রৌমারীতে প্রাইভেট না পড়ায়, পরীক্ষার্থীকে বের করে দিল শিক্ষক

S M Ashraful Azom
0
রৌমারীতে  প্রাইভেট না পড়ায়, পরীক্ষার্থীকে বের করে দিল শিক্ষক
শফিকুল ইসলাম, রৌমারী প্রতিনিধি : স্কুলের পরীক্ষার ফি দেওয়ার পরেও শুধু মাত্র প্রাইভেট কোচিং না পড়ায় পরীক্ষার হল থেকে পঞ্চম শ্রেণির এক পরীক্ষার্থীকে বের করে দিল শিক্ষক। গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের পাড়ের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়টিতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা শুরুতে শিক্ষার্থীদের খাতা দেওয়া হয় এবং তারা লিখতে শুরু করলে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হামিদা বেগম ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রশ্ন বিতরণ করলেও একই শ্রেণির এক শিক্ষার্থী মোছা. স্মৃতিআক্তারকে পরীক্ষার প্রশ্ন নেই বলে জানানো হয়।

পরে অন্য শিক্ষার্থীর প্রশ্নপত্র দেখতে বলে ওই শিক্ষার্থীকে (স্মৃতি)। ভুক্তভগী ওই শিক্ষার্থী অন্যের প্রশ্ন দেখবে না বলে ম্যাডামকে জানিয়ে দেয়। পরে ম্যাডাম হামিদা রাগানিত হয়ে ওই পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতা কেড়ে নেন এবং তাকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়। ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে ২৬ জন পরিক্ষার্থীর মধ্যে ২৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ক্লাস ফাঁকি, বিস্কুট নিয়ে স্বজনপ্রীতি ও ক্ষুদ্র মেরামত, স্লীপ এর টাকা কাজ না করে আত্মসাৎ করেন। ওই বিদ্যালয়ের প্রাইভেট ও কোচিং করার জন্য স্থানীয় ভাড়াটে এক যুবক মাইদুলের কাছে শিক্ষার্থীদের পড়ার চাপ সৃষ্টি করে।

আবার ওই প্রতিষ্ঠানে ৫জন শিক্ষকই হচ্ছে মহিলা। অনেক সময় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে মাথা’র চুল দেখানো’র অভিযোগ রয়েছে। ওই স্কুলের শিক্ষক প্রাইভেট পড়ান না। তবে বাইরে থেকে ভাড়াটে একজনকে নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো হয়। প্রাইভেট কোচিং এর নাম করে শিক্ষকদের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারণে গরীবের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারছেনা।

ভুক্তভগী ওই শিক্ষার্থী মোছা. স্মৃতি আক্তার বলে, আমি পরীক্ষা ফি দিয়েছি। শুধুমাত্র প্রাইভেট কোচিং না পড়ার কারণে আমাকে পরীক্ষার প্রশ্ন না দিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয় হামিদা ম্যাডাম।
ওই শিক্ষার্থী মা পারভীন আক্তার বলেন, ‘স্মৃতিকে প্রাইভেট কোচিং করানোর আমার সামর্থ্য নাই । কিন্তু আমি পরীক্ষার ফি দিয়ে তারপরও আমার মেয়ে প্রশ্ন পায়নি। প্রশ্ন না পাওয়ার কারনে সাহিদা ম্যাডামের কাছে প্রশ্ন চাইতে গেলে তিনি বলেছিল হামিদা ম্যাডামের কাছে যাও। কিন্তু হামিদা ম্যাডাম প্রশ্ন শেষ হয়েছে বলে জানায় স্মৃতিকে। পরে তাকে পরীক্ষার হল থেকে বাড়ি যেতে বলেছিল। আমরা গরীব কি করে এত টাকা দিবে।’

স্থানীয় এক মহিলা বিস্কুট সম্পর্কে জানান, মাস্টানীদের বাড়িতে একটু হাতের কাজ করলেই চার থেকে পাঁচ প্যাকেট বিস্কুট দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী জানায়, পরীক্ষার দিন স্মৃতি প্রশ্ন পায়নি। পরে ম্যাডাম বাড়ি যাবার কইছিল। ওই (স্মৃতি) বাড়ি গেছে।

এবিষয়ে সহকারী শিক্ষিকা হামিদা’র সঙ্গে কথা বলতে গেলে, তিনি ক্যামেরার সামনে কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে ওই ছাত্রীর ঘটনার বক্তব্য ক্যামেরায় ধারন করার সময় ক্যামেরার পেছনে থাকা অভিযুক্ত শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক ধমক দিয়ে বারবার বলছে কি মিথ্যা কথা শুনছেন। অভিযুক্ত শিক্ষক হামিদা ক্যামেরা সামনে কিছু না বললেও লাইব্রেরির বাইরে এসে দ‚র থেকে বলেন, ওই শিক্ষার্থী যা বলছে তা সবগুলো মিথ্যা কথা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম বলেন, “ওই শিক্ষার্থী স্মৃতি সব মিথ্যা কথা বলেছে। তবে প্রশ্ন কম হয়েছে এটা সত্য। তিনি আরো বলেন, প্রশ্নপত্র কম হওয়ায় ওই শিক্ষার্থীকে অন্যের প্রশ্নপত্র দেখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সে নিজ ইচ্ছায় পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে বাড়ি গেছে।

”পরীক্ষার হল থেকে ওই শিক্ষার্থীকে বের করার বিষয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোছা. নুরজাহান কল্পনা জানান, বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক হয়েছে। আমাকে কেউ জানায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার হল থেকে বের করার বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রশ্নপত্র নিয়ে এমন ঘটনা ঘটলে ছাড় দেওয়া হবে না। বিষয়টি নিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top