বার্মা সেনাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানালো জাতিসংঘ

S M Ashraful Azom
0
UN calls for sanctions against Burma troops
সেবা ডেস্ক: গত ৫ আগষ্ট সোমবার জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

এতে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানামার সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ শুরু করার এক সপ্তাহ পর সেনাপ্রধান এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যেতে সহায়তা করার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করতে স্থানীয় বিভিন্ন কোম্পানিকে আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে আয়োজিত বিনিয়োগ উৎসবে প্রায় ১৪ লাখ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা মিন অং লেই-  যা রোহিঙ্গা নিধনে সেনাবাহিনীর নৃশংস ছক প্রকাশ করে।

জাতিসংঘের তিন সদস্য বিশিষ্ট প্যানেল কর্তৃক প্রস্তুত ১১১ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে তাতমাডোর (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অর্থনৈতিক এবং অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানানো হয়।

গত বছর, এই প্যানেল কর্তৃক প্রস্তুত আরেকটি  প্রতিবেদনে মিন অং হেলিংসহ গণহত্যায় জড়িত অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করা হয়। যা ২০১৭ সালে ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল।

অন্যদিকে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, সশস্ত্র রোহিঙ্গা গ্রুপ কর্তৃক সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে রাখাইনে ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালানো হয়- যা আইন সঙ্গত।

এই প্যানেলের সদস্য, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মী ক্রিস্টফার সিডোতি’র বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায় জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনটি রাখাইনে’র মানচিত্রের চেয়ে সেনা কর্মকর্তাদের পকেটভারি করার কৌশলকে ইঙ্গিত করেছে। বলা হয়েছে, ১২০টির অধিক ব্যবসায়িক চক্রকে মিয়ানমার ইকোনোমিক হোল্ডিংস  লিমিটেড এবং মিয়ানমার ইকোনোমিক কর্পোরেশন নামে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত দুটি প্রতিষ্ঠানের আয়ত্তাধীন নির্মাণ শিল্প থেকে শুরু করে ওষুধ, পর্যটন শিল্প এবং খনি উত্তোলন প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হয়।

জাতিসংঘের অনুসন্ধানী মিশন আরো জানায়, ৫৯টি বিদেশি কোম্পানি সেনা-নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।

এর মধ্যে জাপান টোবাকো ইন্টারন্যাশনাল চুক্তিবদ্ধ হয় মিয়ানমার ইকোনোমিক কর্পোরেশনের সঙ্গে এবং বেলজিয়াম ভিত্তিক প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিউটেক চুক্তিবদ্ধ হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী পরিচালিত মাইটেল নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। যদিও এ ব্যাপারে জাপানি প্রতিষ্ঠানটি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। পক্ষান্তরে, বেলজিয়াম ভিত্তিক নিউটেকের মুখপাত্র তাদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে শিগগিরই প্রতিবাদ জানানোর অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

প্রতিবেদনে প্যানেলটি জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে ফার্মটির আন্তর্জাতিক আইনে আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

মিয়ানমারের জন্য বিকল্প নাম ব্যবহার করা, বার্মা ক্যাম্পেইন নামে ব্রিটেনে সংগঠিত প্রেসার গ্রুপ এর পরিচালক মার্ক ফারমানের বলেন, সামরিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার জন্য কোনো একক ব্যবস্থা না থাকায়, চাপ সৃষ্টি  করার মাধ্যম হিসেবে অর্থনীতিকে টার্গেট করা হয়।

সেনা কর্মকর্তা মিন অং হেলিং, যিনি ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সংগৃহীত অর্থের সিংহভাগ (প্রায় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) যোগান দিয়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে দাতা গোষ্ঠীর কাছ থেকে জাতীয়তাবাদী চেতনার দরুন অধিক লাভবান হন।  মিন অং হেলিং রোহিঙ্গাদেরকে বাঙালি অ্যাখ্যায়িত করে দাতাদের বলেন, ‘বাঙালি (রোহিঙ্গা) সমস্যাটি অনেক দিনের অসমাপ্ত কাজ ছিল।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কানবাজা (কেবিজেড) গ্রুপ ও ম্যাক্স মিয়ানমার নামে দেশটির দুটি বৃহত্তর অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান রাখাইনে সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বিনিয়োগ করেছিল; প্যানেল বলেছে সেই প্রাচীরটি মূলত রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরা প্রতিহত করতেই নির্মাণ করা হয়। কেবিজেড গ্রুপ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে যখন রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল, তখন ২.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সীমানা প্রাচীর নির্মাণের লক্ষ্যে এককালীন প্রদান করেন। একই সময়, ম্যাক্স মিয়ানমারের চেয়ারপারসন জ্যা জ্যা এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেন বলে জানা যায়।

এদিকে, অনুসন্ধানী মিশনটি তাদের প্রতিবেদনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে ইসরায়েল, রাশিয়া, চীন, ভারত, ইউক্রেন এবং অন্যান্য দেশের অস্ত্র-সরঞ্জাম সরবরাহকারী ১৪টি কোম্পানির ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে।

মিশনটি মিয়ানমারে অভিযুক্ত সেনাকর্মকর্তাদের বিচারের পাশপাশি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও সুপারিশ জানায়।

অন্যদিকে, ব্রিটেনে অবস্থানরত মিয়ানমারের পক্ষে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বার্মা ক্যাম্পেইন’র পরিচালক ফারমেনার এই রিপোর্টকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেন।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top