হুমকিতে পড়বে পাঁচ গ্রাম ॥ প্রধান মন্ত্রীর কাছে এলাকাবাসীর স্মারকলিপি

S M Ashraful Azom

বামুনজি বিল থেকে অবৈধভাবে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০ কোটি ঘন ফুট বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি

Five villages will be in danger. Locals' memorandum

মিঠু আহমেদ, জামালপুর: জামালপুর সদর উপজেলার আদর্শ বটতলা এলাকায় প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে মাটি ভরাটের জন্য স্থানীয় বামুনজি বিল থেকে অবৈধভাবে ১০ কোটি ঘন ফুট বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স।

এ জন্য দিনরাত চলছে প্রস্তুতি। এক কিলোমিটার এলাকার কৃষকের কাঁচা-পাকা ধান ক্ষেতের উপর দিয়ে টানা হচ্ছে বড় বড় পাইপ। বসানো হচেছ বালু উত্তোলনের ড্রেজারসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি।


এতে ধংস হচ্ছে কৃষকের ক্ষেতের আধাপাকা ধান। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ বিল থেকে বালু উত্তোলন করা হলে বিল সংলগ্ন ৫টি গ্রাম হুমকিতে পড়বে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে খাল-বিলে পরিণত হবে ওইসব গ্রামের বেশিরভাগ এলাকা। এতে বিল তীরবর্তী গ্রামগুলোর বাড়ি-ঘর ও অনেক ফসলী জমি বিলীন হয়ে যাবে। সরকারি বিল থেকে অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে এলাকার ৫ শতাধিক মানুষের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ, সবকিছু জেনেও অজ্ঞাত কারণে না জানার ভান করে আছে জামালপুর জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন>>বকশীগঞ্জে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ট্রাক সহ ডাকাত আটক
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার তিতপল্যা ইউনিয়নের সুলতান নগর মৌজায় কয়েক’শ বছরের পুরোনো বামুনজি বিলটি অবস্থিত। এ বিলের চার পাশে রয়েছে ঘনবসতিপূর্ণ সুলতান নগর, পিন্ডারহাটি, পশ্চিমপাড় দিঘলী, কাষ্টশিঙ্গা ও শিলকুড়া গ্রাম। বিশাল এ বিলটিতে  খাস জমির পরিমাণ ২২৭ একর। এ বিলের জমিতে স্থানীয় মৎস্যজীবী মানুষ যুগযুগ ধরে মাছ চাষ ও এলাকার প্রান্তিক কৃষকরা ধানসহ বিভিন্ন ফসল  চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এ বিল সংলগ্ন আদর্শ বটতলা এলাকায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য আশপাশের জমি ছাড়াও বামুনজি বিলের দক্ষিণ পাশের ৯০ একর জমি ইতোমধ্যে সরকারিভাবে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ওই বিলে জমি অবশিষ্ট রয়েছে ১৩৭ একর।


আরও পড়ুন>>বকশীগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে শিগগিরই!
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অর্থনৈতিক অঞ্চলে মাটি কাটার কাজের ঠিাকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি প্রকল্প এলাকায় ১০ কোটি ঘন ফুট বালু ভরাটের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে। এ বিপুল পরিমাণ বালু প্রকল্প এলাকার বাইরে থেকে পরিবহন ও ভরাটের জন্য ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দও দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অধিক মুনাফার লোভে প্রশাসনের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও স্থানীয় কতিপয় টাউটদের যোগসাজসে প্রকল্প সংলগ্ন বামুনজি বিলের পশ্চিম-উত্তর পাশ থেকে বালু উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ জন্য দিনরাত চলছে পাইপ ও ড্রেজার বসানোসহ নানা কাজ। এক কিলোমিটার এলাকার কৃষকের কাঁচা-পাকা ধান ক্ষেতের উপর দিয়ে টানা হচ্ছে বড় বড় পাইপ। বসানো হচেছ বালু উত্তোলনের ড্রেজারসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। এতে ধংস হচ্ছে কৃষকের ক্ষেতের আধাপাকা ধান। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স এর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আওয়ামীলীগের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে আঁতাত করে এলাকার কিছু নেতা নামধারী মাস্তান টাইপের লোক নিয়ে তাদের কাঁচা-পাকা ধানের উপর দিয়ে পাইপ নিচ্ছে। তারা জানান, এ বিল থেকে  বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করা হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে তাদের শেষ সম্বল জমি-জমা ও বাড়িঘর সবই দেবে ও ধসে  যাবে। সরকারি কোন ধরণের অনুমতি ছাড়াই সরকারি বিল থেকে অবৈধভাবে ১০ কোটি ঘন ফুট বালু উত্তোলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও জেলা প্রশাসনের রহস্যজনক ভ’মিকা দেখে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা কেউ।


আরও পড়ুন>>বকশীগঞ্জে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালিত
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আমানুল্লাহ আকাশ, আলহাজ আঃ বারেক ও সবুর মাস্টারসহ এলাকার অনেকেই জানান, ঐতিহ্যবাহী বামুনজি বিল থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করতে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়েছিল। জেলা প্রশাসক তাদেরকে আশ^াসও দিয়েছিলেন। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কোন কিছুর তোয়াক্তা না করে অদৃশ্য শক্তির জোরে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই পাঁচটি গ্রাম ভাঙ্গণের মুখ থেকে রক্ষার সার্থে ও বামুমজি বিল থেকে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ওই এলাকার পাঁচ শতাধিক মানুষ মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্পের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রকৌশলী মনির হোসেন কোন সদুত্তর দিতে না পেরে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মোঃ লোকমান হোসেন খোলা কাগজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।



#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top