ইসলামপুরে ঈদ আনন্দ ম্লান

S M Ashraful Azom
0
Eid Anand fills in Islampur
সেবা ডেস্ক: দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদুল আজহার আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু সে আমেজ ছড়ায়নি বানভাসি মানুষের কাছে। নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বানভাসি মানুষরা।

উপজেলার বিভিন্ন উঁচু সড়ক-ব্রিজে আশ্রয় নেয়া এসব অসহায় মানুষরা পাচ্ছেন না কোনো ত্রাণ। সেখানে ঈদের নতুন কাপড় তো অনেক দূরের বিষয়। সরকারের ত্রাণ তহবিল তালিকায় নাম থাকলেও ত্রাণ পাচ্ছেন না তারা।

সরেজমিন সূত্র বলছে, বন্যার পানি নেমে গেলেও ভাঙা-বিধ্বস্ত ঘরে ফিরতে পারেনি ইসলামপুরের অনেক পরিবার। এসব পরিবারে প্রতি বছর ঈদে ছেলে-মেয়ের জন্য কেনা হতো নতুন কাপড়। কোরবানিও দেয়া হতো সাধ্যমতো। কিন্তু এবার ভয়াবহ বন্যায় তাদের সব শেষ হয়ে গেছে। এবারের বন্যায় পুরো জামালপুর জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি, উলিয়া, গুঠাইল, কুলকান্দি, পশ্চিম বলিয়াদহ, পূর্ব বামনা, দেলিরপাড় এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার বানভাসি মানুষ। পাশাপাশি গরু, ছাগল, ভেড়াসহ অনেকটা গাদাগাদি করে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে বাস করছেন।

এছাড়াও রেল লাইনের পাশে, বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানেও আশ্রয় নেন অনেকে। পানি কমে যাওয়ায় যাদের ঘরবাড়ি ভালো ছিল তাদের মধ্যে অনেকে নিজেদের বাড়িতে ফিরেছেন। তবে বাড়িঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হওয়ায় অনেকেই এখনো রাস্তা বা ব্রিজেই দিন কাটাচ্ছেন। তাই ঈদ নিয়ে তাদের নেই কোনো প্রস্তুতি।

বানভাসি আব্দুস সালাম জানান, যমুনা নদীর মাঝে অবস্থিত এ দ্বীপচরে অনেক পরিবার বসবাস করত। বন্যা ও ভাঙনে বাড়িঘর বিধ্বস্ত, পাশাপাশি অব্যাহত ভাঙনের কবল থেকে বাঁচতে এ বাঁধে অনেকেই আশ্রয় নেয়।

জেলা কার্যালয় অধিদফতর সূত্র বলছে, জেলার সাতটি উপজেলার সর্বশেষ ৬২টি ইউপির আটটি পৌরসভার মধ্যে সাতটি বন্যা কবলিত হয়েছে। সারা জেলায় ২২ লাখ ৯২ হাজার ৬শ’ ৭৪ জন অধ্যাসিত  লোক সংখ্যার মধ্যে পাঁচ লাখ ৬২ হাজার ১শ’ ৮০টি পরিবারের রয়েছে। এরমধ্যে দুই লাখ ৫৬ হাজার ৫শ’ ৩০টি পরিবারের মোট ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৭শ’ ৯০ জন লোক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া সাত হাজার ২শ’ ৫০ টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৪৫ হাজার ৫শ’ ৮০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

১২ হাজার ৪৩টি নলকূপ এবং ৬১ হাজার ২৭টি কাঁচা শৌচাগার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ১০.৭৫ কি.মি. সম্পূর্ণ এবং ৬০.৫০ কি.মি. আংশিক পাকা রাস্তা এবং ১৭.২৫ কি.মি. সম্পূর্ণ এবং ২০০ কি.মি. আংশিক কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ২৮টি ব্রিজ ও কালভাটসহ প্রায় ২১ কি.মি. বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৬শ’ ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১শ’ ৬৫টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অপরদিকে জেলায় বীজতলা, আখ, পাট, ভুট্টা, কাঁচা সবজিসহ ২৪ হাজার ২শ’ ১০ হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়াও জেলায় ২২ হাজার ৪শ’ ৮৬টি পুকুরের মধ্যে বন্যা কবলিত হয়েছে ৮ হাজার ৪শ’ ২৫টি পুকুর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারও মৎস্য চাষিরা।

উলিয়া এলাকার যমুনার তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেয়া আছিয়া বেগম বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা কয়- আমরা না পাইলে তুঙ্গরে (তোমাদের) দিমু কুঠাই থ্যাইকা। এ কষ্টের মধ্যে আঙ্গর (আমাদের) আবার ঈদ!'

নোয়ারপাড়া ইউপির বানভাসি আব্দুর রহিম মণ্ডল ও জামাল শেখ জানান, প্রতিবছর নিজেরাই কোরবানি দিতাম। যমুনার ভাঙন আর বন্যায় এ বছর সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে। এবার ঈদে পরিবারের কারো জন্য কিছু কেনাকাটা তো দূরের কথা, মাংসের জন্যই অন্যের দিকে চেয়ে থাকতে হবে।
 
ইউএনও মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ স্থানীয় ও ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে। কোথায় কোনো ত্রাণের অভাব নেই।

ইসলামপুর-২ আসনের এমপি ফরিদুল হক খান দুলাল জানান, বন্যা শুরু হবার পর থেকেই বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি গ্রামাঞ্চলে তালিকা ভিত্তিক প্রস্তুত করে প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top