রৌমারী তাঁতীদের উৎপাদিত পণ্য সূলভ মূল্যে বিক্রয়, সল্প লাভে ঋণ সুবিধা ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় ওদের জীবন হুইলে বন্দি থেকে গেলো
![]() |
তাঁতীদের সল্প লাভে ঋণ সুবিধা ও উৎপাদিত পণ্য সূলভ মূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা না থাকা। তাঁত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা না হওয়া তাঁতী পেশা ছেড়ে তাঁতীরা ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন শহরে বছরে প্রায় ছয় মাস শ্রম বিক্রয় করে উপার্জিত অর্থে অতিকষ্টে এক বছর সংসার চালান তারা।
পর্যায়ক্রমে তাঁত ঘর বন্ধ রেখে অধিকাংশ মানুষ এ পেশা ছেড়ে বিভিন্ন পেশা গ্রহন করছেন। আর যারা বাপদাদার তাঁতী পেশা অতি কষ্টের মধ্যেও ধরে রেখে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনরাত শ্রম দিয়ে তৈরী করছে শীতে চাঁদর, মাফলাড়, বাহারী রঙ্গীন শাড়ী, লুঙ্গী তাদের প্রয়োজনীয় সংকটের দিকে কেউ তাকাইনি।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকট, বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটরের অতিরিক্ত ব্যয়, বিনিয়োগের অভাব, সুদের চাপ, বিক্রিত পন্যের টাকা বকেয়া, ভারতীয় কাপড়ের দৌরাত্ম্য, মধ্যসত্ত্বভোগীদের দাপট, বাজারজাতকরণে বিঘœতা এমন হাজারও সমস্যা থাকলেও হুইলেই যেন বন্দি থেকে গেলো ওদের জীবন।
বাপদাদার এ পেশা পারছেনা ধরে রাখতে পারছেনা ছেড়েও দিতে। সর্বশান্ত পরিবারগুলো সুদিনের অপেক্ষায় রয়েছে। তারা চায় রৌমারীর তাঁত শিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে। ফিরে আনতে চায় কাকডাকা ভোর থেকেই গ্রামের পর গ্রামজুড়ে তাঁতীবাড়ির খট খট শব্দ।
গত বৃহস্পতিবার রৌমারী উপজেলার নামাজেরচর, চরকাজাইকাটা, ওয়াহেদ নগর, চরশৌলমারী, সাহেবের আলগা, মিয়ারচর, সোনাপুর, ফুলকারচর, দক্ষিণ নামাজেরচর, মশালেরচর, দইখাওয়াচরসহ অনেক গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, শীতের চাঁদর তৈরীর জন্য এখন তাঁতগুলো রাত-দিন চালু হয়েছে তাঁত বোনা। কিছু সংখ্যক তাঁতীরা আর্থিক সংকটের কারণে তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।
এদের মধ্যে কেউ কেউ জমি বন্ধক, জমি বিক্রি, অন্যের কাছে ধারে, সুদের টাকা নিয়ে সুতার ব্যবস্থা করে থাকেন। তাঁতগুলোতে বছরভর জমে থাকা ধুলোবালির আস্তরণ মুছে নতুন আশায় শুরু করতে তাঁতগুলো। এখানে সাধারণত শাড়ি, লুঙ্গী, শীতের চাদর ও মাফলার তৈরি করেন তারা।
এ ভরা শীতে একটি চাদর বিক্রি হয়েছে ৪’শ থেকে ৪২০ টাকা, লুঙ্গী ১০০ থেকে ৩’শ টাকা, মাফলার ১০০ থেকে দেড়’শ টাকায়। তবে শাড়ির বাজার তেমন ভাল নয় বিধায় সেটির কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য রৌমারী উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে পাটের মাদুর বিছিয়ে খোলা দোকানে বিক্রয় করেন কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা, এ শীতে তাদের তৈরী লুঙ্গী, শীতের চাদর সুদূর টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ মহাজনদের নিকট পাইকারী দরে বাকীতে বিক্রয় করে থাকেন। বার বার টাকার জন্য যেতে হয় তাদের কাছে।
![]() |
