জেনে নিন ব্যাটম্যান সিনেমার অজানা কিছু তথ্য

S M Ashraful Azom
0
জেনে নিন ব্যাটম্যান সিনেমার অজানা কিছু তথ্য
সেবা নিউজ ডেস্ক: বর্তমান জামানায় মুভির বাজারে সবচাইতে বড় নাম সুপারহিরো মুভি। এক সময় এসব সুপারহিরো মুভি বা সিরিজকে হাস্যকর ভাবা হলেও, ২০০০ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পেতে শুরু করে সুপারহিরো মুভিগুলো। আর ২০০৮ সালে মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স  চালু হবার পর থেকে তো সুপারহিরো মুভি বানানোর ধুম পড়ে যায়।

তুমুলভাবে ব্যবসাসফল এবং সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত এ সব মুভি তৈরির ক্ষেত্রে অন্যতম পথিকৃৎ ধরা হয় ১৯৮৯ সালের টিম বার্টন পরিচালিত ব্যাটম্যান মুভিটিকে। হাস্যকর একটি টিভি সিরিজের জন্যে ব্যাটম্যান চরিত্রটি যখন সবার কাছে হাসির পাত্র তখন বার্টনের বানানো অত্যন্ত সিরিয়াস ঘরানার মুভিটি ব্যাটম্যানকে তার হারানো সম্মান ফিরে পেতে সাহায্য করে।

ব্যাটম্যান মুভিটি তৈরি করার যে কাহিনী, সেটি কোনো মুভির কাহিনী থেকে কম চমকপ্রদ নয়। গত ১৯ জুন মুভিটি মুক্তির ২৯ বছর পূর্তি হলো। চলুন জেনে নেয়া যাক মুভিটি তৈরির পেছনের দারুন কিছু গল্প।

দশ বছরের চেষ্টা

ছবির স্বত্ব পাবার জন্য প্রযোজক মাইকেল উসলান বহু তদবির করেন। অবশেষের ১৯৭৯ সালে মুভি তৈরির স্বত্ব পান। এরপর শুরু হয় আরেক সংগ্রাম। কোনো নামকরা স্টুডিওকে ছবিটি প্রযোজনার জন্যে রাজি করানো। কলম্বিয়া পিকচার্স থেকে শুরু করে ইউনিভার্সাল পিকচার্স, কেউই রাজি হচ্ছিল না।

অবশেষে ওয়ার্নার ব্রাদার্স রাজি হলো। ততদিনে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের ব্যানারেই তৈরি হয় ব্যাটম্যান । সেই থেকে আজ পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া প্রতিটি ব্যাটম্যান মুভির সাথে কোনো না কোনোভাবে মাইকেল উসলানের নাম জড়িয়ে আছে।

পেঙ্গুইন ও রবিন

উসলান ছবির স্বত্ব হাতে পাওয়া মাত্রই চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্ব দেন কিংবদন্তি চিত্রনাট্যকার টম মেকঞ্জিকে। ১৯৭৮ সালের সুপারম্যান মুভিতেও কাজ করেছিলেন তিনি। মেকেঞ্জির চিত্রনাট্যে ছবির মূল ভিলেন জোকার এর সঙ্গে ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী অসওয়াল্ড কবলপট যে পেঙ্গুইন নামে সবার কাছে পরিচিত।

এছাড়াও মুভির শেষ ভাগে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা ছিল ব্যাটম্যানের সহকারী রবিনের সাথে। পরে এসব চিন্তা বাদ দেওয়া হয়। যদিও সিরিজের পরের মুভি ব্যাটম্যান রিটার্নস মুভির প্রধান ভিলেন হিসেবে পেঙ্গুইনকে দেখা যায়।

প্রথম পছন্দ বার্টন ছিলেন না

ওয়ার্নার ব্রাদার্স দায়িত্ব নেবার পর থেকে পরিচালকের খোঁজে নেমে পড়ে। অনেক নামীদামি পরিচালককেই তারা রাজি করানোর চেষ্টা করেছে। প্রথমেই চেষ্টা করা হয় গ্রেমলিনস মুভির পরিচালক জো দান্তেকে রাজি করানোর।

তিনি রাজি না হলে চোখ যায় ঘোস্টবাস্টার্স পরিচালক আইভান রেইটম্যানের দিকে। তাকেও যখন পাওয়া গেল না তখন বহু পথ পেরিয়ে টিম বার্টনকে বসানো হয় পরিচালকের চেয়ারে।

কে হবেন ব্যাটম্যান?

