প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে এখন আর অবহেলা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে আরো বেশি উজ্জ্বল করে তুলছে ক্রিকেট দলের সোনার ছেলেরা। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই আমাদের কেউ হারাতে পারবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বিশ্বসভায় আমরা মাথা উঁচু করে চলবো, মাথা নিচু করে নয়।
শনিবার গণভবনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়, কোচ ও ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদের সম্মানে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকাপে ভাল খেলায় এবং পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করায় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়, কোচ এবং ক্রিকেট বোর্ডের সংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদের হাতে ৮ কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা পুরস্কারের চেক তুলে দেন। এ সময় বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন ক্রিকেটারদের অটোগ্রাফ দেয়া একটি ব্যাট প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন।
ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের টাইগাররা সাবেক বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ানদের হোয়াইটওয়াশ করেছে। তাদের নাস্তানাবুদ করে দিয়েছে। বাংলাদেশকে আর অবহেলা করার সুযোগ নেই। সেটা টাইগাররা ক্রিকেট বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে। এখন যারাই বাংলাদেশ সফরে আসবে তাদের হিসেব করে খেলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল একদিন বিশ্বকাপ জিতবে। এখন আমরা তারই নমুনা দেখতে পাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আর কোনো দারিদ্র্য থাকবে না। বাংলাদেশ নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ আর নিম্নে থাকবে না। ঊর্ধ্বে থাকবে। ক্রিকেটারদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ছেলেদের আরও আন্তরিকতা নিয়ে খেলতে হবে, যাতে বাংলাদেশের মুখ আরও উজ্জ্বল হয়। তবে এ কথা বলে আমি খেলোয়াড়দের চাপে ফেলতে চাই না। খেলার মাঠে নিজেদের মধ্যে কোনো রকম চাপ রাখা যাবে না। আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। একটু খারাপ খেললেই পত্র-পত্রিকাগুলো লিখতে শুরু করে। আমি সবসময় এর প্রতিবাদ করে আসছি। খেলায় হার-জিত আছে। সবচেয়ে বড় কথা, খেলার মাঠে কতো ভালো নৈপুণ্য দেখানো যায়, কতোটা ভালো খেলা উপহার দেওয়া যায় সেটি বড় বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৪ বছরের সংগ্রাম ও যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করেছে, এটি মনে রাখতে হবে। তাহলে বাংলাদেশকে কেউ হারাতে পারবে না। আমাদের এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। বাংলাদেশ এই আত্মমর্যাদা নিয়ে চলবে। ক্রিকেট আমাদের যে মর্যাদা দিয়েছে, তার জন্য আমরা গর্বিত।
দেশে আরো উন্নত মানের স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আরও দু’টি উন্নত মানের স্টেডিয়াম নির্মাণ করবো। একটি হবে কক্সবাজারে, আরেকটি পদ্মার পাড়ে। পদ্মার পাড়ে একটি আধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স করব আমরা, সে মাস্টারপ্লান করতে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ এসবের বাস্তবায়ন করতে পারবো। আমরা আর আর্থিকভাবে দুর্বল নই। শুধু ক্রিকেটই নয়, বাংলাদেশের সব খেলাধুলাকে এগিয়ে নিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী ক্রিকেটারদের উত্সাহ দিয়ে বলেন, অধ্যবসায়, অনুশীলন আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামতে হবে। প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবা যাবে না, আবার ভয়ও পাওয়া যাবে না। নিজেদের মতো খেলতে হবে।
তিনি বলেন, আত্মমর্যাদা ও আত্মসম্মান নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদেরও প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রতিবন্ধী ক্রিকেটাররাও অনেক ভালো খেলছে। তারাও এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতার পর ক্রিকেটার, কোচ, স্টাফ, বিসিবির কর্মকর্তার কর্মকর্তাসহ সবার সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন। এরপর সবাই ইফতার মাহফিলে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুর্জা।
টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি দক্ষিণ অফ্রিকার সঙ্গে শুরু হওয়া টি-টুয়েন্টি, ওয়ানডে ও সিরিজে যেন বাংলাদেশ দল ভাল খেলতে পারে সেজন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় আমাদের অনুপ্রেরণা দেন, সাহায্য-সহযোগিতা করেন, এ জন্য আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। ধারাবাহিকভাবে আমরা যাতে ভাল খেলতে পারি সেজন্য সবার কাছে দোয়া চাই।