সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ৫ ভারতীয়র জীবন বদলে যাবার গল্প!

S M Ashraful Azom
0
সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ৫ ভারতীয়র জীবন বদলে যাবার গল্প!

সেবা ডেস্ক: এই যুগটাই ভাইরাল হবার। সকলের হাতে হাতে স্মার্টফোন, ব্যতিক্রমী কিছু দেখলেই ফোনের ক্যামেরায় তা বন্দি হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ জনগনের কথা বাদ দিন, মিডিয়ায় কাজ করা লোকজনও কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে, হয়তো কোন একটা বিশেষ দৃশ্যের জন্যে, কোন একটা গান বা যে কোন কিছুর জন্যে। এমনিতে ভাইরাল হওয়া কোনকিছু মানুষ খুব বেশিদিন মনে রাখে না, নিত্য-নতুন ইস্যু আসে, আগের ইস্যুগুলো চাপা পড়ে যায় নতুন ইস্যুগুলোর নিচে। তবে সৌভাগ্যবান কেউ কেউ আছেন, যারা হয়তো ভাইরাল হবার পরে রাতারাতি পরিণত হয়েছেন তারকায়, পেয়েছেন নিজেকে প্রমাণের দারুণ সব সুযোগ, উঠেছেন আরও বড় মঞ্চে। আবার কেউ কেউ হয়তো ট্রলের শিকার হয়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশের হিরো আলম যেমন এরকম একজন। হুট করে ভাইরাল হয়ে পড়াটাই তাদের জীবনকে বদলে দিয়েছে পুরোপুরি। এরকমই কিছু মানুষের গল্প শোনা যাক চলুন।

হানান হামিদ হানান হামিদ
কেরালার মেয়ে হানান হামিদের গল্পটা মন খারাপ করে দেয়ার মতো। গরীব পরিবার থেকে উঠে আসা হানান নিজের পড়ালেখার খরচ চালানোর জন্যে বাজারে সবজি আর মাছ বিক্রি করতেন। কলেজ ইউনিফর্ম পরে হানান রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মাছ বিক্রি করছেন, এরকম একটা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে, সেইসঙ্গে তার গল্পটাও। ভারতের নানা প্রান্ত থেকে অনেকেই হানানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে সাহায্য করার আগ্রহ দেখান। শুধু তা-ই নয়, মালয়লাম সিনেমার এক পরিচালক তো হানানকে তার পরবর্তি ফিল্মে কাস্ট করার ঘোষণাও দেন!

বিপত্তির শুরু হয় সেখান থেকেই। অনেকেই বলতে শুরু করেন, এটা আসলে সিনেমার জন্যে সাজানো একটা পাবলিসিটি স্ট্যান্ট। তারা যুক্তি দিলো, এ মেয়ে এতই গরীব হলে তার হাতে স্মার্টফোন এলো কোত্থেকে? সে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চালায় কিভাবে? একদিন আগেও যে মেয়েটা সবার কাছে অনুপ্রেরণার আরেক নাম ছিল, পরদিনই তাকে সবাই গালাগাল দিতে শুরু করলো। বাজারের যে জায়গাটায় সে মাছ আর সবজি বিক্রি করতো, সেখান থেকে তাকে উঠিয়ে দিলো পুলিশ, মিডিয়াও তার পেছনে লেগে গেল। এতকিছুর যন্ত্রণায় ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে কেঁদে ফেলেছিল হানান হামিদ। তবে নিজের মহৎ হৃদয়ের প্রমাণ সে রেখেছে কিছুদিন পরেই। যত টাকা তার কাছে ডোনেশন হিসেবে এসেছিল, তার সবটুকুই সে দান করে দিয়েছিল কেরালার বন্যায় আক্রান্ত মানুষের জন্যে।


