“ইলিপ চাই না খ্যাড় দ্যান”

S M Ashraful Azom
0
Ellip does not want to donate
রফিকুল আলম, ধুনট : আমাগ্যারে খ্যাবার দেয়ার আগে গরু-বাছুরের খাবার দিয়ে বাঁচান। বাড়িঘর পানিতে। ট্যাহা পয়সাও নেই। আমাগ্যারেই খ্যাবার সংকট, গরুকে কী খাওয়ামু। গরু পালছি লাভের আশায় হ্যেডারও গুড়েবালিতে পরিণত হতে বসেছে। তাই ইলিপের চাল চাই না গরুর জন্য খ্যাড় (খড়) দ্যান (দেন)। প্রশাসনের প্রতি দাবী রেখে কথাগুলো বলছিলেন বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বন্যাদূর্গত যমুনা নদীর বৈশাখী চরের ক্ষুদ্র খামারি আলতাব আলী। তার খামারে ৫টি গরু।

আলতাব আলী একা নয়, তার মতোই বন্যায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর চর এলাকার খামারিরা। খাদ্যের সংকটের কারণে একদিকে যেমন গরু-ছাগলকে নিয়মিত খাবার দেওয়া যাচ্ছে না, অপরদিকে শুকনো জায়গার অভাবে নিরাপদ স্থানে রাখারও জায়গা হচ্ছে না।

একই এলাকার রাধানগর চরের আবু তাহের বলেন, বাড়িতে বুকসমান পানি। উপায়ন্তর না দেখে বাঁধে ৫টি গরুসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। নিজেরা কোনমতে শাক-পাতা খেয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু গরুগুলোকে খেতে দিতে পারছি না। কোথাও কোন খালি মাঠ নেই, যেখানে নিয়ে গরুগুলোকে খাওয়াবো।

রোববার সরেজমিন বন্যা কবলিত চর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গবাদি পশু বিশেষ করে কোরবানির উপযুক্ত পশুগুলোর খাবার সংগ্রহের জন্য কৃষক এবং খামার মালিকদের মধ্যে রীতিমতো হাহাকার পড়ে গেছে। কোরবাণীর উপযুক্ত পশুগুলো নিয়ে কৃষক এবং খামার মালিকরা অন্ধকার দেখতে শুরু করেছেন। নিয়মিত খাবার দিতে না পারায় এরই মধ্যে গরু-ছাগলগুলোর ওজন কমতে শুরু করেছে। এভাবে চললে সেগুলোকে হাটে তুলে ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এই পরিস্থিতিতে যারা কোরবানির ঈদের জন্য গরু-ছাগল লালনপালন করেছেন তারা পড়েছেন চরম বিপাকে।

রাধানগর চরের হাবিবর রহমান বলেন, বাড়ির উপর হাটুসমান পানি। ৩টি গরু ও পরিবার পরিজন নিয়ে স্থানীয় বিদ্যালয়ের মাঠে আশ্রয় নিয়েছি। নিজেদের জন্য ত্রানের চাল, শুকনো খাবার পেয়েছি। কিন্ত গরুর খাদ্য হিসেবে কিছুই পাইনি। তাই চালের বদলে গরুর খাদ্য পেলে বেশী উপকার হতো। সরকারি কিংবা বেসরকারি ভাবে গরুর খাদ্যের দাবী জানান তিনি।

সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের হিন্দুকান্দি গ্রামের বেলাল হোসেন জানান, বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় গরুকে নিয়ে তিনি রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। কোরবানির হাটে বিক্রি করবেন বলে তিনি একটি ষাঁড় লালন-পালন করছিলেন। কিন্তু বাজারে ঘাস ও খড় না মেলায় গরুকে প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়মিত খাওয়াতে পারছেন না।

সারিয়াকান্দির চরপাড়ার চরের গোবিন্দ কুমার জানান, তাদের চর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কোথাও শুকনো নেই। মহিষগুলোকে খাওয়ানোর এক মুঠো ঘাসও নেই। তাই বাধ্য হয়ে ৫০টি মহিষের বাথান নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। তিনি গাবতলী উপজেলার অদ্দিরগোলা মাঠে অবস্থান করছেন। তবে যেসব মাঠে ফসল আছে সেখানে জমির মালিকরা মহিষ নিয়ে ভিড়তে দিচ্ছেন না। ফলে সবখানে মহিষগুলো খাবারও পাচ্ছে না।

প্রাণীসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বন্যায়  সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও  ধুনটের ৩২০টি খামারের ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৪ হাজার চারণ ভ‚মি প্লাবিত হয়েছে। এতে গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য ঘাসের যোগান বন্ধ হয়ে গেছে। খড় ও ভুষিসহ অন্যান্য পশুখাদ্য নষ্টের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন।  তিন উপজেলায় বাড়িঘর কিংবা খামারে ১ লাখ ১২ হাজার গরু, ৫৬ হাজার ছাগল, ২৫ হাজার ভেড়া এবং ১ হাজার মহিষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়মিত খাবার দিতে না পারলে গবাদিপশুর ওজন কমবে। কোরবানির পশুগুলোর ওজন কমলে কৃষক ও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সংকট মোকাবেলায় খামার মালিকদের বিকল্প নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গো-খাদ্যের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের তালিকা তৈরীর কাজ চলছে।


 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top