
সেবা ডেস্ক: এবার ঘর থেকে ঘুষের টাকা উদ্ধার করে পুলিশের ডিআইজি (প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রবিবার ঢাকায় ঘর তল্লাশি করে নগদ ৮০ লাখ টাকা পাওয়ার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। দুদকের ঢাকা-১ কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। আজ সোমবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
রাজধানীর ধানমন্ডির নর্থ রোডের (ভূতের গলি) ২৭-২৮১ নম্বর বাসার বি/৬ নম্বর ফ্ল্যাটে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান শুরু করে গতকাল রবিবার দুপুর ২টার দিকে।
জানা গেছে, ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার পর সিলেট কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন) পার্থের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু হয়। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে ডিআইজি (প্রিজন) এর দায়িত্বে ছিলেন। চট্টগ্রাম কারাগারে থাকাকালে তিনি ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফের নেতৃত্বে একটি টিম রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার ধানমণ্ডির ভুতের গলিতে তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে নগদ ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফ জানান, প্রায় ২ ঘণ্টা পার্থর স্ত্রী চিকিৎসক রতন মনি সাহা নানা টালবাহানা করেন। প্রথমে মুঠোফোনে বলেন, তিনি বাসায় নেই। মিরপুরে আছেন। সেখান থেকে ফিরতে ২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে। অথচ সে সময় তিনি ফ্ল্যাটেই ছিলেন।
অভিযানে ছিলেন দুদকের এমন এক কর্মকর্তা জানান, দুদক টিম বিকল্পভাবে ফ্ল্যাটে প্রবেশের কথা বললে রতন মনি সাহা নিজেই দরজা খুলে দেন। তবে ততক্ষণে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে পার্থর আয় করা ৮০ লাখ টাকা ২টি ব্যাগে ভরে পাশের বাসার ছাদে ফেলে দেন তিনি। পরে তাকে নিয়েই ওই টাকা উদ্ধার করা হয়।
দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফ জানান, ৪ হাজার ৬০০ টাকা বেতনে চাকুরি শুরু করেছিলেন পার্থ। বর্তমানে সব মিলিয়ে তিনি পান ৬০ হাজার টাকার মতো। তার বাসা থেকে যে টাকা উদ্ধার হয়েছে তা অবশ্যই ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা বলে দাবি করেন দুদক পরিচালক।
তবে পার্থ দাবি করেন, ৮০ লাখ টাকা তার বৈধ আয় থেকে অর্জিত। এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা শাশুড়ি দিয়েছেন। বাকি ৫০ লাখ টাকা সারাজীবনের জমানো টাকা।
তল্লাশির সময় দুদকের অনুসন্ধান টিমের সঙ্গে কমিশনের পুলিশ ইউনিটের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তার বাসায় ঘুষের টাকা রয়েছে-এমন তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হয়।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম কারাগারে দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য মিলেছে। যা বৈধ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ঘুষের টাকা রাখার অভিযোগে মামলার পর তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলাদা মামলা করা হবে।
এর আগে কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রবিবার চট্টগ্রামের সাবেক সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।।
উল্লেখ্য অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত আলাদা দু’টি মামলায় ডিআইজ মিজান বর্তমানে কারাগারে আছেন।
অর্থ ও মাদকসহ আটক জেলার সোহেল রানা বলেছিলেন যে কথা : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও মাদকসহ এক জেলারকে আটক করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর দুপুরে ময়মনসিংহগামী একটি ট্রেন থেকে তাঁকে আটক করে রেলওয়ে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম কারাগারে কর্মরত ওই জেলারের নাম সোহেল রানা বিশ্বাস। তিনি চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহগামী আন্তনগর বিজয় এক্সপ্রেসে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন।
ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আঃ মজিদ জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ ভৈরব স্টেশনে অবস্থান নেয়। বিজয় এক্সপ্রেস ১২টা ৪০ মিনিটে স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। জেলার সোহেল রানা ট্রেনের কেবিনে ছিলেন। সেখানে তল্লাশির একপর্যায়ে তাঁর দু’টি ব্যাগ থেকে থেকে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপট (এফডিআর), ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের ৫টি চেক বই, একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ১২ বোতল ফেন্সিডিল জব্দ করা হয়। পরে সোহেল রানাকে আটক করে ভৈরব রেলওয়ে থানায় আনা হয়।
পুলিশ হেফাজতে সোহেল রানা জব্দ হওয়া টাকা বহন করার কথা পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে স্বীকার করেন। টাকার উৎস ও গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সোহেল রানা বলেন, পুরো টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় পাওয়া। ওই টাকার মধ্যে ৫ লাখ ছিল তাঁর। ট্রেনে ওঠার আগে বন্দীদের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একজন ঠিকাদার তাঁকে দিয়ে যান। বাকি টাকা চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি পার্থ কুমার বণিক ও চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকের। সোহেল রানা বলেন, ১ নভেম্বর ঢাকার কাশিমপুর কারাগারে জেলারদের নিয়ে সম্মেলন হবে। ওই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি তিন দিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। ওই দুই কর্মকর্তা চট্টগ্রামেই থাকেন। কিন্তু সর্বশেষ দুই মাসের মাসোহারা তাঁর কাছ থেকে চট্টগ্রামে গ্রহণ না করে ঢাকায় নিয়ে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন। তাঁদের নির্দেশমতো তিনি ওই টাকা বহন করছিলেন।
পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পেছনে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার হাত রয়েছে বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন সোহেল রানা। কারণ হিসেবে বলেন, ঘুষের টাকার লেনদেন নিয়ে কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। ব্যাগে পাওয়া মাদকদ্রব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সোহেল বলেন, সম্ভবত সেই ঠিকাদার টাকার সঙ্গে ব্যাগে ফেন্সিডিল ঢুকিয়ে রেখে যান। ষড়যন্ত্রে ওই ঠিকাদারও অংশীদার থাকতে পারেন বলে তাঁর ধারণা।
সোহেল রানা বলেন, তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের আর কে মিশন রোড। বাবার নাম জিন্নাত আলী বিশ্বাস। চাকুরির বয়স প্রায় ১৮ বছর। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি এক বছর নরসিংদী কারাগারে জেলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ওসি মজিদ জানান, ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এর মধ্যে ১ কোটি টাকা সোহেল রানার নামে। ১ কোটি আছে স্ত্রী হুসনে আরা পপির নামে। বাকি ৫০ লাখ করা আছে শ্যালক রাকিবুল হাসানের নামে প্রিমিয়ার ব্যাংকে। চেকে দেওয়া ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ছিল সোহেল রানার নামে। চেকের টাকা উত্তোলনের তারিখ ছিল চলতি মাসের ২৮ তারিখ। জব্দ চেক বইগুলো সোনালী, প্রিমিয়ার, সাউথইস্ট, মার্কেন্টাইল ও ব্র্যাক ব্যাংকের।
তবে চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি পার্থ কুমার বণিক তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, সোহেল রানা মাদকাসক্ত। তাঁর ব্যাপারে ইতিপূর্বে কারা মহাপরিদর্শকের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনিও সোহেল সম্পর্কে একই কথা বলেন।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।