আদার খাদ্যগুণ

S M Ashraful Azom
0
সেবা ডেস্ক:  আদা মাটির নিচে থাকলেও এটি কিন্তু মূল নয়, কাণ্ড। কাণ্ডটির ভেষজ গুণ অনেক। এটি মূলত মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর ভেষজ প্রধান গুণটি হলো ঠাণ্ডার প্রতিকারে মহৌষধ। এটিকে এশিয়ার রন্ধন ও মসলার মাস্টারও বলা যায়। এর ঝাল খাবারে বাড়তি স্বাদ যোগ করে। আদার বহু ঔষধি গুণ থাকা সত্ত্বেও গবেষণায় বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ফলাফলে তারতম্য লক্ষ করা যায়। যা হোক, এটি জ্বরের চিকিত্সায় ব্যবহূত হয় এবং পেটের অ্যাসিড দমনে সহায়তা করে, বুক জ্বালাসহ নানা প্রদাহবিরোধী হিসেবে এর কার্যকারিতা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। নিয়মিত আদা খেলে অনেক স্বাস্থ্যগত সুফল পাওয়া যায়।
 
উপকারিতা: অনেক সংস্কৃতিতে আদা ঔষধি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বছরের পর বছর ধরে আদা প্রদাহ দূরীকরণে ব্যবহার হয়ে আসছে। আদা শুধু হজমে সহায়তা বা হূদযন্ত্রের সুস্থতায় কাজ করে তাই নয়; ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, এটি প্লেগের মতো মহামারী রোগের চিকিত্সায়ও ব্যবহার করা হয়। এটি টুকরা করা, কিমা করা বা টাটকা সবভাবেই পরিবেশন করা যায়। তবে চিকিত্সা শাস্ত্রে এটিকে উত্তপ্ত করে ব্যবহার করা হয়। ঐতিহাসিকভাবে মানুষ একে জ্বরসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। মসলা হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এর ব্যবহারে খাবারের স্বাদ, গন্ধ অনেক বেড়ে যায়। এটি বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় শরীর উষ্ণ রাখে। এর আরও অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে যা এখানে তুলে ধরা হলো।
 
পরিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা: আদা মুখের লালা, হজম বা পরিপাক রস উত্পাদনে সহায়তা করে; যা পেট খারাপ, মানসিক স্থিরতা ও ভালো হজমে সহায়তা করে। যারা নিয়মিত হজমের সমস্যায় ভোগেন, তারা ঘরেই এর প্রতিষেধক বানিয়ে নিতে পারেন আদা ব্যবহার করে। পরিমাণমতো জিরা গুঁড়া, আদার রস, লেবুর রস, পানি, বিট লবণ নিন। সব একসঙ্গে ভালোভাবে মিশান। মিশ্রণটি সংরক্ষণ করুন আর দুপুরের খাবারের পর এক চামচ করে খান। উপকার পাবেন।
 
শীতকালীন অসুস্থতায়: আদার অন্তর্নিহিত উপাদান শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্যে সমতা রক্ষা করে। ফলে জ্বর, ঠাণ্ডা লাগা, ব্যথা-বেদনার মতো রোগের প্রতিষেধক হিসেবে বেশ কাজ করে।
 
হাঁপানি বা মাইগ্রেনের সমস্যায়: হাঁপানি, মাইগ্রেনের মতো অসহ্য ব্যথায় কাতর রোগীরা নিয়মিত আদা খেতে পারেন। এতে হাঁপানি ও মাইগ্রেনের ব্যথা হ্রাস পাবে।
 
হৃদপিণ্ডের সমস্যায়: হৃদপিণ্ডের আর্টারির গায়ে কোলেস্টেরল ও ফ্যাটি অ্যাসিড জমে। ফলে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। যার জন্য হৃদপিণ্ডের রোগ হয়। আদার রস রক্ত চলাচলে  সাহায্য করে। ফলে যকৃত ও রক্তে কোলেস্টেরলের শোষণ কম হয়, হৃদপিণ্ড ভালো থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা ক্যান্সার ও হৃদপিণ্ডের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার রোধেও এটি কাজ করে।
 
গেঁটে বাতের চিকিত্সায়: যারা গেঁটে বাত বা আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় ভোগেন, শুধু তারাই জানেন এর ব্যথা কতটা তীব্র। ব্যথার তীব্রতা কমাতে আদা কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন চা, সালাদসহ সব তরকারিতে আদা ব্যবহার করুন। উপকার পাবেন। জিনজার অয়েল এক্ষেত্রে বেশ কাজ করে।
 
পিরিয়ডের সমস্যায়: মেয়েদের মাসিকের সময় তলপেটসহ শরীরে ব্যথা অতি সাধারণ বিষয়। কমবেশি সব নারীই এ ব্যথায় ভোগেন। এক্ষেত্রে আদা ছেঁচে একটু লবণ দিয়ে খান। কষ্ট কম হবে।
 
গর্ভাবস্থায়: আদা গর্ভাবস্থায় শরীর হতে টক্সিন অপসারণ করতে সহায়তা করে। এটি সকালের অসুস্থতা বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় প্রথমদিকে প্রাতঃকালীন বিবমিষা, বমি বমি ভাব এবং গতি জনিত অসুস্থতা যেমন—ট্রেন-বাসে বমি বমি ভাব রোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।
 
কাজ
 
আদা সবসময় প্রায় একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় শুধু এর প্রস্তুত প্রণালি ভিন্ন। ফলে স্বাদও ভিন্ন। কচি আদা দেখতে সাদা ও তুলনামূলক পরিষ্কার থাকে। এটি কাঁচা খাওয়া হয় বেশি এবং খুব ঝাল হয়। পুরাতন আদা রান্না করে খাওয়া হয় এবং শুকনো আদা চা ও মসলা হিসেবে খাওয়া হয়। কাঁচা, শুকনো বা রান্না যেভাবেই খান না কেন সবক্ষেত্রেই এর ভেষজ গুণ আপনার কাজে লাগবে।
 
টিপস
 
শীতের শুভ সকাল আদা চা দিয়ে শুরু করুন। শরীর ও মন সতেজ লাগার পাশাপাশি সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো শীতকালীন ছোটখাটো রোগ জয় করতে পারবেন অনায়াসেই।
 
রিচ ফুড খাওয়ার পর একটু আদা চিবিয়ে খান। দেখেন কী জাদুর মতো কাজ করে। সব চুরমার। পেটে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।
 
পেট ফাঁপা হলে বা হজমে সমস্যা হলে একটু আদা সামান্য লবণ মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। একটু পরেই দেখবেন পেট কেমন চুপসে গেছে। বদ-হজমের উপসর্গ নেই।
 
যারা ভ্রমণে বমির সমস্যায় ভোগেন তারা আদা শুকিয়ে ছোট্ট একটি কৌটায় রেখে দিন। ভ্রমণের সময় এ শুকনো আদার কৌটা সঙ্গে রাখুন। আর ওষুধের দোকান, সুপার স্টোর বা মনোহারী দোকানে শুকনো আদা কিনতে পাওয়া যায়। একটু একটু করে মুখে দিন। বমি হবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top