সেবা ডেস্ক: RAW-এর অফিস ডিজিএফআই-এ ছিল—এমন দাবিকে ‘পুরোপুরি মনগড়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাষ্ট্রবিরোধী’ বলে অভিহিত করলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ও প্রাক্তন কর্মকর্তারা। তদন্তে উঠে এল ভয়াবহ অপপ্রচারের চিত্র।
![]() |
RAW-এর অফিস ছিল ডিজিএফআই-এ?— ভিত্তিহীন ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা |
তবে এই দাবিকে সরাসরি “মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার” হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা, ডিজিএফআই-এর প্রাক্তন কর্মকর্তারা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র। তাদের মতে, এমন কোনো প্রমাণ বা সরকারি নথি নেই যা প্রমাণ করে যে RAW-এর কোনো অফিস ডিজিএফআই-এর অধীনস্থ কোনো স্থাপনায় ছিল।
বরং বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বহু বছর ধরেই বিদেশি গোয়েন্দা তৎপরতা প্রতিহত করতে এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থে তথ্যনিয়ন্ত্রণে সফলভাবে কাজ করেছে।
বাংলাদেশে দুটি প্রধান নিরাপত্তা সংস্থা— ডিজিএফআই (DGFI) এবং এনএসআই (NSI)— দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন, সাইবার হুমকি মোকাবিলা এবং কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে অতীতে এই সংস্থাগুলো যখন বিতর্কে জড়িয়েছে, তখন বিশেষজ্ঞরা মূলত রাজনৈতিক সরকারের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা বলেন, “নিরাপত্তা সংস্থাগুলো নিজেরা কোনো কাজ করে না। তাদের নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। রাজনৈতিক স্বার্থে যদি অপব্যবহার হয়, দায় তো সরকারেরই।”
RAW বা অন্যান্য বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতায় পুরোপুরি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে গোয়েন্দা তৎপরতা বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার ইতিহাস পুরনো। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এটাও সত্য—এই ধরনের তৎপরতা কখনোই রাষ্ট্রীয় অনুমোদন বা দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় পরিচালিত হয়নি। ডিজিএফআই বা এনএসআই’র ভিতরে RAW-এর অফিস থাকার দাবি সম্পূর্ণ কাল্পনিক, ভিত্তিহীন এবং বাস্তবতা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বরং সবসময় নিজেদের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে সচেষ্ট থেকেছে এবং একাধিকবার বিদেশি গুপ্তচর বা অনুপ্রবেশ চেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এসব সংস্থা প্রথাগতভাবেই নীরব ও পেশাদারভাবে কাজ করে, তারা নিজেদের সাফল্য প্রচারে আগ্রহী নয়।
এই প্রেক্ষাপটে যখন কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করে, তখন তা কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়—সমগ্র রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাঠামোর ওপর আঘাত হিসেবে বিবেচিত হয়। ভুল তথ্যের মোকাবিলায় সত্যকে তুলে ধরাই এখন সময়ের দাবি। বাস্তবতা হলো—বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভেতরে কোনো বিদেশি গোয়েন্দা দপ্তরের অফিস ছিল না, নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকার সম্ভাবনা নেই।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এই সংস্থাগুলোর ভূমিকা ও কাঠামোয় দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে ডিজিএফআই ও এনএসআই সম্পূর্ণ নতুন ও পেশাদার একটি ধারায় কাজ করছে। বিশেষজ্ঞ, পর্যবেক্ষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এই সংস্থাগুলোর বর্তমান কার্যক্রম আগের তুলনায় অনেক বেশি স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল এবং নিরপেক্ষ।
এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে, নতুন করে এমন অপপ্রচারের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ এবং গোয়েন্দা তথ্যসূত্র অনুযায়ী, এই ধরনের প্রচারের মূল লক্ষ্য রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা নষ্ট করা এবং জনগণের আস্থাকে দুর্বল করে দেওয়া।
এই ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণার পেছনে কয়েকটি উদ্দেশ্য স্পষ্ট: রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোবল ভাঙা, জনগণের আস্থা ধ্বংস করা, দেশের নিরাপত্তা দুর্বল করে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা সৃষ্টি করা, এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা। পাশাপাশি, এ ধরনের অপপ্রচারের মাধ্যমে কিছু দেশি-বিদেশি চক্র বিদেশি ‘সহায়তা’র প্রয়োজনীয়তা তৈরি করে নিজেদের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথ তৈরি করতে চায়।
এই প্রচারণা নিছক একটি গুজব নয়—এটি একটি সুপরিকল্পিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপতৎপরতা, যার মূল লক্ষ্য রাষ্ট্রকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেওয়া।
এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে নয়, বরং যেসব রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা গোষ্ঠী অতীতে এসব সংস্থাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে—তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। একইসঙ্গে যারা উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাঠামো যেন সবসময় নিরপেক্ষ ও পেশাদারভাবে পরিচালিত হয়—এমন একটি টেকসই কাঠামো গড়ে তোলাও এখন সময়ের দাবি।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।