এক ডলার সমান ৮৪ টাকা কেন?

S M Ashraful Azom
0
এক ডলার সমান ৮৪ টাকা কেন
সেবা ডেস্ক: বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি বা ইন্টারনেটের সাহায্যেই ঘরে বসেই বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের পছন্দের পণ্য ক্রয় করা সম্ভব। নিশ্চয়ই আপনি জনপ্রিয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা কিংবা আমাজনের নাম শুনে থাকবেন! নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, এসব আন্তর্জাতিক ই-কমার্স সাইট থেকে পণ্য কিনতে হলে কিন্তু আপনি টাকার ব্যবহার করতে পারবেন না। প্রয়োজন হবে ডলারের। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, বিনিময় মাধ্যম হিসেবে অন্যান্য দেশের অর্থের বদলে শুধু ডলারই ব্যবহৃত হয় কেন?

সারা পৃথিবীতে এখন সবচেয়ে বেশি যে বৈশ্বিক মুদ্রা চলছে, তা হলো মার্কিন ডলার। এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব মুদ্রা। পৃথিবীর সব দেশ যাতে মার্কিন ডলারকে নিজেদের মুদ্রার সঙ্গে বিনিময় করতে পারে, তাই এটি নিজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এই মার্কিন ডলার এতটাই লেনদেন হয়ে থাকে যে এর ধারে কাছে কেউ নেই। মজার বিষয় হলো, ১৯১৩ সালে ফেডারেল রিজার্ভ পদ্ধতি চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই কয়েকটি মুদ্রার প্রচলন ছিল।

সব মুদ্রা কিন্তু সব দেশে চলে না। বাংলাদেশের টাকা ব্যবহার করে আমরা মালয়েশিয়ায় গিয়ে কোনো কিছু কেনাকাটা করতে পারব না। একইভাবে মালয়েশিয়া থেকে এ দেশে কেউ আসলে সে মালয়েশিয়ার রিঙ্গিত দোকানে বা হোটেলে দিলে কেউ গ্রহন করবে না। তাহলে উপায় কী উপায় হলো এমন একটা মুদ্রা ব্যবহার করা, যা দুই দেশেই চলবে। সে রকম একটি মুদ্রা হলো মার্কিন ডলার।

এখন মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, তাহলে ডলার কিংবা টাকার মান নির্ধারণ হয় কীভাবে?

প্রত্যেক দেশের মুদ্রার মান নির্ধারিত হয় সে দেশের মূল্যসূচক এবং তার আমদানী, রফতানীর ওপর ভিত্তি করে। দৃশ্যমান এমন কোনো মানদন্ড নেই যা সব দেশের মুদ্রাকে এক স্থিতিতে ধরে রাখবে। যেমনটি হতো যখন মুদ্রার বিপরীতে স্বর্ণ ছিল। তখন স্বর্ণই ছিল মুদ্রার মূল্যায়নের মূল মানদণ্ড। মোট কথা, দেশের সামগ্রীক অর্থনীতিই নির্ধারণ করে সে দেশের কাগুজে মুদ্রার মান। যেহেতু প্রত্যেক দেশের অর্থনীতি এক নয়। তাই একেক দেশের মুদ্রার মানও একেক রকম। এক দেশের মুদ্রাকে অন্যদেশের মুদ্রায় রূপান্তর করতে হয়।

বিনিময় হার নির্ধারণ পদ্ধতি 

আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে লেনদেনের জন্য প্রয়োজন বৈদেশিক বিনিময় হার। এর অর্থ হলো, দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার মূল্যাণুপাত। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটা নির্ধারণ করা হয় তাকেই বিনিময় হার নির্ধারণ পদ্ধতি বলে। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে এটা নির্ধারণ করে থাকে। তবে, বাজারে কোনো দেশের মুদ্রার চাহিদা কমে গেলে বিনিময় হার বৃদ্ধি পায়। আবার চাহিদা বেড়ে গেলে বিনিময় হার হ্রাস পায়। অর্থাৎ অবস্থাটি চাহিদা বিধির ন্যায়। বিনিময় হার নির্ধারণের জন্য দু’টি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়-

