ধুনটে নিহত জঙ্গি উজ্জলের পরিবারে হাহাকার

S M Ashraful Azom
0
ধুনটে নিহত জঙ্গি উজ্জলের পরিবারে হাহাকার
রফিকুল আলম,ধুনট প্রতিনিধি: তিন বছর আগে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে নিহত জঙ্গি বগুড়ায় ধুনট উপজেলার শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলকে স্মরণ করে এখনও হাহাকার করছেন তার স্বজনরা।

পরিবারে উজ্জ্বল ছিল সবার ছোট। ২০০৫ সালে স্থানীয় গোসাইবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৭ সালে গোঁসাইবাড়ি ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি ও ২০১১ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন উজ্জ্বল। এরপর বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হন।

উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নে যমুনা নদীর পাড়ের গ্রাম চল্লিশ পাড়ায় থাকেন নিহত জঙ্গি শফিকুল ইসলম উজ্জ্বলের পরিবার। সোমবার সরেজমিন তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সবাই চুপচাপ। কারো মুখে কথা নেই। উজ্জলের মা-বাবা ঘরের বারান্দায় বসে ছেলের স্মৃতি চারণ করছেন। মা-বাবার চোখমুখে কষ্টের ছাপ। উজ্জলের কথা বলতেই বাবার গাল বেয়ে চোখের পানি পড়তে থাকে।

এসময় উজ্জ্বলের বাবা বদিউজ্জামান গামছায় চোখ মুছতে মুছতে বলেন, প্রতি বছর এই দিনটি আসলে ছেলের কথা মনে পড়ে। কীভাবে জঙ্গি হয়েছিল তা কখনও বুঝতে পারিনি। তার আচার আচরণ ও কথাবার্তায় কিছুই বোঝা যায়নি। তবে এসব কাজে কারও যাওয়া ঠিক না। ছেলে তো তাই মনটি কাঁদে।

আজ সারাদিন কোন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। বাড়িতে বসেও মন টিকছে না। ছেলেটির লাশ যদি পেতাম অন্তত আজ কবরটা জিয়ারত করতে পারতাম। আর কোনো বাবা-মার সন্তান যেন এ পথে না আসে। আমার ছেলেকে যারা এ পথে এনেছে আল্লাহ যেন তাদের বিচার করে।

উজ্জলের মা আছিয়া বেগম বলেন, রাক্ষুসী যমুনার পেটে সব জমি হারানোর পরও অনেক কষ্টে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছিলাম। তাবলীগ জামায়াতের চিল্লায় যাওয়ার নামে ছেলে জঙ্গি হবে, তা কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি। জানতে পারলে তাকে কখনও যেতে দিতাম না। ছেলের এ ঘটনায় সবার কাছে ক্ষমা চাই। পারলে তাকে ক্ষমা করে দেবেন।

উজ্জ্বলের বাবার আগের বাড়ি ছিল বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের কচুগাড়ী গ্রামে। যমুনার ভাঙনে বাড়ি নদীগর্ভে বাড়ি বিলীন হয়ে তারা চল্লিশপাড়ায় নতুন বাড়ি করেন। বদিউজ্জামান একজন কৃষক। তার তিন ছেলে। বড় ছেলে আশাদুল ইসলাম শ্যালো মেশিন মেরামতের কাজ করেন। মেজ ছেলে রফিকুল ইসলাম ঢাকায় একটি পোশাক কারখানার কর্মচারী। সবার ছোট ছিলেন শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।

উজ্জ্বলের ভাবি শাপলা বলেন, বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তির পর সাভার এলাকায় জামগড়ায় আমাদের বাসায় থেকে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছিল উজ্জ্বল। পরীক্ষার সময় বগুড়ায় এসে পরীক্ষা দিত। মাস্টার্স শেষ পরীক্ষার আগেই ঘটনাটি ঘটল।

উজ্জল একা থাকতে ভালবাসত। তার আচরণে কখনও হিংসার মনোভাব প্রকাশ পায়নি। উজ্জ্বল যে এতবড় জঘন্য কাজ করবে, ভাবতেও পারিনি। ঘটনার কয়েকদিন আগে গ্রামের বাড়ি এসেছিলেন। পরে মা আছিয়া বেগম ও বাবা বদিউজ্জামানকে তাবলীগের চিল্লায় যাওয়ার কথা বলে বিদায় নেন বলে জানান শাপলা।

উল্লেখ্য গত ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে কূটনীতিক পাড়া গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের ঠেকাতে গিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। রাতভর উৎকণ্ঠার পর ২ জুলাই সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে সঙ্কটের অভিযান ঘটে। হামলায় অংশ নেওয়া নব্য জেএমবির পাঁচ জঙ্গি ওই অভিযানে নিহত হয়। এরমধ্যে শফিকুল ইসলাম উজ্জল একজন।


 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top