সঞ্জীব শ্রীবাস্তব
সঞ্জীব শ্রীবাস্তব
নামটা বললে কেউই চিনবেন না হয়তো তাকে। তবে যদি বলা হয় ড্যান্সিং আঙ্কেল, তাহলে অনেকেই চিনে ফেলবেন এই ভদ্রলোককে। সঞ্জীবের খ্যাতি শুধু নিজের দেশ ভারতেই সীমাবদ্ধ নয়, তাকে ইউরোপ-আমেরিকার মানুষজনও চেনে। তার নাম না জানলেও, তার সেই বিখ্যাত নাচের ভিডিওটা দেখেননি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরকম মানুষের সংখ্যা কমই। এক আত্নীয়ের বিয়েতে বয়স কিংবা সামাজিক অবস্থান, এসব কিছুর তোয়াক্কা না করে বাচ্চাদের মতো আনন্দ নিয়ে নেচেছিলেন সঞ্জীব। সেই ভিডিওটাই অনলাইনে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল।

চল্লিশোর্ধ্ব এক মোটাসোটা ভদ্রলোক হাত পা ছুঁড়ে অবিকল নায়ক গোবিন্দ’র মতো করে নাচছেন, এটা সামনাসামনি দেখাটাও একটা ভরপুর বিনোদন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত কেউ হয়তো সঞ্জীবের সেই নাচের ভিডিও ধারণ করেছিলেন মোবাইল বা ক্যামেরায়, সেটা সঞ্জীব জানতেনও না। কয়েকদিন পরেই ফেসবুকে নিজের নাচের সেই ভিডিও দেখে আঁতকে উঠেছিলেন তিনি, ততদিনে সেটা ভাইরাল হয়ে পড়েছে। লোকজন কি বলবে, কি ভাববে, তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করবে ভেবে শুরুতে চিন্তায় অস্থির হয়েছিলেন সঞ্জীব। কিন্ত ঘটেছে ঠিক উল্টোটা।

ভিডিওটা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই তার কাছে সাংবাদিকেরা আসতে শুরু করেন ইন্টারভিউ নেয়ার জন্যে। টিভি চ্যানেলগুলো থেকে ড্যান্স রিয়েলিটি শো-তে অংশগ্রহণের জন্যে আমন্ত্রণ আসা শুরু হয়। শুধু তা-ই নয়, সালমান খান আর গোবিন্দে’র সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে নাচার সুযোগও পেয়েছেন সঞ্জীব, তাকে স্পেশাল গেস্ট হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেসব শো-তে। সেসব জায়গাতেও নিজের প্রতিভা দেখিয়েছেন সঞ্জীব। নিজের শহরে এখন তার এমনই জনপ্রিয়তা যে, মিউনিসিপ্যালিটি কর্পোরেশন তাকে তাদের ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাসেডরই বানিয়ে নিয়েছে! একটা ভিডিও আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে যে জীবনটা এভাব বদলে যাবে, সঞ্জীব শ্রীবাস্তব সেটা কোনদিন ভাবতেও পারেননি!

প্রিয়া প্রকাশ ভারিয়ার প্রিয়া প্রকাশ ভারিয়ার
সামান্য চোখ টিপেই যে কেউ তারকা হয়ে যেতে পারেন, সেটা প্রিয়া প্রকাশ ভারিয়ারকে না দেখলে জানা হতো না কারোই। লো বাজেটের দক্ষিণী একটা সিনেমায় অভিনয় করছিলেন প্রিয়া, সেটারই ফার্স্ট লুক মুক্তি পাবার পরে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে গেলেন তিনি। তার চোখ টিপ দেয়ার দৃশ্যটা হাজারো তরুণের মনে আলোড়ন তুলেছিল, কয়েকদিনের মধ্যেই ইনস্ট্যাগ্রামে আড়াইশো থেকে বেড়ে কয়েক লক্ষ ফলোয়ার হয়ে গিয়েছিল তার!

