একজন জাতির জনক শেখ মুজিব

S M Ashraful Azom
0
Sheikh Mujib, the father of a nation
সেবা ডেস্ক: গত বছর নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় একটি শ্লোগান সকল স্থানে বেশ আলোচিত হয়েছিল- ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি ঘুরে দাঁড়াও তুমিই বাংলাদেশ’।

শ্লোগানটি স্বাধীনতার এত বছর পরে এসে প্রচার পেলেও প্রমাণ পেয়েছে বহু আগেই। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একাত্তরে যার ঘুরে দাঁড়ানোতে সৃষ্টি হয়েছিল একটি দেশ। একটি উপত্যকা। একটি স্বপ্নের ঠিকানা। শেখ মুজিবের মত এত বড় মাপের নেতা পৃথিবীর কোন দেশের বা জাতির আছে? আমাদের আছে। আছে বলেই আমাদের এত গর্ব। আছে বলেই আমরা আজ স্বাধীন। আছে বলেই আমরা আজ উড়তে পারি মুক্ত বিহঙ্গের মতো। বঙ্গবন্ধুর একান্ত বিশেষত্ব এই যে, তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় পরিপক্ষতা অর্জন করে তবেই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে সফল নেতৃত্ব দিতে পেরেছিলেন।পাকিস্তান আমলে তিনি যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভার একজন প্রভাবশালী মন্ত্রি ছিলেন। তখন তার কী-ই বা আর বয়স? মাত্র চৌত্রিশ বছর।  বঙ্গবন্ধুর মত দ্বিতীয় আরেক ক্যারিশমেটিক নেতা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে খুঁজে বের করা কঠিন। তার এক সম্মোহনী শক্তি এবং অনন্য বাগ্মীতা তাকে অন্যদের চেয়ে পৃথক করে রেখেছে।

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলতে গিয়ে কিউবার মহান বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। তার ব্যক্তিত্ব ও নির্ভিকতা হিমালয়ের মতো। এভাবেই তার মাধ্যমে আমি হিমালয়কে দেখেছি।’ কাস্ত্রে যথার্থই বলেছেন। কেবলমাত্র একটি হিমালয়ের অনঢ় অবস্থানেই স্বাধীনতা পেল নিরস্ত্র বাঙালি। একদল ট্রেনিংপ্রাপ্ত, নির্দয়, হিংস্র সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে খালি হাতে ঝাপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার পেছনে ছিল ওই হিমালয়। যিনি সমস্ত মোহ, স্বার্থ ত্যাগ করে শুধু একটি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। সেদিন তো বঙ্গবন্ধু ইচ্ছে করলেই পারতেন প্রাদেশিক প্রধান হতে। হতে পারতেন অনেক কিছুই। কিন্তু তিনি সেসব ভাবেননি। ১৯৭১ সনের সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমি এদেশের মানুষের মুক্তি চাই।’

ওই একটিমাত্র ভাষণই আমাদের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার জন্য যথেষ্ট হয়ে উঠেছিল। এই একটিমাত্র ভাষণই বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ঘর ছেড়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পাগল করে তুলে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাক-হানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারারুদ্ধ করে রাখে। বাঙ্গালী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সেদিন কারারুদ্ধ থেকেও মাথা নত করে নেন নি। তাকে গ্রেফতার করার আগেই সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান তিনি। ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করা হয়। যার ফল স্বরূপ আজকের বাংলাদেশ। মহান এ মানুষটিকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করে একদল বিপথগামী সেনা। এই কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেই থেমে থাকেনি; একে একে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল, মেজ ছেলে শেখ জামাল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামালকেও।

ঘাতকের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ছোট্ট শিশু রাসেলও। বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ আবু নাসেরকেও হত্যা করে ঘাতকরা। হত্যাকাণ্ডের শিকার হন আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি ও তার স্ত্রী বেগম আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, ছোট ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ।

সেই থেকেই বাঙালি জাতি বয়ে বেড়াচ্ছে বেদনাদায়ক স্মৃতি। চেষ্টা করা হচ্ছে শোককে শক্তিতে পরিণত করার। বিশ্বাস করি সেই শক্তিতেই আমরা একদিন বিশ্বমঞ্চে বাঙালি জাতি হিসাবে শির উঁচু করে দাঁড়াবো। বিশ্ব চিনবে শেখ মুজিবের বাংলাদেশ।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top