প্রথম দু-একদিন
দেখেই মনে হচ্ছিল ঈদের অনুষ্ঠানে যে পচন ধরেছে তা নিরাময় করা দিন দিন কঠিন
থেকে কঠিনতর হচ্ছে। প্রতিবারের মত একঘেঁয়ে গত্বাঁধা ঈদ অনুষ্ঠানের ভীড়ে
এবারও যেন প্রাণ সঞ্চার করেছে সেই ‘ইত্যাদি’।
বি:দ্র:
পাঠকদের প্রতিক্রিয়া ও গুণী শিল্পীদের মতামতসহ আগামী ১ সপ্তাহ বিভিন্ন
বাছাইকৃত অনুষ্ঠানের রিভিউ প্রকাশ করবে বিনোদন প্রতিদিন।
বিশেষ
করে ঈদ অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের সময় অধিকাংশ নাট্য নির্মাতাকে যখন
তাদের কাস্টিং নিয়ে প্রশ্ন করা হতো, তাদের একটাই উত্তর ছিল, ‘ভাই কাস্টিং
তো বিভিন্ন এজেন্সী করে দেয়। আমি কাস্ট করলে জীবনেও এই শিল্পীকে নিতাম না।’
এই যখন অবস্থা-তখন একপশলা বৃষ্টির মতোই ইত্যাদি দর্শকদের সেই ভালোলাগার
অনুভূতিগুলো নাড়া দিয়ে গেছে এবারের ঈদেও। তবে অনুষ্ঠানের ক্যাটাগরি অনুযায়ী
আলাপ করলে বলতে হয় ইত্যাদি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের প্রাসঙ্গিতার ধারে কাছেও
নেই অন্যান্য অনুষ্ঠান। ইত্যাদির এই অগ্রযাত্রা আর চ্যানেলগুলোর
পশ্চাত্পদতা দেখে প্রশ্ন জাগে-হানিফ সংকেত পারলে চ্যানেলগুলো পারছে না কেন?
প্রতিটি চ্যানেলেই ঘন্টায় ঘন্টায় বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রমো চলছে। অভিনয়ে
দেশের বড় বড় তারকারা। সাক্ষাত্কারে দেশের জনপ্রিয় মুখ। কোথাও একজন, কোথাও
দু’জন কিন্তু ২/১টি ছাড়া কোন অনুষ্ঠানেই যেন প্রান নেই। সেই একই গত্বাঁধা
প্রশ্ন, নায়ক-নায়িকার উত্তর।
মনে
হয়েছে-ঈদ উপলক্ষে ৬ দিন বা ৭ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান করতে হবে সুতরাং
ধরো-মারো-কাটো। যে যেভাবে পারে পর্দা ভরাতে ব্যস্ত। কারণ আজকাল বিজ্ঞাপনও
হয়ে গেছে প্যাকেজ সিস্টেমে।
বরাবরের মত এবারও ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে...’গানটি দিয়ে শুরু হয়েছে ইত্যাদি।
তবে
ইত্যাদির আর্কাইভে প্রায় অর্ধশতাধিকবার বিভিন্ন আঙ্গিকে ঈদের এই মূলগান
চিত্রায়নের পর বোধকরি অন্য চ্যানেলগুলিও এবারে পাল্লা দিয়ে এই গানটির নতুন
চিত্রায়ন দেখানোয় ব্যস্ত হয়েছে। ভালো কিছু অনুকরণকে তবুও সাধুবাদ জানানোই
যায়!
সাবিনা
ইয়াসমিন আর তার কন্যা বাঁধনের গানের সঙ্গে মৌ ও তার কন্যা পুষ্পিতার নাচও
ছিল অত্যন্ত শিল্পরুচি সম্মত এবং দৃষ্টি নন্দন। তবে মায়ের প্রতিভার কাছে
আসতে হলে বাঁধন ও পুষ্পিতা দু’জনকেই আরো অনুশীলন করতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর
দাম্পত্য কলহ নিয়ে ছিল চমত্কার একটি পর্ব। যখন স্বামী-স্ত্রীতে কলহ হয়-তখন
মনে হয় কেহ কারে নাহি হারে সমানে সমান। সংসারে কার অবদান বেশি এই নিয়েই
শুরু হয় বিবাদ। পরে আতাউর রহমান এসে ঝগড়া থামালেন এই বলে, কারো চেয়ে কেউ
ছোট নয়-কেউ বড় নয় কারো। এমন একাধিক হাস্যরসের ভেতরেই সামাজিক অসঙ্গতিকে
সুক্ষ খোঁচা দিয়ে তুলে ধরাটা সত্যিই অনন্য ও অনবদ্য।
আজকাল
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসব নাচের সঙ্গে উদ্ভট পোশাকে কিছু টিভি অভিনেত্রী বা
মডেল তারকাকে অহেতুক লম্ফঝম্ফ করতে দেখা যায়-যা অশোভন, এমনকি কিছু কিছু
নৃত্যও অশালীন। এই সময়োপযোগী বিষয়টি দারুনভাবে দেখিয়েছে ঈদ ইত্যাদি।
অথচ
হানিফ সংকেত অত্যন্ত শিল্পসম্মত উপায়ে নৃত্যগীত অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের
বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি বিষয়গুলিকে তুলে ধরেছেন অত্যন্ত প্রশংসনীয়ভাবে।
একটি
অবুঝ প্রাণী ছাগলের অন্যের ক্ষেতে সবজী খাওয়াকে কেন্দ্র করে গ্রামের দুই
দল মানুষের মধ্যে কলহ বিবাদ এবং পরবর্তীতে গ্রামের মাস্টারের হস্তক্ষেপে
মারপিটের অবসান-অত্যন্ত নিপুনভাবে গ্রামীন জীবনের এই বিষয়টি ফুটে উঠেছে
বিদেশী পর্বে। প্রতি ঈদের এই বিদেশী পর্বের জন্য বোধকরি বাঙালী দর্শকেরা
এখন অপেক্ষা করে। এই অপেক্ষা ভালো কিছু দেখার আকাঙ্খার। তবে কিছু সেগমেন্টে
একই মুখ বারবার আনার বিষয়টি নির্মাতা ভাবতে পারেন। সবমিলিয়ে ঈদ ইত্যাদি
ছিল এক কথায় অনবদ্য, অনন্য।