
জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু: জামালপুরের বকশীগঞ্জে শুধুমাত্র মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষায় নয় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়েও শিক্ষার মান নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। মানসম্মত শিক্ষা অর্জন না হওয়ায় এগুতো পারছে না শিক্ষার্থীরা। এর থেকে উত্তোরণ হতে না পরলে ভবিষ্যতে আরো বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
বকশীগঞ্জ উপজেলায় সরকারি ও এমপিও ভুক্ত সহ পাঁচ টি কলেজ রয়েছে। কলেজ গুলো হলো বকশীগঞ্জ সরকারি কিয়ামত উল্লাহ কলেজ, খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজ, আলহাজ গাজী আমানুজ্জামান মডার্ন কলেজ, নিলাখিয়া পাবলিক কলেজ ও ফারাজি পাড়া মডেল কলেজ।
জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলা একটি দারিদ্র্য পীড়িত ও অবহেলিত উপজেলা। এই উপজেলায় শিক্ষার হার গড় ৪০ শতাংশ। এসএসসিতে তুলনামূলক ভাল ফলাফল হলেও এইচএসসিতে ধ্বস নেমেছে গত কয়েক বছরের ফলাফল।
নানা কারণেই উচ্চ মাধ্যমিকে ফলাফলে ধ্বস নেমেছে। এরমধ্যে শিক্ষকদের দায়সারা মনোভাব, ভাল মানের শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়া, অভিভাবকদের অসচেতনতা, দারিদ্রতা অন্যতম।
আরও পড়ুন- বকশীগঞ্জে উচ্চ ও মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত চরের শিক্ষার্থীরা
বকশীগঞ্জ সরকারি কিয়ামত উল্লাহ কলেজের ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ফলাফল উর্ধ্বমুখী না হয়ে বরং আগের চেয়ে পাসের হার কমেছে। একই অবস্থা খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজেও। এই কলেজেও ২০১৬,১৭ ও ২০১৮ সালের ফলাফলে পাসের হার কমেছে। তবে প্রথমবার পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাসের হারে এগিয়ে আছে আলহাজ গাজী আমানুজ্জামান মডার্ন কলেজ। এই কলেজ ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা হয়ে ২০১৮ সালে প্রথম এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। ফলাফলে ৯৯.৩৭ শতাংশ পাস করে আলোচনায় চলে আসে।
অপরদিকে ২০১৮ সালের ফলাফলে আগের চেয়ে নি¤œমুখী হয় বকশীগঞ্জ সরকারি কিয়ামত উল্লাহ কলেজ ও খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজ।
বকশীগঞ্জ সরকারি কে.ইউ কলেজে ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল ৩৯.১৬ শতাংশ। ২০১৭ সালে একধাপ এগিয়ে পাসের হার হয় ৫২.৭৬ শতাংশ । কিন্তু ২০১৮ সালে ফলাফলে ধ্বস নামে এই সরকারি কলেজে। ২০১৮ সালেএই কলেজে পাসের হার নেমে আসে ৪৩.৫৫ শতাংশে। এই তিন বছরের ফলাফলে একটিও জিপিএ- ৫ পায়নি এই সরকারি প্রতিষ্ঠানে। বকশীগঞ্জ খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজে ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল ৬৭.২৬ শতাংশ । ২০১৭ সালে তা নিচে নেমে হয় ৫২.০৭ শতাংশ। ২০১৮ সালে আরো একধাপ নিচে নেমে পাসের হার হয় ৪৫ শতাংশ। তিন বছরের ফলাফলে এই কলেজেও কোন জিপিএ-৫ পায় নি কোন শিক্ষার্থী। একই অবস্থা বাকি কলেজ গুলোতেও।
বকশীগঞ্জ সরকারি কিয়ামত উল্লাহ কলেজে শিক্ষার এই বেহাল অবস্থা পর্যালোচনা করতে গিয়ে জানা যায়, এই কলেজে বেশির ভাগ সময় শিক্ষক স্বল্পতা থাকে। অনেক সময় ৫ জন শিক্ষক দিয়ে সব বিষয়ের ক্লাস নেয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত পাঠদান না পেয়ে ফলাফল খারাপ করছে। বর্তমানেও এই কলেজে ইংরেজী, গণিত ও আইসিটি বিষয়ের শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রভাষক জানান, এসএসসিতে ভাল ফলাফল করা শিক্ষার্থীরা ঢাকা সহ নামি দামি কলেজে ভর্তি হয়। আমাদের কলেজে বেশির দুর্বল শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ায় ফলাফলেও আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও তিনি শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের দায়বদ্ধতা না থাকা, কলেজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান না হওয়ায় শিক্ষার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন।
খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক রোকুনজ্জামান রুকন জানান, অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত না থাকায় পাঠদান থেকে বঞ্চিত হয় ফলে তারা বেশি ধারণা নিতে পারে না। একারণেও ভাল মানের ফলাফল করতে পারে না শিক্ষার্থীরা ।
খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বজুলল করিম তালুকদার বলেন, ভাল মানের শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় ফলাফল বিপর্যয় হচ্ছে। তবে এর থেকে উত্তোরণের জন্য তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বলেও জানান। অবকাঠামোগত উন্নয়ন , বিজ্ঞানাগার না থাকায় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিপাকে পড়তে হয় বলেও তিনি জানিয়েছেন।
এই এলাকার শিক্ষার্থীদের ভালমানের শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ, সচেতনতা সৃষ্টি , শিক্ষকদের শূন্যপদ পূরণ করা সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা
⇘সংবাদদাতা: জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।