ব্যাটম্যানের চরিত্রে অভিনয় করবেন কে? এ নিয়ে শুরু হয় আরেক খোঁজাখুঁজি। সে সময়কার অনেক নামীদামি তারকাকেই বলে দেখা হয়। সেসব তারকাদের মধ্যে আছেন মেল গিবসন, বিল মারি, কেভিন কস্টনার, উইলেম ডেফো, টম সেলেক, হ্যারিসন ফোর্ড, চার্লি শিন, রে লিয়োটা এবং পিয়ার্স ব্রসনান।

কিন্তু তারা কেউই চরিত্রটি নিতে চাননি। পরে এই চরিত্রের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত মাইকেল কিটন যখন তারকা খ্যাতি পেয়ে যান, তখন অনেকেই আফসোস করতে থাকেন।

কিটন প্রেমী বার্টন

আশির দশকে মাইকেল কিটন পরিচিত ছিলেন মিঃ মম, নাইট শিফটের মত কমেডি মুভিগুলোর বদৌলতে। পরিচালক বার্টন যখন ব্যাটম্যান চরিত্রের জন্যে কিটনের নাম সুপারিশ করেন, প্রযোজক উলসান ভাবেন যে, আর্টন তার সঙ্গে মজা করছেন। যদিও বার্টন এর আগে বিটলজুস মুভিতে কিটনকে নিয়ে কাজ করেছেন।

এ কারণে তিনি ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। বার্টন ভেবেছিলেন সুপরিচিত কোনো অ্যাকশন তারকা যদি বাদুড়ের পোশাকে অপরাধীদের শায়েস্তা করতে বের হন, সেটি হবে অত্যন্ত্য হাস্যকর। এজন্যই অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত কিটনকেই ব্যাটম্যান বানানোর সিদ্ধান্ত নেন বার্টন।

শুরুর দিকে বার্টন পরিচালিত ১৯৮৯ সালের ব্যাটম্যান এবং ১৯৯২ সালের ব্যাটম্যান রিটার্নস মুভিতে ব্যাটম্যানের সহকারী, বিস্ময় বালক রবিনের উপস্থিতির কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবে রুপ নেয়নি।

শুরুর দিকের অনেক চিত্রনাট্যে রবিনের উল্লেখ পাওয়া গেছে। এই চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল বেভারলি হিলস খ্যাত অভিনেতা এডি মার্ফির। আশির দশকে এডি মার্ফির জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গস্পর্শী।

বিটলজুসের সাফল্য

টিম বার্টন যে প্রযোজকদের প্রথম পছন্দ ছিল না তা শুরুতেই বলা হয়েছে। পি উইস বিগ অ্যাডভেঞ্চার মুভিটিতে বার্টনের কাজ দেখে ওয়ার্নার ব্রাদার্স প্রথম বার্টনের প্রতি আগ্রহ দেখায়।

কিন্তু বার্টন নিজে মনে করেন তার নিয়োগ প্রাপ্তির পেছনে বিটলজুস মুভিটির সাফল্যের বিশাল অবদান রয়েছে। তার মতে,

“বিটলজুস কেমন করে সেটা দেখার জন্যে তারা (ওয়ার্নার ব্রাদার্স) অপেক্ষা করছিল। বিটলজুস সফল না হলে, তারা ব্যাটম্যান আমার হাতে দিত না। এটা তারা কখনো স্বীকার করবে না। কিন্তু এটাই সত্য।”

ড্যানি এলফম্যানের চাকরি

বরখাস্ত হবার ভয়ে ছিলেন মুভিটির সুরকার গীতিকার ড্যানি এলফম্যান। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই সুরকার, আশির দশকের শেষ দিকে একে বারেই অপরিচিত মুখ ছিলেন। বড় কোনো মুভিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রযোজকরাও তার উপর ভরসা করতে পারছিলেন না।

যদিও বার্টনের সঙ্গে পি উইস বিগ অ্যাডভেঞ্চার মুভিতে কাজ করেছিলেন তিনি। বার্টনের আগ্রহেই মুভির একজন প্রযোজক জন পিটার্স, এলফম্যানের সুর করা সঙ্গীতটি শুনে দেখেন। শোনার পর তার অবস্থা বর্ণনা করেছেন এলফম্যান,

“জন লাফ দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। এরপর যেন পুরো রুম জুড়ে সে নেচে বেড়াচ্ছিল।”

⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top