১. স্বর্ণমান ব্যবস্থায় বিনিময় হার নির্ধারণ

কোনো দেশের প্রচলিত ধাতব মুদ্রায় স্বর্ণের অংশ থাকলে অথবা কাগজের নোটের বিপরীত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ জমা থাকলে এবং তা নোটের বিনিময়ে চাহিবামাত্র দেয়া হলে, উক্ত দেশের মুদ্রাকে স্বর্ণমান এবং দেশকে স্বর্ণমান দেশ বলা হয়। যেমন- যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে স্বর্ণমান মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলিত। মার্কিন ১ ডলারে যে পরিমাণ স্বর্ণ তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা আছে, বাংলাদেশের ৮৪ টাকায় সেই পরিমাণ স্বর্ণ আছে। অর্থাৎ আমেরিকার ১ ডলারের বিনিময়ে বাংলাদেশে ৮৪ টাকা পাওয়া যাবে। বিনিময়ের এই হারই হলো স্বর্ণমান বিনিময় হার।

২. কাগজের মুদ্রা ব্যবস্থায় বিনিময় হার নির্ধারণ 

মুদ্রা প্রচলিত দেশসমূহে ক্রয় ক্ষমতার সমতা তত্ত্ব এবং চাহিদা ও যোগানের তত্ত্ব দ্বারা বিনিময় হার নির্ধারিত হয়। যখন দু’টি দেশের বিনিময় হার তাদের অর্থের অভ্যন্তরীণ ক্রয় ক্ষমতার সমতার দ্বারা নির্ধারিত হয়, তাকে ক্রয় ক্ষমতার সমতা তত্ত্ব বলা হয়।

পুরো বিশ্বের মানুষ থেকে প্রায় সমস্ত দেশের সরকার, সবাই তাকিয়ে থাকে ডলারের দামের দিকে। এমন কি বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দামের ওঠা-নামার বিষয়টিকেও ডলারের দামের পরিপ্রেক্ষিতে ধরা হয়। ভারতের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে, ভারতের অর্থনীতির বড় অংশ ডলারের দামের উপর প্রভাবিত হয়। ভারতের শেয়ার বাজার থেকে শুরু করে, বিদেশ থেকে তেল আমদানি, আইটি কোম্পানিগুলোর ব্যবসা, সোনার দাম সমস্ত বিষয় ডলারের দামের ওঠা-নামার উপর প্রভাবিত হয়।

বর্তমান বাজারে টাকার অঙ্কে ঠিক এ রকম- ১০০ ইউরোতে পাওয়া যায় প্রায় ১১০ দশমিক ৭৯ ডলার। অর্থাৎ ইউরোর দাম ডলারের থেকে বেশি। আবার ১ পাউন্ডে পাওয়া যায় প্রায় ১ দশমিক ২২ ডলার। অর্থাৎ পাউন্ডের দাম ডলারের থেকে কিছুটা বেশি। অন্যদিকে ১ ডলারে পাওয়া যায় প্রায় ৭১ দশমিক ৭৫ রুপি এবং ১ ডলারে পাওয়া যায় প্রায় ৮৪ দশমিক ৫৫ টাকা। এর অর্থ রুপি এবং টাকা থেকে ডলারের দাম বেশি।

কিন্তু ডলার এহেন মহা শক্তিমান হয়ে ওঠল কীভাবে মহা শক্তিমান ডলারের পেছনের গল্প শুরু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়ের দিকে। সেই সময় থেকেই ডলার ধীরে ধীরে পৃথিবীর বুকে অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে স্থান করে নেয়। এমনকি ইউরো কিংবা ব্রিটিশ পাউন্ডের তুলনায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ কিছুটা খারাপ হয়ে পড়ে। ধাক্কা আসে এশিয়ার অর্থনীতিতেও। সময়টা ১৯৪৪ সাল। এ সময় অবস্থা সামাল দিতে মাঠে নামে ‘বিশ্ব ব্যাংক’। ঠিক হয়, এক আউন্স সোনার দাম হবে ৩৫ ডলার। এখান থেকেই শুরু। ইউরোপের পূর্ণ নির্মাণে এ সময় ‘মার্শাল প্ল্যান’ বলে বিখ্যাত একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ পরিকল্পনায় ইউরোপিয়ান দেশগুলোকে ডলার সাহায্য দেয়া হয়।

