বাংলাদেশের সঙ্গে
ছিটমহল বিনিময়ের পর সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে
ভারত। এ ব্যাপারে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির
চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি
লিখেছেন বলে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা গেছে। চিঠিতে তিনি
অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানোসহ জেএমবির মতো সন্ত্রাসী গ্রুপ যাতে ভারতে প্রবেশ
করতে না পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। ওই চিঠিতে প্রদীপ ভট্টাচার্য ভারতের
গোয়েন্দা সংস্থাসহ সেদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ এবং রাজ্য পুলিশকে এ
বিষয়ে নির্দেশনা দেয়ার সুপারিশ করে বলেছেন, ভারতের স্বার্থবিরোধী
গোষ্ঠীগুলো ছিটমহলগুলোকে যাতে ব্যবহার করতে না পারে সে লক্ষ্যে এখনই উদ্যোগ
নিতে হবে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও মনে করছে, বিনিময় করা ছিটমহলগুলোর
মধ্যে ভারতের স্বার্থবিরোধী গোষ্ঠী আস্তানা গাড়তে পারে।
বিএসএফের
এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোচবিহার এলাকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে
নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ছিটমহলবাসী বিনিময়ের সুযোগে কেউ যাতে অবৈধ অনুপ্রবেশ
না করতে পারে সে বিষয়টি খেয়াল রাখা হচ্ছে। পুলিশের আইজি (আইন-শৃঙ্খলা)
অনুজ শর্মা বলেছেন, ছিটমহলে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমরা
বদ্ধপরিকর। বিএসএফের পাশাপাশি সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পিটিআইয়ের
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছিটমহলগুলোতে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে
গোয়েন্দা সংস্থা, বিএসএফ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। অবাঞ্ছিত কেউ যাতে
ছিটমহলগুলোতে প্রবেশ করতে না পারে সে লক্ষ্যে কড়া নজরদারি করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে ভারতীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা ছিটমহলগুলোর বিস্তারিত তথ্য নেয়া
শুরু করেছে। সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে
বলেছেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মতো সীমান্তে নিরাপত্তার বিষয়টি বড় বিষয়।
ভারতের অভ্যন্তরে যেসব ছিটমহলে বাসিন্দারা আসতে শুরু করেছে সে সব জায়গায়
আমাদের নজরদারি বাড়িয়েছি। সেখানে আমাদের ক্যাম্প বসিয়েছি। আইন-শৃঙ্খলা
বাহিনীর টহলও জোরদার করা হয়েছে।
অপরদিকে
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক দিপ্তিমান
সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, ছিটবাসী বিনিময় সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোনো
বেসরকারি সংগঠনের কর্মকাণ্ড চালাতে দেয়া হবে না। তিনি এ বিষয়ে সরকারের কাছে
চিঠি লিখেছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ থেকে যেসব ছিটবাসী ভারতে
প্রবেশ করবে তাদের পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষারও পক্ষে। এজন্য
ছিটমহলগুলোতে মেডিক্যাল ক্যাম্পও বসানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য,
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে গত পহেলা আগস্ট মোট ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে প্রায় ছয় যুগের জটিল সীমান্ত সমস্যা সমাধানের পথে। বিনিময়
করা ছিটমহলের মধ্যে ১১১টি পেয়েছে বাংলাদেশ এবং ৫১টি পেয়েছে ভারত। ভারতের
পাওয়া সবগুলো ছিটমহল পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে।
কোচবিহারের
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি উলাজনাথন বলেছেন, জেলায় বিএসএফের সদস্য সংখ্যা
বাড়ানো হয়েছে। তারা সেখানে বেশ কিছুদিন অবস্থান করবেন। যে লোকগুলো ভারতের
হয়ে আসবে তাদের ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট খোঁজখবর নিচ্ছি। ছিটের অধিবাসীরা এলেও
আমাদের কার্যক্রম থেমে থাকবে না। কেউ যদি ভারতের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে
যুক্ত হয়ে পড়ে তা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।