পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, আজ থেকে চারদিন উন্মুক্ত

S M Ashraful Azom
সেবা ডেস্ক:  দুইশ আটাশ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী ‘লাল দালান’ নামে পরিচিত পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। এর ভেতরটা কেমন, দেখার কৌতুহল থাকলেও সাধারণ মানুষের পক্ষে এতদিন তা ছিল অসম্ভব। তবে আজ থেকে মাত্র একশ’ টাকার টিকিটের বিনিময়ে এই পরিত্যক্ত কারাগারটি পরিদর্শনের সুযোগ পাবেন আগ্রহীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো টিকিটের বিনিময়ে কারাগার পরিদর্শনের সুযোগ পাওয়া যায়নি।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের এই পরিত্যক্ত কারাগারটি দর্শনার্থীদের জন্য  আজ বুধবার থেকে  ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত  খোলা থাকবে।  টিকিট বিক্রির টাকা দিয়ে কেনা হবে বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি মায়েদের সঙ্গে থাকা ৩৫০ শিশুর জন্য খেলার সামগ্রী।
প্রসঙ্গত, ১৭৮৮ সালে একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড চালুর মাধ্যমে এই কারাগারের যাত্রা শুরু হয়েছিল। দেশের সর্ববৃহত্ এই কারাগারটি গত ২৯ জুলাই স্থানান্তর হয়েছে কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে। স্থানান্তরের পর গত ১ আগস্ট থেকে পুরান ঢাকার কারাগারটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তবে সুদীর্ঘ যাত্রাপথে এ কারাগারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হাজারো স্মৃতি। দর্শনার্থীরা সেসব ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন। 
বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর জাতীয় চার নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে বন্দি করে এই কারাগারে রাখা হয়। একই বছরের ৩ নভেম্বর  রাতে এই কারাগারের ভেতরেই  এই চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়। প্রতিবছর এই দিনটি ‘জেলহত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এবার জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে ৫ দিন ব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার কারা অভ্যন্তরে ‘সংগ্রামী জীবনগাঁথা’ নামে এক প্রর্দশনীর উদ্বোধন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার রাজনৈতিক স্মৃতি বিজড়িত ১২৫টি নিয়ে আলোকচিত্র ও ভিডিও নিয়ে এই প্রদর্শনীর  উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। উপস্থিত ছিলেন চার নেতার অন্যতম এএইচএম কামরুজ্জামানের ছেলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
কারাগারে যা দেখবেন:১৭ একর জমির সদ্য পরিত্যক্ত এ কারাগারটির ভেতরে  ঢুকলেই হাতের ডানে শাপলা ও প্রতীকী মসজিদের একটি শৈল্পিক নিদর্শন চোখে পড়বে। সোজা হেঁটে গেলে হাতের বামেই সরু একটি সড়ক। সড়ক ধরে গেলেই দুটি ফাঁসির মঞ্চ আর কয়েকটি ভবন। সড়কের একদম শেষ মাথায় জাতীয় চার নেতার ঐতিহাসিক সেল। এর পেছনেই রয়েছে তাদের স্মরণে তৈরি করা জাদুঘর। এর সীমানার ভেতরে রয়েছে চার নেতার আবক্ষ মূর্তি। হস্তান্তরের আগে চার নেতার মরদেহ যেখানে রাখা হয়েছিল সেই স্থানটিও চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।
জাদুঘর থেকে সোজা বের হলেই যমুনা ভবন ও যমুনা ভবন-২। যমুনা ভবন-২ এর ভেতর কারাগারের অভ্যন্তরীণ বিচার ও বৈঠকের কাজ চলতো। ভবনের ভেতরে নানা ধরনের কারুকার্য আঁঁকা রয়েছে। এরপর কারাগারের সাধারণ কয়েদিদের ব্যবহারের জন্য নির্মিত টয়লেট। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য ৫টি কনডেম সেল।  প্রতিটি সেলের ভেতরই রয়েছে অ্যাটাচড টয়লেট। দরজার পাশে বিশেষ তালা ঝুলানো থাকে কনডেম সেলগুলোতে।  রয়েছে আসামিদের জন্য সেলুন। এটি বন্দিদের দ্বারা পরিচালিত হতো।
এখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের স্মৃতি জাদুঘর। ভেতরে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ছাড়াও তার নিজের হাতে রোপিত কামিনী গাছটি সংরক্ষণ করা আছে। ৬টি ছোট পিলার তৈরি করে সেগুলোতে ৬ দফার দাবিগুলো লেখা রয়েছে। জাদুঘরে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহূত চেয়ার, কাপ-পিরিচ, কেটলি প্রভৃতি।
নানা উদ্যোগ:কারাগারের বিভিন্ন স্মৃতি রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের পাশাপাশি এখানে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার স্মৃতি রক্ষায় জাদুঘর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও ডিজাইনে পরিত্যক্ত কারাগারটিকে আরও অনেক স্থাপনা দিয়ে নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে। জেলখানার ইতিহাসকে মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য নানা প্রয়াস নিচ্ছে কারা অধিদফতর। আগামীতে সপ্তাহে দু’দিন করে টিকিটের মাধ্যমে কারাগারে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে তিনি জানান।
ইত্তেফাক
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top