সৌদি আরবসহ পাঁচ দেশে রফতানি হচ্ছে টাঙ্গাইলের মধু

S M Ashraful Azom
0
সৌদি আরবসহ পাঁচ দেশে রফতানি হচ্ছে টাঙ্গাইলের মধু
সেবা ডেস্ক: সৌদি আরবসহ এবার বিশ্বের পাঁচ দেশে মধু রফতানি হওয়ায় টাঙ্গাইলের মৌচাষীরা বেজায় খুশি। বাজারজাত ও বিপনণ সমস্যা কেটে যাওয়ায় বেশ দাম পাচ্ছে মৌচাষীরা।

টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলে প্রচুর মধু পাওয়া যেত বলে নাম হয়েছে মধুপুর। গত শতাব্দীর আশির দশকে মধুপুরে মৌবাক্সে মধু চাষ শুরু হয়। বেসরকারি সংস্থা এপি প্রথম শুরু করে। পরে বিসিক ও গ্রামীণ ব্যাংক মৌচাষে ক্ষুদ্র ঋণ, প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়।

নব্বয়ের দশকে মধুপুরে মৌচাষে বিল্পব ঘটায় মৌচাষ উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন। তিনি মৌচাষ নিয়ে নিরন্তর গবেষণা এবং তৃণমূল পর্যায়ে মৌপালনকে জনপ্রিয় করে তোলেন।

ওই সংস্থা বিগত দেড় দশকে চার হাজার বেকারদের মৌচাষে প্রশিক্ষণ দেন। ফলে মৌচাষ মধুপুর ছাড়িয়ে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি, গোপালপুর, ঘাটাইল, ভূয়াপুর, সখিপুর, জামালপুরের সরিষাবাড়ি, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ভালুকা ও ফুলবাড়িয়া উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে।

সিরোনিকার পরিবর্তে ভারত থেকে আনা হয় হাইব্রিড মেলিফেরা জাতের মৌমাছি। এতে মৌচাষে বিল্পব ঘটে। বর্তমানে একটি উপজেলায় প্রায় ৮শ টন মধু উৎপাদন হয় বলে জানায় মউস বা মৌচাষ উন্নয়ন সংস্থা।

বাংলাদেশ মৌচাষ কল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং ভূয়াপুর উপজেলার তেরিল্লা গ্রামের মৌচাষী দুলাল হোসেন জানান, তার খামারে ২৪০টি মৌবাক্স রয়েছে। এবার সরিষা মৌসুমে প্রায় ৬০ মণ মধু উৎপাদন করেছেন। জানুয়ারিতে সরিষা থেকে মধু সংগ্রহের সুযোগ বন্ধ হলে মৌকলোনি নিয়ে যান মাদারীপুরের শিবপুর উপজেলার দনিয়া ও কালাশচ মাঠে।

ফেব্রুয়ারি-মার্চে শিবচর থেকে কলোনি মাইগ্রেশন হয় দিনাজপুরের লিচু বাগান সমৃদ্ধ এলাকায়। মে মাসে পুনরায় মাইগ্রেশন হয় সুন্দর বন এলাকায়। সর্বশেষ জুনে পঞ্চগড় জেলার তিল ফসল হতে মধু সংগ্রহের পর কলোনি নিয়ে ভূয়াপুরে ফিরেন।

এভাবে নভেম্বর হতে জুন পর্যন্ত টানা ৮ মাস দুলাল হোসেনের মতো বড় বড় খামারীরা দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মাঠেময়দানে ঘুরে মধু সংগ্রহ করেন। দুলাল হোসেনের মত ভূয়াপুর উপজেলার আশরাফ ও ঝুমুর, গোপালপুর উপজেলার আরিফ, রিপন ও মনির, মধুপুর উপজেলার মোতালেব, রফিকুল ও জাহিদের মতো মৌপালকরা মধু উৎপাদন ও বিক্রি করে এখন কোটিপতি।

মৌচাষ উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন জানান, ভারতীয় কোম্পানি ‘ডাবর’ গত বছর টাঙ্গাইল থেকে প্রায় দেড়শ টন মধু কিনে নেয়। এবার সারা দেশ থেকে তারা তিনশ টন মধু কিনবে। তবে সিংহভাগই টাঙ্গাইল ও এর আশপাশের উপজেলায় উৎপাদিত মধু। সৌদি আরব ছাড়াও ভারত, জাপান, কানাডা ও জর্ডানে দেশিবিদেশী বায়ারদের মাধ্যমে মধু রফতানি হচ্ছে। এ ভাবে রফতানি অব্যাহত থাকলে টাঙ্গাইলের মধু বাজারজাত ও বিপনণে কোনো সমস্যা থাকবেনা বলে জানান মউসের কর্মকর্তারা।

মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ি গ্রামের মৌপালক খোরশেদ আলম বাচ্চু জানান, গতবার ভারতীয় বহুজাতিক কোম্পানি ডাবর প্রতি মন মধুর দাম দিয়েছিল ৫ হাজার টাকা। এবারো একই দাম দিচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য দেশ দাম কিছুটা বেশি দিচ্ছে। তিনি মধুর দাম আরো বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরেন।

মউসের পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন বলেন, ওষুধ কোম্পানিসহ দেশের কোনো কোনো বড় ক্রেতা বিদেশ থেকে মধু আমদানি করায় দেশি মধু কদর পাচ্ছেনা। তিনি লাভজনক মধু প্রক্রিয়াজাতকরণে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top