
আমানতের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে রেখে মুনাফা নেওয়া ব্যাংকের কাজ নয় বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. আবুল কাশেম জানান, অলস টাকার পাহাড়ে বসে থাকা ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে আনতে দুই সপ্তাহ ধরে রিভার্স রেপোর মাধ্যমে টাকা জমা নেওয়া বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারল্য প্রবাহ ঠিক রাখতে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. আবুল কাশেম বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইছে, ব্যাংকগুলো ব্যবসা ও উদ্যোগে বিনিয়োগ বাড়াক। সেটাই ব্যাংকের মূল কাজ।'
রেপো ও রিভার্স রেপোকে বলা হয় ব্যাংকিং খাতের নীতি উপাদান (পলিসি টুলস)। এর সুদ হারকে বলা হয় নীতি সুদ হার (পলিসি রেট)। রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে থাকে। বর্তমানে রেপোর সুদ হার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে সুদ দেয়।
রেপো বা রিভার্স রেপোর মাধ্যমে সাধারণত এক দিনের জন্য ধার করা বা জমা রাখা হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রতি কার্যদিবসেই রিভার্স রেপোর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে চাইলেও ১৬ নভেম্বর থেকে কোনো আবেদন গ্রহণ করা হয়নি।
আবুল কাশেম বলেন, 'কয়েকদিন রিভার্স রেপো থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে না। তবে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে বাজার থেকে কিছু অর্থ নিয়েছি।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই ডেপুটি গভর্নর বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি করে এবং সে অনুযায়ী বাজারে তারল্য ও বিনিয়োগ বজায় রাখার উদ্যোগ নেয়। এ জন্য যখন যে উদ্যোগ নেয়া দরকার আমরা সেটি করি।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ১৫ নভেম্বর ১৫টি ব্যাংকের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৬ কোটি টাকা রিভার্স রেপোতে জমা নেওয়া হয়েছিল।
এরপর ১৬ নভেম্বর আটটি ব্যাংক ৩ হাজার ৮৫ কোটি টাকা, ১৭ নভেম্বর দশ ব্যাংক ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা, ১৮ নভেম্বর চার ব্যাংক ৩ হাজার ২১০ কোটি টাকা, ১৯ নভেম্বর তিন ব্যাংক ৩ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা, ২২ নভেম্বর দশ ব্যাংক ৪ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা, ২৩ নভেম্বর ছয় ব্যাংক ৮২৬ কোটি টাকা, ২৪ নভেম্বর পাঁচ ব্যাংক ১ হাজার ১০৮ কোটি টাকা, ২৫ নভেম্বর দশ ব্যাংক ৩ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা, ২৬ নভেম্বর তিন ব্যাংক ৩ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা, ২৯ নভেম্বর চার ব্যাংক ২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা, ৩০ নভেম্বর আট ব্যাংক ৮২১ কোটি টাকা, ১ ডিসেম্বর নয় ব্যাংক ২ হাজার ৪১ কোটি টাকা এবং ২ ডিসেম্বর পনেরটি ব্যাংক ৬ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা রিভার্স রেপোতে জমা রাখতে চাইলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা নেয়নি।
তবে এই কদিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 'বাংলাদেশ ব্যাংক বিল' এর মাধ্যমে ৩০ দিন মেয়াদে কয়েক হাজার কোটি টাকা নিয়েছে কয়েকটি ব্যাংকের কাছ থেকে। সর্বশেষ ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক বিল কেনার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৫৯টি বিড পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম সুদ হার ৪ দশমিক ৭০ শতাংশে ২২টি বিডের বিপরীতে ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
দেশের ব্যাংক খাতে অলস টাকা বাড়তে বাড়তে এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে, যদিও ওই অর্থের কিছু অংশকে 'অলস টাকা' বলা যায় কি না - সে প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো উদ্বৃত্ত তারল্য নিয়ে বসে থাকলেও ঋণ বিতরণ খুব বেশি এগোচ্ছে না। শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, দুই অংকের সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন। ফলে বিনিয়োগও বাড়ছে না।
একটি ব্যাংক যে আমানত সংগ্রহ করে তার সর্বোচ্চ ৮১ শতাংশ ঋণ দিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ঋণ-আমানত অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ, ১০০ টাকা আমানতের মধ্যে ৬৮ দশমিক ৭৫ টাকা ব্যাংক বিনিয়োগ করতে পেরেছে।
এ বছর অক্টোবরে দেশের ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ৫৯ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে, যার পরিমাণ ২০১৪ সালের অক্টোবরে ৫২ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা ছিল। এই হিসেবে অক্টোবর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। অথচ চলতি মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজেমেন্ট (বিআইবিএম) তাদের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে ঋণ নেওয়ার আগ্রহ কম থাকা, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া এবং বিনিয়োগ কয়েকটি বড় গ্রুপের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়ার বিষয়গুলোকে এ খাতের বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।