বারো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে পিআইও’র মানহানির মামলা

S M Ashraful Azom
0
বারো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে পিআইও’র মানহানির মামলা
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি : ঘুষ, দুর্নীতি ও লুটপাটের সংবাদ প্রচার করায় যমুনা টেলিভিশনের সিএনই, মফস্বল ইনচার্জ ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, মফস্বল সম্পাদক, জেলা-উপজেলা প্রতিনিধিসহ ১২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রংপুরের একটি আদালতে মানহানীর অভিযোগে মামলা হয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি-লুটপাট, একাধিক মামলা ও দাপট-দাম্ভিকতায় আলোচিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন্নবী সরকার বাদি হয়ে এই মামলা করেন। 

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আইনজীবির মাধ্যমে মামলাটি দাখিল করেন নুরুন্নবী সরকার। পরে আদালতের বিচারক রংপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলে নির্দেশ দিয়েছেন। 

মামলায় বিবাদি করা হয় যমুনা টেলিভিশনের সিএনই, মফস্বল ইনচার্জ ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক ও মফস্বল সম্পাদককে। এছাড়া যমুনা টিভির গাইবান্ধা প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান পলাশ, কালের কণ্ঠের সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি শেখ মামুন-উর রশিদ, ইত্তেফাক সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি রশিদুল আলম চাঁদ, দৈনিক জনসংকেত প্রতিনিধি জাহিদ কারী, জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম অবুজ, দৈনিক ভোরের দর্পণের প্রতিনিধি একেএম ছামছুল হক ও মানবাধিকারকর্মী মাহাবুবুর রহমান খাঁনকে বিবাদি করা হয়। এ মামলার দায়ের হওয়ায় পলাশবাড়ী রিপোর্টাস ইউনিটি ও টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম এর নেতৃবৃন্দ তিব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করে দুর্নীতিবাজ পিআইও এর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি যমুনা টেলিভিশন, কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের একাধিক প্রতিবেদন/সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। এসব সংবাদ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে সরবরাহকৃত তথ্যে এসব সংবাদ প্রচার-প্রকাশ করেন। এমন সংবাদ টিভি, বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন ও ফেসবুকে প্রচারে তার মারাত্বক সম্মানহানী হয়েছে। এতে অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে ক্ষতিপূরণ বাবদ কোন টাকা উল্লেখ বা দাবি করেনি বাদি।

এদিকে, দেশজুড়ে ঘুষ-দুর্নীতি বিরোধী চলমান অভিযানের সময় পিআইও নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হয় যমুনা টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের জেরে এবং নিজেকে সামলাতে মানহানীর অভিযোগে ১২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। হয়রানীমুলক মামলায় ফাঁসানোর ঘটনায় ফুঁসে উঠেছেন জেলা-উপজেলার সাংবাদিক সমাজ। ঘটনার তীব্র ক্ষোভ-নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দ্রæত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক সমাজ। এছাড়া বিষয়টি জানাজানি হলে বির্তকীত পিআইও নুরুন্নবীর ভুমিকায় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও সচেতন মহলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করার দায়ে অভিযুক্ত পিআইও নুরুন্নবীর শাস্তির দাবি জানান।

এ বিষয়ে যমুনা টেলিভিশনের গাইবান্ধা প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান পলাশ বলেন, ‘নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ-মামলা ও প্রমাণ আছে পিআইও নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে। সর্বশেষ জুন ক্লোজিং হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে চাপ ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকার বিল স্বক্ষর করে নেয়ার অভিযোগ উঠে পিআইও নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে। এই সূত্রেই সরেজমিনে অনুসন্ধান, বিভিন্ন ডকুমেন্ট, তথ্য-উপাত্ত, মামলা-অভিযোগ-প্রমাণ, দৃশ্যত ঘটনা ও ভুক্তভোগী-সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-বক্তব্যর প্রেক্ষিতেই প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। অভিযুক্তের বক্তব্য নিতে গিয়ে রোষানলে পড়েন সংবাদকর্মীরা। অফিসে সাংবাদিকদের দাপট দেখিয়ে বিভিন্ন বাজে মন্তব্য এবং তিনি প্রকাশ্যে ধুমপান শুরু করেন। পরে ওই ঘটনায় বিভিন্ন ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও চিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হয়’।

এরআগে, ৬ সেপ্টেম্বর ‘ঘুষ-দুর্নীতি, মামলা-প্রমাণের পরেও বহাল তবিয়তে আছেন পিআইও নুরুন্নবী সরকার’ ও ১৮ সেপ্টেম্বর ‘পিআইও নুরুন্নবীর দুর্নীতির সিন্ডিকেট’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রচার করে যমুনা টেলিভিশন। পরে গত ২৮ সেপ্টেম্বর পিআইও নুরুন্নবীকে বদলির আদেশ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। আদেশে অফিসের দায়িত্ব বুঝে দিয়ে ১৬ অক্টোবরের মধ্যে স›দ্বীপ উপজেলায় যোগদান করতে হবে বলা হয় তাকে। কিন্তু শেষ দিন মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল পর্যন্ত দায়িত্ব বুঝে না দেয়া এবং স›দ্বীপে যোগদান না করায় আদেশ অনুযায়ী স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গণ্য হন তিনি। এছাড়া গত ৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসনের গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি লোক দেখানো এবং তড়িঘড়ি করে গুরুত্বপূর্ণ অনেক অভিযোগ আড়াল করেই একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।

২০১৫ সালে সুন্দরগঞ্জে যোগদানের পর দাপট-দাম্ভিকতায় দুর্নীতি ও আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া ঘুষ গ্রহণের অভিযোগেও মামলা আছে তার বিরুদ্ধে। নানা সময়ের দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে প্রমাণও পায় সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি। প্রায় ৫ বছরে নানা ঘটনায় বেশ আলোচিত হয়ে উঠেন পিআইও নুরুন্নবী।


 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top