এটাই ছিল ডলারের উত্থানের দ্বিতীয় কারণ। আর তৃতীয় কারণটি ছিল আরো জোরালো। আন্তর্জাতিক রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে ডলারের ব্যবহার বাড়তে থাকে। অর্থাৎ ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ’ হিসেবে সবার আগে নিজের জায়গা করে নেয় ডলার। অপরিশোধিত তেল বা জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে ডলারের দামের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আমেরিকা তেলের অন্যতম বড় আমদানিকারক। ফলে ডলারের দাম বাড়া-কমার সঙ্গে তেলের দামেরও হেরফের হয়। এটিও একটি কারণ ডলার শক্তিমান হওয়ার। এ সবক’টি ঐতিহাসিক কারণ। এ কারণগুলোর ফলে ডলার বিশ্ব অর্থনীতিতে তার জায়গা পাকাপোক্ত করে নিয়েছে।


পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান কোন দেশের অর্থ?

কোন দেশের মুদ্রার মান সবচেয়ে বেশি এই প্রশ্নটা প্রায় সকলের মনে কোনো না কোনো সময় জাগবেই। আমরা প্রায় ভুল করে থাকি এই ভেবে যে, আমেরিকার মুদ্রা অর্থাৎ ইউএস ডলারের দাম পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। যদি আপনি এমন ভাবেন তবে আপনার ধারনা একেবারেই ভুল। হ্যাঁ, যুক্তরাষ্ট্রে পৃথিবীর সুপার পাওয়ার এবং আর্থিক দিক থেকেও মহাশক্তির দেশ বলাই যায়। তবে কখনো ভাববেন না ইউ্এস ডলারের দাম পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। আপনি হয়তো জানেন না এমন অনেক দেশ আছে যেসব দেশের মুদ্রার মান মার্কিন ডলারের চেয়ে অনেকগুণ বেশি।

ফ্রাঙ্ক 

সুইজারল্যান্ডের কারেনসিকে ফ্রাঙ্ক বলা হয়। এক সুইস ফ্রাঙ্ক ১ দশমিক ২ মার্কিন ডলারের সমান, ভারতের ৭৩ দশমিক ৬ রুপি, এবং ৮৬ দশমিক ৯ টাকার সমান।

ইউরো 

ইউরোপীয় মুদ্রাকে ইউরো বলা হয় একথা সবার জানা। এক ইউরো সমান ১ দশমিক ১১ মার্কিন ডলার। এক ইউরোর ভারতীয় মূল্য প্রায় ৭৯ দশমিক ৪৪ রুপি আর বাংলাদেশে ৯৩ দশমিক ৬৮ টাকা।

পাউন্ড 

যুক্তরাজ্যের মুদ্রার নাম পাউন্ড। এক পাউন্ড সমান ১ দশমিক ২২ মার্কিন ডলার। ভারতে প্রতি পাউন্ডের দাম ৮৭ দশমিক ৪৯ টাকা ও বাংলাদেশে ১০৩ দশমিক ১২ টাকা।

রিয়্যাল 

ওমানের মুদ্রাকে বলা হয় রিয়্যাল। ওমানের এক রিয়্যালের দাম ২ দশমিক ৬০ ইউএস ডলারের সমান। ওমানের এক রিয়্যাল সমান ভারতের ১৮৬ দশমিক ৫৬ রুপি ও আর বাংলাদেশের ২১৯ দশমিক ৯১ টাকা।

বাহরাইন দিনার 

বাহরাইন দিনার পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মূল্যবান মুদ্রা। বাহরাইনের এক দিনার সমান ২ দশমিক ৬৫ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে বাহরাইনের এক দিনার সমান ভারতীয় ১৯০ দশমিক ৩৩ রুপি ও আমাদের দেশের ২২৪ দশমিক ২৮ টাকা।

কুয়েত দিনার 

এই তালিকার শেষ নামটি কুয়েতের। কুয়েতের মুদ্রার মান পৃথিবীর যেকোনো দেশের মুদ্রার মানের চাইতে বেশি। এক কুয়েতের দিনার যেখানে ৩ দশমিক ২৯ মার্কিন ডলারের সমান। যা ভারতীয় মুদ্রার সঙ্গে তুলনা করা হলে, এক কুয়েতের দিনার ২৩৬ দশমিক ১৯ রুপি। আর বাংলাদেশের ২৭৮ দশমিক ২৫ টাকার সমান।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top