এলোমেলো হয়ে পড়া দল পুনর্গঠন ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি আনার পাশাপাশি দলকে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করার দিকেও নজর দিচ্ছে বিএনপি। বিশেষ করে, ফেসবুক ও টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দলের রাজনীতি, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও নীতি-আদর্শকে বেশি করে প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গণ মাধ্যমেও বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ লেখা ও টেলিভিশনগুলোতে টকশোসহ বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানে দলের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর দিকেও জোর দেয়া হচ্ছে। এই বিষয়গুলোকে সমন্বয় করার লক্ষ্যে দলপন্থি বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে একটি ‘থিংক ট্যাংক গ্রুপ’ গঠনের বিষয়ে প্রাথমিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রবিবার রাতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে।
ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান সোমবার ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘বৈঠকে রাজনীতি ও দল পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার মধ্যে থিংক ট্যাংক গ্রুপ গঠন করা যায় কি-না, তা নিয়েও কথা হয়েছে। আমরা যারা বৈঠকে ছিলাম, প্রত্যেকেই এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছি।’
অন্য একাধিক সূত্র জানায়, রবিবার রাতের ওই বৈঠকে বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্যাহ ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক-কলামিস্ট মাহফুজ উল্যাহসহ বিএনপি ঘরানার কয়েকজন পেশাজীবী নেতা, বুদ্ধিজীবীও উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ব রাজনীতির আধুনিক ধ্যান-ধারণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দলকে যুগোপযোগী করে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে এ ব্যাপারে তারা খালেদা জিয়াকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শগুলোর মধ্যে ছিল- সরকারের দোষত্রুটির পাশাপাশি ইস্যুভিত্তিক প্রবন্ধ লিখে সেগুলো দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে প্রচার-প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া, বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ-সংরক্ষণ করে ডাটা তৈরি করা, টেলিভিশন টকশোসহ বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানে তথ্য-যুক্তিতর্কের মাধ্যমে দলের পক্ষে অবস্থান তুলে ধরার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আলোচক গড়ে তোলা, দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানসমৃদ্ধ করে ফেসবুক ও টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সক্রিয় করে তোলা এবং অর্থনীতি, বহিঃসম্পর্ক উন্নয়ন, কৃষি, নারী উন্নয়ন, গণতন্ত্র, বেকার সমস্যার সমাধানসহ ঘন ঘন ইস্যুভিত্তিক সভা-সেমিনার আয়োজন করা ইত্যাদি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ইত্তেফাককে জানান, তাদের এসব পরামর্শের জবাবে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে খালেদা জিয়াও বলেছেন- একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সক্ষম করে বিএনপিকে গড়ে তুলতে হবে।
রবিবারের এই বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমাদ ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘বিএনপির এই উপলব্ধি বা চিন্তা-ধারা খুবই ইতিবাচক। দলকে তথ্য-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ করে তুলতে থিংক ট্যাংক গ্রুপ থাকা ভালো। ’ বিএনপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির রাজনীতিতে দলীয় ঘরানার বুদ্ধিজীবী বা পেশাজীবী নেতাদের গুরুত্ব বেড়েছে। বিশেষ করে, এ বছরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের মতামতই প্রাধান্য পেয়েছে। বর্তমানে দলের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও খালেদা জিয়া দলপন্থি বুদ্ধিজীবীদের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রসঙ্গত, বিএনপির সভা-সেমিনারগুলোতে বর্তমানে সক্রিয় থাকা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্যাহ চৌধুরীও ‘থিংক ট্যাংক কমিটি’ গঠনের জন্য বিএনপিকে পরামর্শ দিয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া জেলে চলে গেলে দল চালাবে কে? দল কী থেমে যাবে? তাদের উচিত থিংক ট্যাংকদের নিয়ে একটি কমিটি করা।’ অধ্যাপক এমাজউদ্দিনকে এই কমিটির প্রধান করা যেতে পারে বলেও মত দেন তিনি।
বিএনপির রাজনীতিতে বুদ্ধিজীবীদের প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়টিকে দলের নেতা-কর্মীরা কেউ নেতিবাচকভাবে দেখতে পারে কি-না, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, ‘রাজনীতিতে বুদ্ধিজীবীদের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়া উচিত, এটিকে সবাই ইতিবাচক হিসেবেই নেবে।’