বইমেলায় আসছে বাঁশখালীর কৃতি লেখক হারুন হাফিজের 'সমুদ্রের ডাক'

S M Ashraful Azom
0
বইমেলায় আসছে বাঁশখালীর কৃতি লেখক হারুন হাফিজের 'সমুদ্রের ডাক'
শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী প্রতিনিধি: সাগর পাহাড় আর সমতলভূমি বেষ্ঠিত প্রাকৃতিক নৈসর্গিক অঞ্চল বাঁশখালী। যার পশ্চিমের অঞ্চল জুড়ে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। প্রায় দীর্ঘ ৩২ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে সমুদ্র সৈকত বাঁশখালীকে মিনি কক্সবাজারের রুপ দিতে প্রস্তুত।

উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে বিশালাকার অংশের অন্যতম একটি অঞ্চল গন্ডামারা উপকূলীয় অঞ্চল। এখানকার মানুষের আবেগ আর অনুভুতির একটা বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে বঙ্গোপসাগর ও এর পাশ দিয়ে বয়ে চলা জলকদর। 

বিখ্যাত কোন কবি, কিংবা নামকরা করা কোন কথা সাহিত্যিকের জন্ম এখানে হয়নি বলে হয়ত এখানকার মানুষের প্রাত্যাহিক জীবনাচরণ তেমন বেশী উন্মোচিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। কারো কথা, গান কিংবা কবিতায় হয়ত ফুটে উঠেনি উত্তাল ঢেউয়ের সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর জীবনের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা আবেগ, অনুভুতি, প্রেম-ভালোবাসার কথাগুলো। অথচ এখানেও মানুষের অবেগ আছে, বিস্তৃত বালুচরে ভাঁজে ভাঁজে ভালবাসা লুকিয়ে আছে অথবা শন শন শব্দে সূর তোলা ঝাউয়ের ডালে বিন্যাস্ত আছে হাজারো প্রেমের গল্পগাঁথা! উপকূলের হাসি কান্নার এক বিস্তৃতি আয়োজন লেখকের উপন্যাসে স্থান পেয়েছে।

অথৈ জলরাশির বুকে জমে থাকা এমন সব অনবদ্য উপাখ্যানকে এবার উপন্যাসে রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন বাঁশখালীর আরেক কৃতিসন্তান কবি ও উপন্যাসিক হারুন হাফিজ। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চল গন্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামের মোনাফ সিকদার বাড়ীতে ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন কথাশিল্পী হারুন হাফিজ। বাবা মীর আহমদ সিকদার এবং মাতা মরহুমা হফেজা বেগম। বাবা মায়ের সাত সন্তান-সন্তুতির মধ্যে হারুন প্রথম।

সমুদ্রের তীর সংলগ্ন ও জলকদর খাল দ্বারা বেষ্টিত প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্যে বিরাজিত পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামে তাঁর শৈশব অতিবাহিত হয়েছিল। পঞ্চম শ্রেনীতে বৃত্তি পেয়ে প্রকৃতির আরেক নৈসর্গিক দৃশ্যে ঘেরা চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কৃতিত্বের সাথে ১৯৯৩ সালে এসএসসি এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯৯৫ সালে এইচএসসি পাশ করেন। 

তিনি কোলকাতা রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০০ ও ২০০২ সালে কৃতিত্বের সাথে বাংলা অনার্স ও এম.এ পাস করেন এবং ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'আলাউদ্দিন আল আজাদের ছোট গল্পে নিম্নবর্গ' বিষয়ে এম.ফিল ডিগ্রী লাভ করেন। 

বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের পি-এইচ.ডি গবেষক এবং পশ্চিম বাঁশখালী গন্ডামারা রহমানীয়া ফাযিল মাদরাসার বাংলা প্রভাষক। শিক্ষকতা ও গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য চর্চা সমান তালেই চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে উপন্যাস ছাড়াও বেশ কিছু কবিতা লিখেছেন তিনি।

সম্প্রতি তাঁর লেখা 'সমুদ্রের ডাক' উপন্যাসটিতে গ্রাম্য প্রেমের হাল্কা আমেজ থাকলেও লেখক বেশিরভাগ জোর দিয়েছেন বাঁশখালীর উপকূলীয় মানুষের প্রাত্যাহিক জীবনাচরণ। উঠে এসেছে এখানকার ভৌগলিক পরিবেশ, মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না এবং বৈরী পরিবেশের সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার বাস্তব চিত্র। হাজারো কষ্টের মধ্যেও যে এই সমুদ্র আর উপকূলের মায়া হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত, সেটা লেখক তুলে ধরেছেন খুব সাবলিল ভাষায়।

নিজের জন্মভুমিকে ফুটিয়ে তোলা এই উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে বলাকা প্রকাশন। এবারের অমর একুশে বইমেলায় চট্টগ্রামের বলাকা প্রকাশনের স্টলে পাওয়া যাবে এই উপন্যাসটি। তাছাড়া বাঁশখালী উপজেলার পৌরসদরস্ত সরকারী আলাওল কলেজ গেইট সংলগ্ন স্টুডেন্টস লাইব্রেরী ও আনোয়ার ট্রেডার্স এন্ড লাইব্রেরীতেও তাঁর উপন্যাসটি পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য, এটা লেখকের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস।

লেখক উপন্যাসের বিষয়ে বলেন, 'উপন্যাসে উপকূলীয় মানুষের জীবনচিত্র তুলে ধরেছি। বইটিতে উপকূলীয় মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম-ভালোবাসা, আবেগ অনুভূতির বাস্তবভিত্তিক চিত্র তুলে ধরেছি। আশা করি বইটি পাঠক সমাজে সাড়া পাবে।'

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নুরুল আমিন জানান, "বাঁশখালীর সমুদ্রতীরবর্তী মানুষের জীবন-উপখ্যান বাস্তবতার নিরিখে তিনি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। ভূমিহীন দিনমজুর সোলতানের এগারো স্ত্রীর একচল্লিশ সন্তানের বিরাট বহর কোন কাল্পনিক ঘটনা নয়। লেখক জানিয়েছেন এটি তাঁর বাস্তব ঘটনার অনু-গল্প। আধা সমান্ত পরিবেশে নায়ক তোরাপ ও নায়িকা জেনির জীবন সংগ্রাম ও উন্নত প্রেম-সাধনার উজ্জ্বল চিত্র পাঠককে মোহিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। লেখক একাধারে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক এবং পি-এইচ.ডি গবেষক। আমি তাঁর উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।"
⇘সংবাদদাতা: শিব্বির আহমদ রানা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top