শ্রীবরদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

S M Ashraful Azom
0
শ্রীবরদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব
রেজাউল করিম, শেরপুর প্রতিনিধি: আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্ত এলাকায় বালিজুরি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সোমেশ্বরী নদী থেকে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। কয়েক মাস যাবত শ্যালো মেশিনের ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় বালু দস্যুরা।

এতে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর তীরবর্তী বালিজুরিসহ আশপাশের গ্রামের শত শত বিঘা ফসলি জমি, বনভূমি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর ঘরবাড়ি। অপরদিকে মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরাকার।

বালু উত্তোলন বন্ধ করতে ভুক্তভোগীরা সভা, সমাবেশ ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতায় বন্ধ হচ্ছেনা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।

এদিকে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে এবারের বর্ষায় হয়তো আরো ব্যাপক ক্ষতির আশংকায় আতংকিত এলাকাবাসী। স¤প্রতি সরেজমিন গেলে স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সাথে কথা বলে ওঠে আসে এমন তথ্য।

জানা যায়, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন রানীশিমুল। এই ইউনিয়নের উত্তর সীমানা ঘেষা ও ভারতের পার্শ্ববর্তী এলাকা খারামোরা, বালিজুরি, রাঙাজান, বিলভরট, তাওয়াকোচা ও দুদনইসহ ১০/১২টি গ্রাম। ভারত থেকে ওইসব গ্রামের ওপর দিয়ে নেমে এসেছে সোমেশ্বরী নদী। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় বালুদস্যুরা সোমেশরবী নদীতে চালাচ্ছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। বালু দস্যুদের পরিচয় প্রকাশ করে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও সুফল পাচ্ছেননা ক্ষতিগ্রস্তরা।

তাদের অভিযোগ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট ও পরিবেশ দূষণের প্রতিবাদে ইতিপূর্বে শ্রীবরদী শহীদ মিনারের পাশে ও শেরপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পাহাড়ি সমাজ, বর্মণ ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনউদ্যোগ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানব বন্ধন করেছে। এতে জান মাল, রাস্তাঘাট, আবাদী জমি আর জীববৈচিত্র রক্ষার দাবি জানায় আন্দোলনকারীরা। এর পরও থামছেনা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।

প্রকাশ্যে দিবারাত্রি চলছে বালু উত্তোলন। এতে শ্যালো মেশিনের বিকট শব্দে নষ্ট হচ্ছে আশপাশের শিক্ষার পরিবেশ। ভেঙে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। স্থানীয় বালিজুরি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদানে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে জানান ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাই্যয়েবুর রহমান।

তিনি বলেন, নিয়মিত বালু উত্তোলনে বিদ্যালয়ে আসার সামনের নদীটির গভিরতা বাড়ছে। এতে ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া ঝঁকি ক্রমেই বাড়ছে। এসব ড্রেজার মেশিনের শব্দে ছাত্রছাত্রীদের পড়া লেখার মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় আদিবাসী নেতা ও উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বরং অভিযোগ করলে বালু উত্তোলনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। বালু উত্তোলনের ফলে ১০/১২টি গ্রামের মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে আবাদি ফললের। কাচা সড়ক গুলো বিধ্বস্ত হয়ে এখন আর ট্রলি ব্যতিত অন্য কোনো যান বাহন চলাচল করতে পারেনা। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এসব দেখেছে। অথচ রহস্যজনক কারণে নিরব। 

সূত্র জানায়, শেরপুর -৩ আসনের এমপি একেএম ফজলুল হক চান স্থানীয় এক মিটিংয়ে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্যে স্থানীয় প্রশাসনকে বলেছিলেন। এদিকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেঁজুতি ধর বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চলছে। আমরা বালু উত্তোলনে ড্রেজার মেশিন পুড়িয়ে দিয়েছি। বালু জব্দ করেছি। মামলাও দেব। কার্যত সম্প্রতি ইউএন’ও কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি বলে জানান এলাবাসী। বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে  সোমেশ্বরী নদীর তীরবর্তী বসতভিটা, ব্রিজ, বনায়ন ও পাহাড়। অর্থশত শ্যালো চালিত ড্রেজার মেশিনের শব্দে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ট্রাক লরি ও মাহিন্দ্র এর অবাধ যাতায়াতে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজীয় ব্যবস্থা নিবে। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন এলাকাবাসী ও সচেতন মানুষরা।


 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top