শিশুদের খিঁচুনি হওয়ার কারণ, লক্ষণ, করণীয় ও সাবধানতা!

S M Ashraful Azom
0
শিশুদের খিঁচুনি হওয়ার কারণ, লক্ষণ, করণীয় ও সাবধানতা!
সেবা ডেস্ক: আমাদের দেশে অনেক শিশুদের মধ্যেই খিঁচুনি জনিত সমস্যা দেখা যায়। খিঁচুনি মূলত ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়সের শিশুদের হয়ে থাকে। এদের জ্বর ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলেই অনেক সময় খিঁচুনি শুরু হয়, যা ফেব্রাইল কনভালশন নামে পরিচিত। কিছু কিছু রোগের কারণে জ্বরের মাত্রা বেশি হলে খিঁচুনি শুরু হয়। এসব রোগের মধ্যে তীব্র কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, কান দিয়ে পুঁজ পড়া, প্রস্রাবের নালিতে ইনফেকশন অন্যতম। বাচ্চাদের এই খিঁচুনি দেখতে খুবই অস্বস্তিকর এবং কষ্টকর হলেও এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এতে বাচ্চার কোন ক্ষতি হবে না। ফেব্রাইল কনভালশন-এ ব্রেইন ড্যামেজ হয় না এবং এ থেকে মৃগী রোগ হওয়ারও ঝুঁকি নেই। তারপরও সাবধান থাকা উচিত। চলুন জেনে নেয়া যাক এর লক্ষণ, করণীয় ও কিছু সাবধানতা-

খিঁচুনির লক্ষণসমূহ

১. অতি উচ্চ তাপমাত্রার জ্বরের সঙ্গে বাচ্চা জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে।

২. চোখ পিটপিট করা, এক দৃষ্টিতে তাকানো অথবা চোখ উল্টে যাওয়া।

৩. শরীর, বিশেষ করে হাত ও পা কাঁপা।

৪. প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারানো।

৫. মাংসপেশি শক্ত হয়ে যেতে পারে বা কাপতে পারে।

৬. বাচ্চার মুখ লাল বা নীল হয়ে যেতে পারে।

৭. খিঁচুনি কয়েক মিনিট স্থায়ী হতে পারে।

৮. খিঁচুনি থেমে গেলে বাচ্চার জ্ঞান ফিরে আসবে, কিন্তু জ্ঞান ফিরলেও বাচ্চা ঘুম ঘুম ভাব বা খিটমিটে হয়ে থাকতে পারে।

খিঁচুনি হলে করণীয়  

সাধারণত এ ধরনের খিঁচুনি তখনই হয় যখন বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা হুট করে বেড়ে যায়। অনেক সময় অভিভাবক খিঁচুনি না ওঠা পর্যন্ত টেরই পান না যে, বাচ্চার জ্বর এসেছে। একবার খিঁচুনি শুরু হয়ে গেলে তা থামানোর জন্য আসলে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুই করার থাকে না। তবে শিশুকে নিরাপদ রাখতে কিছু কিছু কাজ করতে পারেন। যেমন-

১. সবচেয়ে জরুরী নিজেরা শান্ত থাকা এবং শান্ত রাখা। বাচ্চাকে শান্ত রাখুন। বেশির ভাগ খিঁচুনি পাঁচ মিনিটের কম স্থায়ী হয়।

২. বাচ্চাকে নরম কোন কিছুর উপর একপাশে কাত করে রাখুন কিংবা উপুড় করে রাখুন। এতে মুখ থেকে লালা বেরিয়ে যেতে পারে।

৩. বাচ্চাকে এমন নিরাপদ স্থানে রাখুন, যাতে সে পড়ে না যায় কিংবা তার শরীরে অন্য কোনো বস্তুর আঘাত না লাগে।

৪. বাচ্চার নড়াচড়ার ধরন খেয়াল করুন এবং খিঁচুনি কতক্ষণ স্থায়ী থাকে, সেটা খেয়াল করুন।

৫. খিঁচুনির সময় বাচ্চার শরীর গরম থাকলে তার কাপড়চোপড় খুলে ফেলুন এবং তাকে ঠান্ডা রাখুন।

৬. বাচ্চার নাড়াচাড়া ভালোমত খেয়াল করুন, যাতে পরবর্তীতে চিকিৎসকের কাছে গেলে ভালোভাবে বর্ননা দিতে পারেন।

৭. খিঁচুনির পর বাচ্চাকে বিশ্রামে রাখুন।

খিঁচুনির সময় যে কাজগুলো ভুলেও করবেন না
১. বাচ্চার দুই দাঁতের পাটির মাঝখানে জোর করে আঙ্গুল, চামচ বা অন্য কোনো বস্তু ঢোকাবেন না।

২. বাচ্চাকে ধরার চেষ্টা করবেন না কিংবা তার কাঁপা বন্ধ করার চেষ্টা করবেন না।

৩. খিঁচুনির সময় বাচ্চাকে কোনো কিছু পান করাবেন না কিংবা কোনো ওষুধ দেবেন না।

৪. খিঁচুনি থামানোর জন্য বাচ্চাকে বেঁধে রাখার চেষ্টা করবেন না।

৫. খিঁচুনি থামানোর জন্য বা শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা কমানোর জন্য বাচ্চাকে গোসল করাবেন না।


খিঁচুনি হলে চিকিৎসকের কাছে কখন যাবেন?

১. বাচ্চার শরীর নীল হয়ে গেলে কিংবা তার খিঁচুনি পাঁচ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন।

২. খিঁচুনি থেমে গেলেও বাচ্চার জ্ঞান না ফিরলে।

৩. খিঁচুনি থেমে যাবার পর বাচ্চা অনেক বেশি অসুস্থ আর দূর্বল দেখালে।

৪. বাচ্চার খিঁচুনির পর সব সময় ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

৫. যে সমস্ত বাচ্চাদের দীর্ঘক্ষন যাবত খিঁচুনি হয় তাদেরকে নিবীর পর্যবেক্ষনের জন্য হাসপাতালে নেয়াটাই ভালো। তাছারাও জ্বরটা কেনো হচ্ছে সেই কারণটাও খুঁজে বের করা দরকার।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top