পবিত্র কোরআনে সমকামিতার হুশিয়ারী বাণী

S M Ashraful Azom
0
পবিত্র কোরআনে সমকামিতার হুশিয়ারী বাণী
সেবা ডেস্ক: সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক পবিত্র গ্রন্থ কোরআন মজিদে কয়েক জায়গায় হজরত লূত (আ.) এর জাতির অস্বাভাবিক যৌন বিকৃতির বিবরণ ও তার ভয়াবহ পরিণতির ঘটনা বর্ণনা করে সমকামিতার সুস্পষ্ট হুশিয়ারী বাণী ঘোষণা করেছেন।
فَلَمَّا جَاء أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّن سِجِّيلٍ مَّنضُودٍ

‘অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল, তখন আমি উক্ত জনপদকে উপরকে নীচে করে দিলাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম।’

مُّسَوَّمَةً عِندَ رَبِّكَ وَمَا هِيَ مِنَ الظَّالِمِينَ بِبَعِيدٍ

‘যার প্রতিটি তোমার পালনকর্তার নিকট চিহ্নিত ছিল। আর সেই পাপিষ্ঠদের থেকে খুব দূরেও নয়।’ (সূরা হূদ,আয়াত-৮২,৮৩)

অর্থাৎ রোদের তাপে দগ্ধ মৃত্তিকা যা রুপান্তরিত হয়েছিল পাকা প্রস্তর খন্ডের ন্যায়। আর তা এমন ভাবে চিহ্নিত ছিল যে, দেখামাত্র বুঝা যেত যে, এটা দুনিয়ার পাথর নয়। আল্লাহর নির্দেশে এমন হয়েছিল।

রাসূল (সা.) বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে যে বিষয়টির আশংকা করি,তা হচ্ছে কওমে লূতের দুষ্কর্ম। অতঃপর তিনি এই দুষ্কর্মে লিপ্তদেরকে এই বলে তিনবার অভিসম্পাত করেন, ‘কওমে লূতের দুষ্কর্ম যে করবে তার ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত। (ইবনেমাজাহ, তিরমিযী, আবু দাউদ)

রাসূল (সা.) আরো বলেন, যাদেরকে লূত জাতির অনুরুপ অশ্লীল কার্যে লিপ্ত দেখ, তাদের দু‘জনকে হত্যা কর। (আবু দাউদ,তিরমিযী)

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘লূত জাতির দুষ্কর্মে লিপ্ত ব্যক্তিকে বস্তির সর্বাপেক্ষা উঁচু বাড়ীর ছাদ থেকে নিচে ফেলে দিয়ে তার ওপর উপর্যুপরি পাথর বর্ষণ করেছিলেন।

মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত যে, সমকামিতা হারাম ও জঘন্যতম কবীরা গুনাহ। আল্লাহ যা হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

أَتَأْتُونَ الذُّكْرَانَ مِنَ الْعَالَمِينَ

‘সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কী পুরূষদের সঙ্গে কুকর্ম কর?’

وَتَذَرُونَ مَا خَلَقَ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِنْ أَزْوَاجِكُم بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ عَادُونَ

‘এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে যে স্ত্রীগনকে সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’ (সূরা আশ-শো’আরা, আয়াত ১৬৫,১৬৬)

অন্যত্র আল্লাহ হজরত লূত (আ.) সম্পর্কে বলেন,

وَلُوطًا آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْقَرْيَةِ الَّتِي كَانَت تَّعْمَلُ الْخَبَائِثَ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمَ سَوْءٍ فَاسِقِينَ

‘এবং আমি লূতকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান এবং তাঁকে ওই জনপদ থেকে উদ্ধার করেছিলাম, যারা নোংরা কাজে লিপ্ত ছিল। তারা মন্দ ও নাফরমান সম্প্রদায় ছিল।’
(সূরা আম্বিয়া, আয়াত-৭৪)

