সেবা ডেস্ক: পহেলা বৈশাখ, পবিত্র শবে বরাত ও ঈদুল ফিতরের মতো উৎসব সামনে রেখে টাঙ্গাইলের হাট-বাজারগুলো এখন গরম। বাঙালীর সর্বজনীন প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে শো-রুম ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী দোকানগুলোতে শুরু হয়েছে কেনাকাটা।
পবিত্র শবে-বরাত ও ঈদ কেন্দ্রিক অর্থনীতির বিশাল কর্মযজ্ঞও এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। ঈদের পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লীসহ বিভিন্ন কারখানায়ও তৈরি হচ্ছে ঈদের পোশাকসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী।
শুধু পহেলা বৈশাখে কোটি টাকার ব্যবসা বাণিজ্যের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে বাজারে নগদ টাকার প্রবাহ বেড়ে গেছে। পহেলা বৈশাখের উৎসব ভাতা এর মধ্যে পেয়ে গেছেন সরকারী-বেসরকারী চাকরিজীবীরা। উৎসবকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি আরও গতিশীল হয়ে উঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের উৎসবে নতুন পোশাকের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি থাকে। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইল শহরের হীরা মার্কেট, টাঙ্গাইল প্লাজা, হাসান কলেজ মার্কেট, সমবায় মার্কেট, মসজিদ মার্কেট, আলী কমপ্লেক্র, আকুরটুকুর কাজী নজরুল ইসলাম সড়কে অবস্থিত বিভিন্ন ব্যান্ডের শো-রুমগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বৈশাখী পোশাক কিনতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য শহরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতেও বৈশাখী পোশাক বিক্রি শুরু হয়েছে।
লাল সাদা আর হলুদ রঙে ছেয়ে গেছে শহরের বড় বড় শোরুম, আউটলেট এবং মার্কেটগুলোর দোকানপাট। এই উৎসব ঘিরে বাহারি পোশাক নিয়ে প্রস্তুত দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো। ব্লক, বুটিক ও হ্যান্ড পেইন্টের শাড়ি ছাড়াও মিলছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সালোয়ার কামিজ থেকে শুরু করে ছোটদের পোশাক। আছে পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে সাজসজ্জার নানা অনুষঙ্গও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারীভাবে পহেলা বৈশাখের উৎসব ভাতা দেয়ার পর থেকে গত কয়েক বছর ধরে সারাদেশে বৈশাখ কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের আকার বড় হচ্ছে। এবার সরকারী কর্মচারীরা প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকার বৈশাখী ভাতা তুলবেন। এছাড়া বেসরকারী অনেক প্রতিষ্ঠানে বৈশাখী উৎসব ভাতা দেয়া শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর তথ্য মতে, টাঙ্গাইল জেলায় বৈশাখী উৎসবে এবার কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। খাবার ও অন্যান্য কেনাকাটায় কোটি টাকা ব্যয় হবে।
এছাড়া ভোগ্যপণ্যে আরও লেনদেন হবে কোটি টাকার ওপরে। তথ্য মতে, বছরে যেসব কেনাকাটা হয় তার ১০ শতাংশ হয়ে থাকে পহেলা বৈশাখে। দুই ঈদে মিলে ৫০ শতাংশ হয়। বাকিটা সারাবছর। বৈশাখে শাড়ি, পাঞ্জাবি এবং ফতুয়া বেশি বিক্রি হয়।
ব্যবসায়ীরা বিক্রি বাড়াতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পণ্যের ওপর ছাড় দিচ্ছেন। টাঙ্গাইল প্লাজা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন রং ও বাহারি ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। রয়েছে মেয়েদের বাঙালিয়ানা সাজের গলার মালা, দুল, ব্রেসলেট, চুড়ি ও কারুকাজের হাতব্যাগও।
ছেলেদের পোশাকে রয়েছে বিভিন্ন রঙের পাঞ্জাবি, লুঙ্গি ও গামছা। টাঙ্গাইল প্লাজার স্টাইল শোরুমের মালিক স্বপন সাহা টিনিউজকে জানান, বৈশাখ উপলক্ষে তাদের বিক্রি বেড়েছে। এছাড়া শো-রুমের বেশিরভাগ পোশাক বৈশাখ কেন্দ্রিক হওয়ায় ক্রেতারা কেনাকাটা বেশি করছেন। তিনি বলেন, তাদের ঈদের প্রস্তুতিও রয়েছে। এ কারণে দম ফেলার সময় নেই তাদের।
এছাড়া পহেলা বৈশাখে হালখাতা করবেন ব্যবসায়ীরা। হালখাতায় ক্রেতাদের মিষ্টি-নিমকি খাওয়ান তারা। বর্তমানে হালখাতা উৎসব রং হারালেও মিষ্টি খাওয়ানোর প্রচলন আছে। ফলে বৈশাখে মিষ্টির দোকানের ব্যবসা চার থেকে পাঁচগুণ বেড়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, টাঙ্গাইল শহরের হীরা মার্কেট, টাঙ্গাইল প্লাজা, হাসান কলেজ মার্কেট, সমবায় মার্কেট, মসজিদ মার্কেট, আলী কমপ্লেক্য্র, আকুরটুকুর কাজী নজরুল ইসলাম সড়কের শো-রুমসহ সর্বত্র বৈশাখী পোশাকের ছড়াছড়ি। পোশাকের পাশাপাশি এই উৎসবে বিক্রি হবে মাটির বাসন, মাটির গহনা থেকে সোনার গহনা। এছাড়া মুরালি, চিরা, দই ও পোলাওয়ের চাল ও মাংসের চাহিদা রয়েছে।
গেঞ্জি ফতুয়া থেকে শাড়ি এবং বাঁশের বাঁশি থেকে স্টিল আলমারি, খাট বিছানার চাদর থেকে পর্দা ও ফ্লোর কার্পেট সব বিক্রি হবে এই উৎসবে। বিক্রি হবে টিভি ও ফ্রিজ। তাই সব পণ্যের দোকানে এখন ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই ভিড় সার্বজনীন।
জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সব শ্রেণীর ক্রেতা দোকানে দোকানে নতুন পণ্যের খোঁজ করছেন। বিক্রি বাড়াতে ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক্স ও পোশাকের দোকানে বিশেষ লোভনীয় ছাড় দেয়া হয়েছে। বাড়ছে কেনাকাটা।
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।