জমে উঠল না বহুল প্রতীক্ষিত ঈদের ছবি ‘রেস থ্রি’

S M Ashraful Azom
জমে উঠল না বহুল প্রতীক্ষিত ঈদের ছবি ‘রেস থ্রি’

সেবা ডেস্ক: ‘রেস থ্রির’ সমস্যা হল, ছবিটি দুটো চাহিদার কোনটাতেই টিকতে পারল না। আড়াই ঘন্টার এই ছবি মাথার ব্যাথা ধরিয়ে দিতে পারে। বলিউডের হিরো সালমান খান পর্দায় এসে কখন নিজের কেরামতি দেখাবেন তার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আপনার আর কিচ্ছু করার নেই। বারবার খারাপ হয়েছে বলতে মোটেই ভাল লাগছে না, তবুও না বলে উপায় নেই, সম্পূর্ণ ছবিতে সালমান আর তার প্রেমিকার খুনসুটি ছাড়া বাকি অংশটায় আপনি ভীষণরকম বোর হতে বাধ্য।

২০০৮ এ ‘রেসের’ প্রথম কিস্তি যখন মুক্তি পায়, তখন সত্যিই নতুন কিছু পেয়েছিলেন দর্শক। বলিউডের প্রধান সারির অভিনেতাদের এই প্রথম দেখা গেল এমন কিছু চরিত্রের ভুমিকায়, যারা যথার্থই নৈতিক চেতনাবর্জিত, এবং তা নিয়ে রাখঢাক করার প্রয়োজন তারা বোধ করে না। স্রেফ অসাধু বা অসচ্চরিত্র হলে আজকালকার দর্শক বিশেষ ঘামেন না, কিন্তু ছবির মুখ্য সব চরিত্রই লোভী, অসৎ, দুশ্চরিত্র, এবং কোন কারণ (যেমন রুগ্ন মা, অবিবাহিতা বোন ইত্যাদি) ছাড়াই, এমনটা ‘রেসের’ আগে কেউ বড় একটা দেখেননি হিন্দি ছবিতে।

আব্বাস-মস্তান, রেস সিরিজের পরিচালকদ্বয়, জানতেন কখন চিত্রনাট্যে চমক আনতে হবে আর কখন একঘেয়েমি ভাঙতে হবে গান দিয়ে। তবে এই ফর্মুলাটাই এখন বস্তাপচা হয়ে গেছে, তাই সেই এক নিয়ম মানতে গিয়ে ‘রেস থ্রিয়ের’ গল্পও সস্তার বিনোদন হয়ে দাঁড়ালো।

‘রেস থ্রি’ আর কিছুই নয়, শুধুমাত্র গাড়ির বিস্ফোরণ, অনেক কটা চরিত্রের অকারণ উপস্থিতি, এবং দুর্বল, ঢিলে সংলাপের সংমিশ্রণ। সেই একই চরিত্র যার অনুভূতি তাকে যন্ত্রণা দেয়, তার মধ্যে শব্দের ব্যবহারও অত্যন্ত নিন্মমানের। যে ছবি অনিল কাপুরের মতো অভিনেতাকে কাজে লাগাতে পারে না তাকে আর কিই বা বলা যায়? মনে হল কাপুরই একমাত্র ডুবে যাওয়া জাহাজের পাল।

ছবিতে বাকি কাস্ট, এমনকি ববি দেওলও, সেই থোড় বড়ি খাড়া অ্যান্ড রিপিট। প্রত্যেকটা পুরুষ চরিত্র পেশীবহুল, আর মেয়েরা সেই স্রোতে বয়ে চলা এক ভূমিকায়। ডেইজি শাহ ক্রমাগত ফ্ল্যাটস পাল্টে স্টিলেটো পরেন, তারপর আবার হিল পরে নেন ফাইট সিকুয়েন্সের সময়। জ্যাকলিনের উন্নতি হয়েছে, ‘রেস টুয়ের’ থেকে আর যাই হোক বেশি স্ক্রিন টাইম পেয়েছেন, এই বা কম কিসে! আবার সংলাপও বলেছেন অনেকটা সাবলীলভাবেই, ভাবা যায়!

বাকি পুরো ছবিটাই কেমন কচ্ছপের তালে চলেছে। তাই বলে ভাববেন না শেষে গিয়ে বাজিমাৎ করবে। সালমান তার সম্পূর্ণ চেষ্টা করেও ব্যর্থই হয়েছেন। একা তরী কি আর তীরে নিয়ে যাওয়া যায়? ভাইজান বুঝেছেন বোধহয়। এমনকি শার্টবিহীন সালমানও দর্শক টানতে অক্ষম। পাশে আবার ববি দেওলও শার্টলেস হয়েছিলেন। আরে বাবা, এই বিভাগে ভাইজানকে টক্কর দেওয়া ‘না মুমকিন হ্যায়’। ভাইজান যেন অগোচরে ববিকে বলে উঠলেন, ‘ক্যায়া ইয়ার’!

অথচ, ছবিটির দেখার জন্য সিনেমা হলের অগ্রিম টিকেট বুকিং দেখে ধারণা করা হয়েছিল এর আয় অনায়াসেই ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। সাধারণত ছবি মুক্তির দু-দিন আগে থেকে টিকেট দেওয়া শুরু হয় তবে ‘রেস থ্রি’র ক্ষেত্রে পাঁচদিন আগেই খুলে গিয়েছিল কাউন্টার। মুম্বাই মিররের খবর অনুযায়ী, দিল্লির দুটি সিনেমা হল অগ্রিম বুকিংয়েই আয় করেছে প্রায় ২০ লাখ।

অগ্রিম টিকেট বুকিংয়ের ওই ঝড় দেখে ধারণা করা হচ্ছিল, বলিউডের সুলতানের এই ছবি প্রথম দিনেই তিরিশ কোটির ব্যবসা করে ফেলবে। তাই প্রথম সপ্তাহেই ১০০ কোটির ব্যবসা করে ফেলতে পারে ‘রেস থ্রি’। কিন্তু তা এখন অনিশ্চিতই বলা যায়।

রেস’ ফ্র্যাঞ্চাইজির আগের দুটি ছবি অবশ্য বেশ হিট ছিল। ২০০৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘রেস’, যার মোট কালেকশন ছিল ৬০.৮৩ কোটি টাকা। আর ২০১৩-র ‘রেস টু’ তো ১০০ কোটির ক্লাবে ঢুকে পড়েছিল। এই ছবির মোট ব্যবসা ছিল ১০০.৪৫ কোটি টাকা।

এরপর আসছে ‘রেস ফোর’, হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন, ধ্বসে যাওয়ার পরও আসছে সিরিজের আরেকটি ছবি। আশা রাখতে ক্ষতি কী!




#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top