তাদের সেই জনপদের নাম‘সাদুম’ ছিল। উক্ত জনপদের অধিবাসীরা যেসব নোংরা কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল, পবিত্র কোরআনে স্বয়ং আল্লাহ পাক তা উল্লেখ করেছেন, তারা পুরাষদের সঙ্গে পেছন দিক দিয়ে যৌন মিলন করত এবং জনসমক্ষে বিভিন্ন পাপাচারের সঙ্গে স্ব-স্ব অপকর্মের কথাও প্রচার করত।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কওমে লূত দশটি কুকর্মে অব্যস্ত ছিল।’ সেগুলো হচ্ছে:
১. মেয়েরা পুরুষদেরমত ছোট এবং পুরুষরা মেয়েদের মত বড় চুল রাখত, ২. স্বতরপ্রকাশ করা, ৩. মাটির গুলাল চালানো, ৪. কংকর নিক্ষেপ করা, ৫ .উড়ন্ত কবুতরের বাজি খেলা, ৬. আঙ্গুল মুখে দিয়ে শিস দেয়া, ৭. পায়ের হাঁটু বের করা বা গিরা ফোটানো, ৮. অহংকারে সঙ্গে টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলানো, ৯, মদ পানকরা, ১০.সমকামিতে লিপ্ত হওয়া।

এ উম্মতের মধ্যে আরো একটি অতিরিক্ত দুষ্কর্ম দেখা দেবে। নারীর সঙ্গে নারীর পারস্পরিক যৌন সম্ভোগ। (আবু দাউদ,তিরমিযী)

রাসূল (সা.) বলেন, যৌন আবেগের সঙ্গে নারীদের পরস্পর আলিঙ্গনও ব্যভিচারের পর্যায়ভুক্ত।(তিবরানী)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘চার শ্রেণীর মানুষ সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর গযবে নিপতিত থাকে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? তিনি বললেন-১.নারীর বেশভূষা গ্রহণকারী পুরুষ, ২.পুরুষের বেশভূষাগ্রহণকারীনারী, ৩.পশুর সাথে যৌন সঙ্গমকারী, ৪.সমকামি (কওমেলূত (আ.) এর আচরণকারী)। (তিবরানী, বায়হাকি)

তিনি আরো বলেন, যখন কোনো পুরুষে অপর পুরুষের সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়, তখন আল্লাহর আরশ এই ভয়ে কাপতে থাকে, যে আল্লাহর গযবে আকাশ হয়ত যমীনের ওপর ভেঙ্গে পড়বে। তখন ফেরেস্তাগণ আল্লাহর ক্রোধ উপশম না হওয়া পর্যন্ত আকাশের প্রান্তসীমা দৃঢ়ভাবে ধরে রাখেন এবং সূরাইখলাস পাঠ করতে থাকেন।

হজরত আল্লামা জালাল উদ্দীন  সূয়তী ও অনুরুপ আরো একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। নবী (সা.) বলেছেন, সাত প্রকার মানুষের উপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করেন। কিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে বলবেন ‘তোমরা জাহান্নামীদের সঙ্গে প্রবেশ কর। ১. সমকামী, ২. যার সঙ্গে সমকামি করা হয়, ৩. পশুর সঙ্গে সঙ্গমকারী ৪. মা ও তার মেয়েকে এক সঙ্গে বিয়েকারী, ৫.বোনের সঙ্গে ব্যভিচারি, ৬.কন্যার সঙ্গে ব্যভিচারি, ৭.হস্ত মৈথুনকারী। তবে তওবা করলে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।

বর্ণিত আছে যে, কিয়ামতের দিন একদল লোক এমনভাবে উঠবে যে, ব্যভিচারের কারণে তাদের অন্তঃসত্তা থাকবে, দুনিয়াতে যারা হস্তমৈথুন করত।

হাদীস: লূত জাতি কবুতর উড়ানো প্রতিযোগিতা, মোরগলড়াই, বিবস্ত্র অবস্থায় গোসলখানায় প্রবেশ করা, মাপে কম-বেশি করার মত কুঅভ্যাসে অভ্যস্ত ছিল।
যারা এগুলো করবে তাদরে ধ্বংস অবধারিত।

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- যে ব্যক্তি কবুতর খেলায় লিপ্ত হয়, মৃত্যুর পূর্বে তার দারিদ্র্য অবধারিত। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সমকামি ব্যক্তি তওবা না করে মারা গেলে কবরে সে শূকরের আকৃতি ধারণ। (ইবনে জাওজি)

রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি পুরুষ বা মহিলিাদের বাহ্য দ্বার দিয়ে সঙ্গম করবে, আল্লাহ পাক তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না। (তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনেহিব্বান)

হজরত আব সা‘ইদ সা’লুকি (রা.) বলেন, ‘এ উম্মতের মধ্যে এমন এক ধরনের লোক দেখা দেবে, যাদেরকে লূতি বলা হবে। তারা হবে তিন প্রকার: কেউ কিশেরদের দেখে তৃপ্তি লাভ করবে, কেউ তাদের সঙ্গে মেলামেশা করে তৃপ্তিলাভ করবে, আবার কেউ তাদরে সঙ্গে সমকামে লিপ্ত হবে। লালসার দৃষ্টিতে কোনো নারী কিংবা কিশোর এর প্রতি দৃষ্টি পাতও যিনার পর্যায়ভুক্ত।

রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, কামভাবের দৃষ্টি চোখের ব্যভিচার, সে মনোভাবে কথোপকথন জিহ্বার ব্যভিচার। কামভাবে স্পর্শ হাতের করা ব্যভিচার, সে সংকল্পে হেঁটে যাওয়া পায়ের ব্যভিচার, অশ্লীল কথাবার্তা শ্রবণ কানের ব্যভিচার, অন্তরে জাগ্রত হওয়া এমন কামনা-বাসনা মনের ব্যভিচার, গুপ্তাঙ্গ- যা বাস্তবে রুপ দান দমন করে। (বুখারি,মুসলিম)

এ কারণে আল্লাহর অলিগণ কিশোরদের দিকে তাকানো, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা এবং তাদের সাহচর্য পরিহার করে চলতেন ।

হজরত হাসান বিন যাকওয়ান বসরি (রহ.) বলেন, কিশোর ছেলেদের সাহচর্যে থেকো না। কারণ তাদের সৌন্দর্য কিশোরিদের অনুরুপ হয়ে থাকে । এ কারণে
মহিলাদের চেয়ে এদের দিয়েই বিপদের আশংকা বেশি ।
জনৈক তায়েবী বলেন, একজন মুক্তাকী লোকের কোনো হিংস্র প্রাণীর সঙ্গে অবস্থান করায় আমি ততটা শষ্কিত নই, যতটা সুদর্শন কিশরদের সাহচর্যে। বর্ণিত আছে, কেউ যেন কনো কিশোরদের সঙ্গে একত্রে না ঘুমায় । কোনো কোনো আলেম মহিলাদের বিধানের উপর কিয়াস করে মত ব্যক্ত করেন-কোনো নির্জন স্থানে কিশোরদের সঙ্গে একাকী থাকা জায়েয নেই।

রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন কোনো পুরুষ কোনো নারীর সঙ্গে নির্জন স্থানে অবস্থান করে, তখন শয়তান তৃতীয় সত্তা রুপে উপস্থিত হয় । (তিরমিযী)

হজরত সুফিয়ান সত্তরী (রহ.) একবার গোসলখানায় প্রবেশ করলেন । আতঃপর এক সুশ্রীবালক সেখানে প্রবেশ করলে তিনি বললেন, আমার কাছ থেকে একে সরিয়ে নাও। কারণ আমি প্রতিটি নারীর সঙ্গে একটি শয়তান প্রতক্ষ্য করি, আর একজন সুদর্শন বালকের সঙ্গে দশটিরও বেশি শয়তান দেখি ।

এক ব্যক্তি সুন্দর এক কিশোরকে নিয়ে হজরত ইমাম আহমাদ (রা.) এর কাছে আসলে তিনি বলেন, আপনি কী করেছেন? অর্থাত তাকে কেন সঙ্গে নিয়ে এসেছেন? সে বলল, এ তো আমার ভাগ্নে। ইমাম সাহেব বললেন, আর কখনো তাকে নিয়ে আমার কাছে আসবেন না। যাদের কাছে আপনি এবং সে পরিচিত নন, তারা আপনার ব্যাপারে মনে মনে খারাপ ধারণা করতে পারে।

বর্ণিতআছে- একবার আব্দুর কায়েস গোত্রের এক প্রতিনিধি দল যখন রাসূল (সা.) এর সমীপে উপস্থিত হয়েছিলো,তাদের সঙ্গে যখন দাঁড়ি গোফহীন এক কিশোরও ছিলো। তিনি উক্ত কিশোরকে নিজের পেছন দিকে বসালেন এবং বললেন- চোখের দৃষ্টির ফলেই হজরত দাউদ (আ.) ফেৎনায় জরিয়েছিলেন । (দায়লামী)

বলা হয়ে থাকে দৃষ্টিই জিনার তৃপ্তি। কেন না রাসূল (সা.) বলেন, দৃষ্টি হচ্ছে শয়তানের তীর সমূহের মধ্য হতে একটি বিষাক্ত তীর। যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য তা থেকে বেঁচে থাকবে তাকে আল্লাহ পাক ইবাদতে এমন তৃপ্তি দান করবেন যা কিয়ামত পর্যন্ত অনুভব হবে।

⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top