অজস্র বিজ্ঞাপনের অফার আসতে শুরু করে তার কাছে, সেগুলোর কয়েকটাতে কাজও করেছেন প্রিয়া। অবধারিতভাবেই, তার অভিনীত প্রায় সবগুলো বিজ্ঞাপনেই চোখ টিপে দেয়ার দৃশ্যটা ছিল। এই জিনিসের জন্যেই তো এত খ্যাতি কুড়িয়েছেন তিনি, সেটা না কি থাকলে চলে! এখন তার কাছে বলিউডি সিনেমার অফারও আসা শুরু হয়েছে, শীঘ্রই হয়তো চেন্নাই ছেড়ে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমাবেন প্রিয়া। ভাবুন তো, শুধু চোখ মেরেই কিনা বলিউডের নায়িকা হয়ে যাচ্ছেন কেউ একজন!

অভিনব কুমার অভিনব কুমার
ইনি বাকিদের মতো এত বেশি জনপ্রিয় নন। তার যাত্রা শুরু একটা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। ট্রিভাগো নামের একটা ট্রাভেল এন্ড হোটেল বুকিং সাইটের বিজ্ঞাপন দিয়ে তিনি প্রথম নজরে আসেন সবার। এমনিতে এই টাইপের টিভি কমার্শিয়ালগুলোতে কোন নামীদামী সুপারস্টারেরাই কাজ করেন। সেখানে হাত পা নাড়িয়ে গা দুলিয়ে অভিনবকে কথা বলতে দেখাটা অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা ছিল সবার জন্যে। অভিনবের লুকের সাথে হ্যারী পটার চরিত্রে অভিনয় করা ড্যানিয়েল রেফক্লিফকে মিলিয়ে ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনবকে গরীবের রেডক্লিফ হিসেবে নাম দেয়া হয়। রাতারাতি নাম ছড়িয়ে পড়ে অভিনবের।

তবে এই একটা বিজ্ঞাপনই অভিনবের জীবনটা বদলে দিয়েছিল। এই বিজ্ঞাপনটা অভিনবের করার কথা ছিল না। তিনি ট্রিভাগো’র কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন, সেকারণেই হুট করে সুযোগ পেয়েছিলেন। বিজ্ঞাপনটা ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরে এক পত্রিকা তার বড়সড় একটা সাক্ষাৎকার ছেপেছিল। সেটা পড়ে অভিনবের বাবা ফোন করেছিলেন তাকে, দশ বছর পরে কথা হয়েছিল বাবা-ছেলের। অভিনব হোটেল ম্যানেজমেন্টে পড়ায় তার ওপর রাগ করেছিলেন বাবা, পত্রিকায় ছেলের ছবি দেখে সেই রাগ গলে জল হয়ে গিয়েছিল এক নিমিষেই!

ধিনচ্যাক পূজা ধিনচ্যাক পূজা
তার ব্যাপারে বেশিকিছু বলার নেই। ইনি হচ্ছেন ভারতের হিরো আলম। কিংবা মাহফুজুর রহমানের ফিমেল ভার্সনও বলা যায় তাকে। বেসুরো গলায় গান গেয়ে আলোচনায় এসেছিলেন, ভারতে এত বেশি ট্রল করা হয়েছে তাকে নিয়ে, যেটা হয়তো আর কাউকে নিয়েই করা হয়নি। তবে ট্রল হলেও, নিজের জায়গায় পূজা ঠিকই সফল। তিনি ভাইরাল হতে চেয়েছিলেন, সেটা হতে পেরেছেন।

সালমান-অক্ষয়ের মতো সুপারস্টারেরা তাকে এক মঞ্চে ডেকে নিয়ে তার গান শুনেছেন, তারাও মজা করেছেন। সালমান খানের টিভি রিয়েলিটি শো বিগ বস-এ ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল তাকে। বিভিন্ন শো আর লাইভ পারফরম্যান্সের জন্যে এখন প্রচুর ব্যস্ত সময় কাটান তিনি। যতোই বেসুরো গলায় গান গাওয়া হোক না কেন, পূজার গান শোনার জন্যে লোকে টাকা দিয়ে ভাড়া করে নিয়ে যায় তাকে! এই সৌভাগ্যই বা কয়জনের হয়?
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top