময় প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন মল চত্বরে জমায়েত হয়ে, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর ছাত্র শিক্ষকদের একটি শোভাযাত্রা, টিএসসিতে এসে মিলিত হয়। এখন টিএসসি মিলনায়তনে চলছে আলোচনা সভা। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ. আ. ম. স. আরেফিন সিদ্দিক, শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান। এবারের শোভাযাত্রায় উৎসাহ উদ্দিপনার কমতি ছিল না। ঢাক-ঢোলের সঙ্গে চলে নাচ। নাচের চেয়ে যে বিষয়টা বেশি চোখে পড়ে তা হলো লাফ ঝাপ। মুখে রং মেখে দিয়েছিল নানা রঙের সাজ। ১৯২১ সালের এই দিনে মাত্র ৩ টি অনুষদের অধীনে ১২টি বিভাগে ১১০৫ জন শিক্ষার্থী এবং ৩টি আবাসিক হল নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। কালের বিবর্তনে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ প্রতিষ্ঠার ৯৪ বছর পূর্ণ করছে। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। এবারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে তিন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। সকাল থেকেই বিভিন্ন হল থেকে রং-বেরঙের বেলুন, ফেস্টুন ও ব্যানার এবং ঢাকঢোল পিটিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শোভাযাত্রা নিয়ে প্রশাসনিক ভবন চত্বরে জড়ো হন। শোভাযাত্রার আগে সকাল ১০টার দিকে মল চত্বরে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোর পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে উদ্বোধনী সংগীত গেয়ে শুরু হয় সব কর্মসূচি। উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  স্লোগান শিক্ষাই আলো। এই আলোতে শুধু দেশ নয়, বিশ্বের সব স্থান আলোকিত হবে। আমরা এই শিক্ষার মাধ্যমেই এগিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই উন্নয়ন টেকসই হোক। আর উন্নয়ন টেকসই হওয়ার জন্য প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা। বেলা ১১টায় টিএসসিতে উপাচার্যের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক সহিদ আকতার হুসাইন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীন, শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনের নেতারা।দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও আবাসিক হলগুলোর আলাদা আয়োজন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে পুরাতন ও দুর্লভ বিভিন্ন পা-ুলিপির প্রদর্শন চলে। কার্জন হলের বারান্দায় বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ প্রদর্শন করে বিভাগের উদ্ভাবিত চিকিৎসা প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ও গবেষণাকর্ম। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ আয়োজন করে ‘ইলেকট্রনিকস প্রজেক্ট এক্সিবিশন’। সেখানে ছোট রোবট কার, স্বয়ংক্রিয় আগুন নির্বাপক প্রযুক্তি, মুঠোফোনে গাড়িচালকদের ঘুমের মাত্রা নির্ণয়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানির পাম্প নিয়ন্ত্রণ, জেব্রা ক্রসিংয়ে পথচারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি প্রকল্পের প্রদর্শনী হয়।চারুকলায় হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। বিকেলে সেসব ছবি গ্যালারিতে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। নাটমলে স্বদেশি নকশা নাটক মঞ্চস্থ করে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ। বরাবরের মতো এবারও বসেছিল নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীর আড্ডা। নেচে গেয়ে তারা মাতিয়ে তুলেছিল পুরো ক্যাম্পাস। প্রবীণ শিক্ষার্থীরা যেন ফিরে গিয়েছিলেন  সেই সোনালী অতীতে। কেউ কেউ ঘুরেও দেখেছেন স্মৃতিবিজরিত হলগুলোতে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১২টি বিভাগ থেকে এখন বিভাগ চালু রয়েছে ৭২টি। রয়েছে ১১টি ইনস্টিটিউট, ৪৪টি গবেষণা ব্যুরো ও কেন্দ্র। যাত্রাকালে আবাসিক হল তিনটি থাকলেও এখন এর সংখ্যা ১৯। নির্মাণাধীন হল একটি ও  হোস্টেল তিনটি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সম্পর্কে হাসানুজ্জামান তারেক বলেন, একটি জাতির উদ্ভব ও বিকাশ; স্বাধিকার ও স্বাধীনতায় অনন্য ভূমিকা পালনকারী পৃথিবীর একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আজ তার শুভ জন্মদিন। অসাম্প্রদায়িক  চেতনায়, উচ্চশিক্ষায় তোমার অবস্থান হোক বিশ্বের অন্যতম  শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে। আমি গর্বিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হতে পেরে। স্যালুট তোমায় আজীবন হে-প্রাচ্যের অক্সফোর্ড!সাবিহা সুলতানা বলেন, আমি গর্বিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য হতে পেরে। ঢাবি শিক্ষার্থী জয়দেব নন্দি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাষ্টকে জন্ম দিয়েছে পৃথিবীতে এমন নজির নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা এক হাজার ৮০৯, যা শুরুতে ছিল মাত্র ৬০। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ৮২৭। এছাড়া সান্ধ্য বিভিন্ন কোর্সে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ৩০৮। বিশ্ববিদ্যালয়টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত পিএইচডি ডিগ্রি পেয়েছেন এক হাজার ৯৯ জন।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top