রোহিঙ্গাদের ফিরত নিতে মিয়ানমারের ‘সন্ত্রাসী’ অজুহাত

S M Ashraful Azom
0
রোহিঙ্গাদের ফিরত নিতে মিয়ানমারের ‘সন্ত্রাসী’ অজুহাত
সেবা ডেস্ক: প্রথম থেকেই বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরত নিতে নানা অজুহাত দেখিয়ে আসছে মিয়ানমার। দেশটিতে সামরিক অভিযান ও ‘জাতিগত নিধনের’ মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এই জনগোষ্ঠিটির সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে এবার নতুন অজুহাত দেখানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, প্রত্যাবর্তনের জন্য যে তালিকা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে তার মধ্যে ১৬০ জনের বেশি রাখাইনে ‘সহিংসতার সঙ্গে জড়িত’।

তাদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে ফের রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গড়িমসি শুরু করেছে মিয়ানমার। গত বৃহস্পতিবার দেশটির সংসদের উচ্চকক্ষকে দেশটির সমাজ কল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক উপমন্ত্রী ইউ সোয়ে অং বলেন, ‘বাংলাদেশের দেয়া তালিকা থেকে আমরা ১৬ হাজার ৮৯৮ জন মিয়ানমারে বসবাস করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছি। তবে ৮ হাজার ৩৪০ জনের ব্যাপারে কোনও প্রমাণ নেই। এছাড়া তালিকায় ১৬৮ জন সন্ত্রাসী রয়েছে।’

এর আগে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা দেয়া হয়। ওই তালিকা গত ৩০ মে পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে বলেও জানান ইউ সোয়ে অং।

বাংলাদেশে ‘সন্ত্রাসীদের’ ফিরিয়ে দিতে চাইছে- এমন দাবিও করা করেছেন ইউ সোয়ে অং। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘সন্ত্রাসীদের’ ফিরিয়ে নিতে সতর্ক থাকবে তারা। মিয়ানমারের গণমাধ্যম ‘মিয়ানমার টাইমস’-এর খবরে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে যদি কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে তবে সেটা বাংলাদেশের কোনও বিষয় নয়। তারা বাংলাদেশের নাগরিকও নয়। তারা অপরাধী হলে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে বিচার করতে পারে দেশটির সরকার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে এটা কোনও অজুহাত নয়।

এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিয়ে মিয়ানমারের এমন অপপ্রচার এই নতুন নয়। এর আগেও একই কাজ করেছে দেশটির সরকার। চলতি বছরের ১৯ মে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত ২৫তম ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে অসহযোগিতার অভিযোগ আনেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ কিউ টিন্ত সোয়ে।

সম্মেলনে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা নিজ ইচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে গিয়েছে। এর আগে গত বছরের ১৫ এপ্রিল মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাবি করে, পাঁচ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবার (১ পুরুষ, ২ নারী, একজন তরুণী ও এক তরুণ) স্বেচ্ছায় তাদের দেশে ফিরে গিয়েছেন। অথচ এই দুটি দাবিই ছিল সম্পূর্ণ প্রোপাগান্ডা।

পাঁচজন ফিরে যাওয়ার যে দাবি করা হয়েছে, তদন্তে দেখা গেছে, তারা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বহুল পরিচিত এজেন্ট। রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে- এমন প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবেই তাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়, বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আর থাকার মতো অবস্থা না থাকায় ২০১৮ সালের ২৭ মে ৫৮ রোহিঙ্গা মুসলিম তাদের দেশে ফিরে গিয়েছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে দেখা যায়, নিজেদের বাড়িঘর ও সম্পত্তির খোঁজ নিতে বাংলাদেশ থেকে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দুই দফায় তারা রাখাইনে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের ৪ বছর কারাদণ্ড দেয়।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি অনুসারে, ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর ২০ হিন্দু রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরে গিয়েছে, যাদের রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরসা অপহরণ করে বাংলাদেশের একটি শরণার্থী শিবিরে নিয়ে এসেছিল। সরেজমিনে তদন্তে দেখা যায়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের সমর্থন পেতে ওইসব হিন্দু রোহিঙ্গাকে গোপনে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কোনও ধরনের যোগাযোগ করেনি। একাজে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করে কক্সবাজারের উখিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু নেতা।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top