হার্ট ব্লকের লক্ষণ ও কারণ

S M Ashraful Azom
0
হার্ট ব্লকের লক্ষণ ও কারণ
সেবা ডেস্ক: চর্বিজাতীয় পদার্থ জমা হতে হতে রক্তনালীর মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার পথকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ (ব্লক) করে দেওয়াকেই হার্টে ব্লক বলা হয়ে থাকে।

হার্ট ব্লকের লক্ষণ :



  • হৃদপিণ্ডে বেশি পরিমাণে ব্লক থাকলে বুকে ব্যথা হয়। আস্তে আস্তে ব্যথা বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ে। হাঁটার সময়, সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় বুকে ব্যথা হয়, থামলে ব্যথা কমে যায়।
  • দম নিতে ও ছাড়তে কষ্ট হয়।
  • বুকে জ্বালাপোড়া ও ধড়ফড় করে।
  • গলা, কপাল ও মাথা ঘাম হওয়া।
  • নিচের দিকে হেলে কিছু করার ও একটু ভারী কিছু বহনের সময় কষ্ট হয়।
  • খাবার হজম না হওয়ার মতো অস্বস্তি লাগে। 


হার্ট ব্লকের কারণ:


রক্তনালীতে চর্বিজাতীয় বস্তু খুব ধীরে ধীরে জমা হতে থাকে। তাই হার্ট ব্লক খুবই ধীরগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। যেমন ধরুন একটি ব্লক ১০% থেকে বৃদ্ধি পেতে পেতে ৮০%-এ পৌঁছাতে ব্যক্তিভেদে ১০ থেকে ৩০/৪০ বছর সময় লাগতে পারে। তাই বলা হয়ে থাকে, ব্যক্তি হার্ট ব্লক নিয়ে দীর্ঘসময় সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। হার্ট ব্লকের সংখ্যা এবং পারসেন্টেজ একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় না পৌঁছানো পর্যন্ত রোগী কোনোরূপ শারীরিক অসুস্থতা বোধ করেন না। হার্ট ব্লকের কারণে রোগীর হার্টের রক্ত সরবরাহের স্বল্পতা দেখা দেয়। হার্ট ব্লকের (%) পার্সেন্টেজ বৃদ্ধি পেলে ব্লকের ভাটির দিকের অংশে রক্ত সরবরাহ কমে যায়।

ফলশ্রুতিতে প্রাথমিক পর্যায়ে পরিশ্রম বা টেনশনকালীন সময়ে রক্ত সরবরাহের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় এ সময়ে রোগী বুকে চাপ, ব্যথা, বুক ধড়ফড় বা সহজে হয়রান বা পেরেশান হয়ে পড়েন। তবে দিনে দিনে রোগী ঘনঘন এসব অসুবিধায় পতিত হয়ে থাকেন। এভাবে বেশ কিছু বছর চলে যেতে পারে। দিনে দিনে ব্লকের তীব্রতা (পার্সেন্টেজ) বৃদ্ধি পেয়ে অসুস্থতাকে আরও জটিল করে তোলে। হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট স্ট্রোক এক ধরনের মারাত্মক অসুস্থতা। যার ফলশ্রুতিতে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে এবং চিকিৎসা খুবই দ্রুততার সঙ্গে নিতে হয়।

প্রায় সময়ই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। বহুবিধ কারণে হার্ট ব্লকের চর্বিজাতীয় বস্তুতে রক্তক্ষরণ ঘটতে পারে। তাতে প্রদাহ দেখা দিতে পারে অথবা চর্বি জাতীয় বস্তুর ওপর রক্ত জমাট বেঁধে রক্তনালীতে রক্তপ্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বা মারাত্মক পর্যায়ে বন্ধ করে দিতে পারে।

 যার ফলে ওই ব্লকের ভাটির দিকের অংশে রক্ত সরবরাহ মারাত্মক পর্যায়ে কমে যাওয়ায় হার্টের ওই অংশের মাংসপেশি অক্সিজেন ও খাদ্য সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হয়ে অকেজো হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে হার্টের পাম্পিং পাওয়ার কমে যায়। হার্ট শারীরিক চাহিদা মাফিক পাম্প করে রক্ত সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। রক্ত সরবরাহ মারাত্মক পর্যায়ে কমে গিয়ে রোগীর মৃত্যুও ঘটে।

হাসপাতালে হার্ট অ্যাটাক নিয়ে যত রোগী ভর্তি হন তার মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক রোগীর আগে কোনো ধরনের হার্টের অসুস্থতা আছে তা তিনি কখনো জানতেন না বা বুঝতে পারেননি। বাকি অর্ধেক সংখ্যক রোগী আগে থেকেই হার্টের অসুস্থতায় ভুগতে ছিল বলে রোগীর জানা ছিল। এসব কিছু বিবেচনায় এনে এটা বলা যায় যে, হার্ট অ্যাটাক এক ধরনের দুর্ঘটনা।

অনেককে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় মানে বহু বছর থেকে হার্টের অসুস্থতায় ভুগছেন কিন্তু কখনই হার্ট অ্যাটাক হয়নি। তবে এ কথা সত্য যে, হার্ট ব্লক ছাড়া খুব কমই হার্ট অ্যাটাক ঘটে থাকে অর্থাৎ যাদের হার্ট অ্যাটাক ঘটে থাকে তাদের প্রায় সবারই কোনো না কোনো পর্যায়ের হার্ট ব্লক থাকে, হতে পারে ব্লক প্রাথমিক পর্যায়ের বা জটিল পর্যায়ের। বর্তমানে হার্ট ব্লকে উপযুক্ত মেডিসিন গ্রহণের মাধ্যমে সুচিকিৎসা গ্রহণ করা যায়। সেই সঙ্গে রোগীকে অবশ্যই নিরাপদ মাত্রায় কায়িক শ্রমে অভ্যস্ত হতে হবে এবং হৃদবান্ধব খাদ্যাভ্যাস অনুশীলন করতে হবে।

জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে হার্ট ব্লকের কারণে যাদের হার্ট ফেইলুর দেখা দিয়েছে অথবা হার্ট ব্লক অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের রিং, বাইপাস অথবা ইসিপি থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন হয়। তবে মনে রাখতে হবে, এসব পদ্ধতি গ্রহণ করেও রোগী সুস্থ থাকতে পারবে না, যদি না জীবনধারা পরিবর্তন না করে উপযুক্ত মেডিসিন গ্রহণ না করে এবং হৃদবান্ধব খাদ্যাভ্যাস অনুশীলন না করে।

⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক
ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top