
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি: আজ ২৪ এপ্রিল। ২০১৩ সনের এই দিনে ঘটেছিল সাভারস্থ রানা প্লাজা ধসে পড়ার ঘটনা। ভয়াবহ এ ট্রাজেডির ৬ বছর পূর্ণ হল আজ। ওই দুর্ঘটনায় হতাহত গার্মেন্টস শ্রমিকদের পরিবারের ৪৮ সন্তানের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ির উপজেলার হোসেনপুরস্থ ‘অরকা হোম’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও মাতৃস্নেহে বেড়ে উঠছে এসব সন্তানেরা।
হতাহতের ৪৮ সন্তানদের মধ্যে গাইবান্ধার ১০, পাবনার ৭, জামালপুরের ১, রংপুরের ৮, সিরাজগঞ্জের ২, দিনাজপুরের ২ ও সাভারে ১৮ জন। এর মধ্যে ২৯ জন ছেলে এবং ২০ জন মেয়ে প্রতিষ্ঠানটির যাবতীয় সুবিধা ভোগ করে আসছে।
ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট এসোসিয়েশন এর সদস্যরা ২০১৪ সালে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ‘অরকা হোম’ নামের এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।
অরকা হোমের মাঠেই রয়েছে হোসেনপুর মুসলিম একাডেমি। এখানেই ওইসব সন্তানেরা লেখাপড়া করে আসছে। তাদের জন্য মানসম্মত আবাসিক ব্যবস্থাসহ ক্যাডেট কোচিং, প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠগ্রহন, বিনোদন, ক্রীড়া, পাঠাগার, সূর্য্যমূখী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে।
রানা প্লাজা আহত শ্রমিতি গীতারাণীর ছেলে শংকর কুমার রায়। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা গ্রামের স্বপন চন্দ্র রায় এর ছেলে। অরকা হোমে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। সে বলে, আমার মা রানা প্লাজার ৪র্থ তলার পোষাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে মা। সরকারিভাবে ৩ লাখ টাকা সহযোগি পাওয়া হয়েছিল। যা দিয়ে কোনমতে চলছে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর সহযোগিতায় অরকা হোমে থেকে লেখা পড়া করছি। উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে প্রকৌশলী হতে চাই।
নিহত নার্গিস বেগমের ছেলে আল-আমিন মিয়া। গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার কিশামত শেরপুর গ্রামের তোজাম্মেল হক তুহিন এর ছেলে। অরকা হোমে নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। সে জানায়, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় মা মারা যাবার পর এখানেই আমার ঠাঁই হয়েছে। সরকারিভাবে ৯ লাখ টাকা পেয়েছি। পিতা তুহিন মিয়া পেয়েছেন ৭ লাখ। বাবার টাকা বিভিন্ন কাজে বিনিয়োগ করে। আমার টাকা এখনো ব্যাংক থেকে উঠানো হয়নি। অরকা হোম এর সহায়তা লেখা পড়ে করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
হোসনেপুর মুসলিম একাডেমি ও অরকা হোমের সভাপতি মো. জাহিদুল হক বলেন, রানা প্লাজার ট্রাজেডির হতাহত পরিবারের যেসকল সন্তান এখানে রয়েছে তাদের লেখাপড়া, থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ অরকা হোম থেকে বহন করা হচ্ছে। সেই সাথে বিজিএমইএ নামের সংগঠনটি প্রতি মাসে কিছুটা আর্থিক সহযোগিতা করে আসছে। গাইবান্ধা জেলাসহ বিভিন্ন জেলার হতাহতের ছেলে মেয়েরা এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এদের কারো বাবা, আবার কারো মা এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। এমন কি অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছে। এসব হতাহত পরিবারের সন্তানদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হবে। তিনি আরো বলেন, ওইসব সন্তানদের ব্যয়ভার বহনে আমারা সরকারি কোনো সহযোগিতা প্রত্যাশা করি না।
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।