এ ভরা শীতে একটি চাদর বিক্রি হয়েছে ৪’শ থেকে ৪২০ টাকা |
স্বাধীনতার পর থেকেই পরিবর্তন হয়েছে অনেক সরকার। ভোট পেয়ে সংসদ সদস্যের গদি দখল করেছেন সংসদ সদস্য। কিন্তু কেউ কথা রাখেননি। ঘটা করে সমাবেশ ও প্রতিশ্রুতি। পরে সব আগের মতই। এমনকি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরাও এর বাইরে নন। ভোটের আগে তাঁতীদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ভোট নিয়েছেন তারাও। ভোটের পর নিজের সীমাবদ্ধতার অজুহাত দিতে কার্পন্ন করেননি। একপর্যায়ে তাঁতীরা ধর্ণা দিতে শুরু করেন উচ্চ পদস্থ আমলাদের দ্বারে। যারা রৌমারীর সন্তান। তারাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আকাশ ছোঁয়া। তাঁতীরা আবার বুক বেঁধেছেন নতুন আশায়। কিন্তু ‘যাহা বায়ান্ন তাহা তেপ্পান্ন’র মতোই অবস্থা। তাঁতীদের কপাল আর ফেরেনি। একদিকে তাঁতগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
অন্যদিকে শীতের শেষে ঋনদাতারা মাথার উপরে খড়গ নিয়ে হাজির হবে। কিছুই বুঝতে চাবে না।’ এমনটাই জানালেন পশ্চিম মিয়ারচর গ্রামের জুলফিকার তাঁতী।
চরশৌলমারী গ্রামের মোরতুজ আলী বলেন, টাইঙ্গল এক মহাজনকে ২ লাখ টাকার চাদর বাকিতে দিছি ১বছর আগে। হ্যায় টাকা দিছে মোডে ১ লাখ। বাকি টাকা এহনতুরি পাই নাই।
চরশৌলমারী গ্রামের মমিনুল ইসলাম বলেন সুদে টাকা নিয়ে তৈরী শাড়ি, লুঙ্গী, শীতের চাদর ও মাফলার করে বাকিতে বিক্রি করতে হয়। সরকার যদি আমাদের তাঁতের তৈরী পোশাকের ন্যায মূল্যে সরাসরি বিক্রয়ের ব্যবস্থা করলে আমারা লাভবান হবো। তাঁতী পেশা টিকে থাবে পবিরাব পরিজন নিয়ে একটু শান্তিতে বাঁচতে পারবো এখন শুধু সে আশা টুকু করি।
চরশৌলমারী তাঁত সমিতির সম্পাদক রমজান আলী বলেন ন্যাশনাল ব্যাংক এখন আমাদের কিছু কিছু ঋণ দিচ্ছে প্রতিজনকে ৫০হাজার টাকা করে। এতে আমার সুদের টাকা কমনিতে হচ্ছে সরকারের সব তফশীলি ব্যাংক আমাদের দিকে তালে আর সুদে বোঝা বইতে হবে না।
চরশৌলমারী তাঁত সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন আমাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা ১৮৭ পরিবার আমরা মাসিক ৫০টাকা করে জমা করি। কিন্তুু কিছু দরিদ্র তাঁতীর মেয়ে বিবাহ, কোন তাঁতী অসুস্থ্য হলে তার চিকিৎসা জন্য আমারা সমিতি তহবিল থেকে ক্ষুদ্র আকারে আর্থিক সহযোগীতা করি। কারন উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্য কাছে সহযোগীতা চাইলে তারার আমাদের খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়। সরকার যদি আমাদের এককালীন অনুদান, বিদ্যুতের সুব্যবস্থা এবং মধ্যসত্ত্বভোগীদের হাত থেকে আমাদের বাঁচালে আমরা আগের মতো আবারও বাঁচিয়ে তুলতে পারবো হারিয়ে যাওয়া তাঁত শিল্পকে।
ন্যাশনাল ব্যাংক লি. রৌমারী শাখার ব্যবস্থাপক সোহেল রানা বলেন, হঠাৎ একদিন কয়েক জন তাঁতী আমার কাছে এসে ঋণের কথা বলে ব্যাংকে সকলে মিলে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে তাদের কষ্ট দেখে শতকরা দশ হারে সরল ঋণ প্রথমে নয় জনকে ৫০হাজার টাকা করে ঋণ প্রদান করি সঠিক সময়ে পরিশোধ করায় এখন বার জনকে ৬০ হাজার টাকা করে দ্বিতীয় ধাপে ঋণ দেওয়া হয়।
⇘সংবাদদাতা: শফিকুল ইসলাম
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।