দক্ষিণ চীন সাগরে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। গত কয়েকদিনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা আরো অনেক বেড়ে গেছে। দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো রণতরীর পাল্টা হিসেবে এবার চীন সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন সুপারসনিক মিসাইল ওয়াইজে-১৮ মোতায়েন করেছে। এই অত্যাধুনিক মিসাইলকে বর্তমান সময়ের সর্বোচ্চ গতির নির্ভুল লক্ষ্যভেদি ক্ষেপণাস্ত্র মনে করা হয়ে থাকে। এর ফলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকরা। যদিও ক্ষমতাধর ওয়াশিংটন আর বেইজিংয়ের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত আছে। কিন্তু তার মাঝেই দু’দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে এখন চলছে হুঁশিয়ারি আর পাল্টা হুমকি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুদ্ধের দামামা বেজে গেছে দক্ষিণ চীন সাগরে। এই দামামাকে আরো এক ধাপ উসকে দিয়ে ওই অঞ্চলে সৃষ্ট চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওয়াশিংটনের পক্ষ নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় এশিয়া-ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে প্রভাব ফেলতে পারে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি রণতরী চীনের সমুদ্রসীমার ১২ নটিক্যাল মাইলের ভেতরে প্রবেশ করলে বেইজিং সরাসরি যুদ্ধের হুমকি দেয়। চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট ইয়াং ইউচুন বলেন, এটা চীনের জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে সরাসরি হুমকি। আমরা বিষয়টা সহজে নেবো না। চীনের সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ হলে আমরাও পাল্টা হামলা করব। তার এই বক্তব্য এবং পরবর্তীতে সুপার মিসাইল মোতায়েনের পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওয়াইজে-১৮ মিসাইল ২৯০ নটিক্যাল মাইল দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত আঘাত হানতে পারে। যখন সমুদ্রে ডুবে থাকা সাবমেরিন থেকে এই মিসাইল ছোড়া হয়, তখন এর গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় প্রায় ৯৬০ কিলোমিটার। অর্থাৎ শব্দের বেগের চেয়ে সামান্য কম। কিন্তু সেই সময় বিপক্ষের মিসাইল বিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্রের নাগালের বাইরে থাকে এটি। সমুদ্রপৃষ্ঠের কয়েক মিটার ওপর দিয়ে ছুটতে থাকা এই মিসাইল বিপক্ষের জাহাজের ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে পৌঁছেই হঠাৎ গতি বাড়িয়ে নেয়। তখন শব্দের গতিবেগের চেয়ে তিনগুণ বেগে ছুটতে থাকে ওয়াইজে-১৮। এই তীব্র বেগের কারণে বিপক্ষের রণতরীতে থাকা রাডার ঠিকমতো নির্ণয় করতে পারে না মিসাইলের অবস্থান। মিসাইল বিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েও সঠিক লক্ষ্যে আঘাত হানা সম্ভব হয় না। ফলে ওই মিসাইল থামানো যায় না। অর্থাৎ যে রণতরীকে লক্ষ্য করে ওয়াইজে-১৮ ছোড়া হয়, তার ধ্বংস প্রায় নিশ্চিত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওই অঞ্চলে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছে এবং আশা করছে ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত বেশ কিছু বড় চুক্তি সম্পন্ন হবে। এ কারণেই ওয়াশিংটনের আপত্তি সত্ত্বেও ইইউ চীন পরিচালিত এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে (এআইআইবি) যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী সপ্তাহে লুক্সেমবার্গে ২৮টি ইউরোপীয় দেশ এবং ২১টি এশিয়ান দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই সম্মেলনে মিলিত হবেন।খবরে বলা হয়, যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস লাসেনকে দক্ষিণ চীন সাগরে পাঠিয়ে শি জিনপিংয়ের ওপর চাপ বাড়িয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু প্রতিপক্ষ যেখানে চীন, সেখানে কি এত সহজে ওয়াকওভার পাওয়া সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রর পক্ষে? তাই সাবমেরিন থেকে অতর্কিতে হামলা চালানোর জন্য দক্ষিণ চীন সাগরে অত্যাধুনিক ওয়াইজে-১৮ মিসাইল মোতায়েন করেছে বেইজিং। এই মিসাইল হামলা রুখে দেয়ার ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের রণতরীতে রয়েছে। কিন্তু চীনের এই নতুন সুপারসনিক মিসাইল শেষ মুহূর্তে গতিবেগ এমন তীব্র করে নেয় যে, রাডারের পক্ষেও তার অবস্থান নির্ণয় প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী চীনের ১২ নটিক্যাল মাইল এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়ার পর একের পর এক চীনা সাবমেরিনে এ ভয়ঙ্কর মিসাইল তাদের সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে শুরু করায় যুদ্ধের আবহ আরো তীব্র হয়েছে। চীনের এই মিসাইল মোতায়েন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন এতই উদ্বিগ্ন যে, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসেও বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। এটি মোকাবেলার নতুন করে কৌশলও খুঁজতে শুরু করেছে পেন্টাগনও।মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর খবর পেয়েছে, চীনা নৌবাহিনীর কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল অবকাঠামো এখনো খুব উন্নত হয়নি। ফলে প্রাথমিকভাবে হামলা চালালেও পাল্টা আক্রমণে একবার চীনের কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল অবকাঠামোর ক্ষতি করে দিতে পারলেই আর সহজে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না চীন। ফলে সুপারসনিক মিসাইলকে কাজে লাগাতেও পারবে না তারা। চীনের সেই দুর্বলতার কথা মাথায় রেখেই এখন কৌশল সাজাচ্ছে পেন্টাগন। এদিকে দক্ষিণ চীন সাগরে সৃষ্ট চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওয়াশিংটনের পক্ষ নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় এশিয়া-ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে প্রভাব ফেলতে পারে। গত শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতার চর্চা করতেই পারে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সব দেশেরই সমুদ্রপথ ও আকাশসীমা ব্যবহারের অধিকার রয়েছে। এই বিতর্কিত সাগরে বেইজিং আরেকটি দ্বীপ নির্মাণ করতে যাচ্ছে শুনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, এই ঘোষণা দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিং বিরোধীদেরও দ্বীপ নির্মাণে উৎসাহিত করবে। বিবিসি, রয়টার্স।
দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন রণতরীর জবাবে সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন চীনের
নভেম্বর ০২, ২০১৫
ট্যাগস