পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, পরিবেশ দূষণের জন্য কাউকে একা দোষারোপ করা ঠিক হবে না। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এজন্য সব দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, একটি শান্তিময়, বাসযোগ্য এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পৃথিবী গড়তে যুবসমাজ কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। গতকাল হোটেল সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মডেল ইউনাইটেড নেশন্স ২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অর্থনীতি মোট দেশজ উত্পাদনের নয় শতাংশ হারাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে মধ্যম এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোর অবস্থান কোথায় যাবে তা ভাবার অবকাশ রয়েছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা দুই শতাংশের বেশি বাড়লে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে; ফলে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা তলিয়ে যাবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াসহ ওয়াশিংটন ডিসি ডুবে যাবে। এর মানে হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের জন্য যেসব দেশ তাদের পরিকল্পনা জমা দিয়েছে তাতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা চার শতাংশ হারে বাড়বে। এটি অব্যাহত থাকলে তা পৃথিবীর জন্য বিপদ ডেকে আনবে। তবে বাংলাদেশের দেয়া প্রস্তাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা দেড় শতাংশ হারে বাড়বে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিবেশ মন্ত্রী আরো বলেন, শুধু উন্নত দেশ নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোও পরিবেশ দূষণ করে। সুতরাং কাউকে একা দোষারোপ করে লাভ নেই। বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, উন্নত দেশ এবং আর্থিক সংস্থাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যে একশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়নে জাতিসংঘের সহায়তাও ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। পরে পরিবেশ মন্ত্রী মডেল ইউনাইটেড নেশন্স সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু এই ইস্যুতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দ্বিধা-বিভক্ত। তিনি বলেন, প্যারিস জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে দূষণ কমিয়ে আনতে একটি আইনগত বাধ্যবাধকতা চুক্তি না হলে তা হবে পৃথিবীর জন্য চরম দুর্ভাগ্যের।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিন্স বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। কেউ এটার দায় এড়াতে পারবে না। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে যেসব দেশ তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তিনি বলেন, বিশ্বের তাপমাত্রা ২ শতাংশ করে বাড়লে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এতে অনেক লোক উদ্বাস্তু হবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অনেক দেশ এ সমস্যায় পড়বে। এজন্য সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা সরকারের একার কাজ নয়। সবাইকে বিশেষ করে যুবকদের ঐক্যবদ্ধভাবে এ কাজ করতে হবে।
আট শতাধিক দেশি-বিদেশি তরুণের সম্মিলন
‘জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়ন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গতকাল চার দিনব্যাপী মডেল ইউনাইটেড নেশন্স সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের আট শতাধিক তরুণ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ ইয়ুথ অ্যান্ড স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউনিস্যাব) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে। দেশে মডেল ইউনাইটেড নেশন্সের এটিই সবচেয়ে বড় সম্মেলন।
গতকাল প্রতিনিধিরা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কৌশল নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় রাজনীতিকদের আরো উদ্যোগী করা এবং উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে জোর দেন তারা। চার দিনব্যাপী সম্মেলনে তারা ১৬টি এজেন্ডা নিয়ে কথা বলবেন।
এদিকে গতকাল পৃথক একটি পর্বে মডেল ইউনাইটেড নেশন্সের আটটি সংস্থার চেয়ারম্যান-প্রতিনিধিরা তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। সংস্থাগুলো হলো ইউএনডিপি, ইউএনইপি, ইউএনএফপিএ, আঙ্কটাড, ইউএনডব্লিউটিও, ইউএনসিএসডব্লিউ, ইউএনআইডিও এবং ইউএনএসসি।

