মির্জাপুরে সিসা তৈরির কারখানায় হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

S M Ashraful Azom
0
মির্জাপুরে সিসা তৈরির কারখানায় হুমকিতে জনস্বাস্থ্য
সেবা ডেস্ক: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সিসা তৈরীর অবৈধ কারখানায় ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হচ্ছে। উপজেলা সদর এলাকায় কারখানাটির অবস্থান। কারখানার কারণে ব্যাটারির অ্যাসিডের প্রকট গন্ধে স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ। কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। কারখানার পাশেই বাজার ও বসতবাড়ি। অদূরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কারখানা সংলগ্ন সড়ক দিয়ে বাসাইল ও সখীপুর উপজেলার লোকজন চলাচল করে।

সরেজমিন দেখা যায়, কারখানার ভেতরে শ্রমিকেরা কাজ করছেন। কেউ পুরোনো ব্যাটারির ওপরের অংশ খুলে প্লেট (ব্যাটারির ভেতর থাকা পাত) বের করছেন। কেউ ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড বের করে সংরক্ষণ করছেন। শ্রমিক বিল্লাহ হোসেন জানান, চু্ল্লির মধ্যে কাঠ ও কয়লায় অ্যাসিড মিশ্রিত ব্যাটারির বর্জ্য বা প্লেট সাজানো হয়। এরপর আগুন ধরিয়ে দিলে তা গলতে থাকে। একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক পাখা থেকে বাতাস দেয়া হয়। এভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সিসা তৈরি হয়। পুরোনো ব্যাটারি থেকে প্লেট খুলে তিনি টন প্রতি ৫০০ টাকা মজুরি পান। এই কাজ করতে তাঁর কোনো সমস্যা হয় না।

ঢাকার ধামরাই উপজেলার ধানতারা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুছ। তিনি এই কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। তিনি বলেন, এই জাগাসহ আরও ম্যালা জায়গায় কাজ করছি। আল্লাহর রহমতে অহনো শরীরে কোনো সমস্যা অয় নাই। শ্রমিক আবদুল কুদ্দুছ জানান, কারখানায় দিনে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত ব্যাটারি থেকে প্লেট খোলা ও অ্যাসিড সংরক্ষণের কাজ করা হয়। আর রাত ১০টার পর প্লেটসহ আনুষঙ্গিক জিনিস পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হয়।

কারখানার ব্যবস্থাপক বগুড়া সদরের নারুলী তালপট্টি এলাকার বাসিন্দা জুয়েল মিয়া জানান, এখানে ৯ জন শ্রমিক কাজ করেন। দিনে ছয়জন আর রাতে তিনজন। তাঁরা দিনে ব্যাটারি কাটেন আর রাতে গলান। এতে আমি তো পরিবেশের কোনো ক্ষতি দেখি না। যেকোনো কোম্পানি খুললে হেনে গন্ধ থাকেই। পোলট্রি খামারে গন্ধ থাকে। এনেও ময়লা-আবর্জনার গন্ধ আছে। আমরা যে সিসা বানাই, তা সব জায়গায় কাজে লাগে। সিসা ছাড়া মোবাইল অয় না। টিভি, ফ্রিজ, টিন বানাইতেও সিসা লাগে। কারখানার ব্যবস্থাপক আরও জানান, এক রাতে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ কেজি সিসা হয়। এজন্য প্রায় দেড় টন ব্যাটারির প্লেট লাগে। ব্যাটারির ওপরের অংশ প্লাস্টিক দ্রব্য তৈরিতে কাজে লাগে। যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেন তাঁরা। উৎপাদিত সিসা তাঁরা বাংলাদেশের বিভিন্ন চায়না ফ্যাক্টরিতে বিক্রি করেন।

স্থানীয় দুই মুদি দোকানি অভিযোগ করে বলেন, কারখানার মালিক পার্শ্ববর্তী ফেরাঙ্গীপাড়া গ্রামের। তাঁকে কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলার পরও কোনো লাভ হচ্ছে না। দিনে অ্যাসিড, রাতে ধোঁয়ার গন্ধে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

মুঠোফোনে কারখানার মালিক আশরাফ উদ্দিন বলেন, আমি একলা না তো, সারা বাংলাদেশেই এই কাম চলছে। ব্যাকেরে দিয়্যা নয়্যাই খাওন লাগে। রাত ১০টার পরে চুলা জ্বালাই। সব সিসা চায়নারা ন্যাই। বাকি থাকে না। নগদ ক্যাশ দ্যাই। কেজিতে এক-দেড় ট্যাহা থাকলেও লাভ।

একবারে স্বর্ণের মতো। কারখানার অনুমতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমারডা তো নদীর পাড়ে। এজন্য কোনো সমস্যা অয় না। ঝামেলা দেইখ্যা অনুমতি নিই না। তিনি টাঙ্গাইল, ঢাকার দয়াগঞ্জ, শেরপুর, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাটারি আনেন। মাওনা, শ্রীপুর, ধামরাই, জিরানী এলাকায় ফ্যাক্টরিতে সিসা দেন। তারা সিসা প্রসেস করে নতুন ব্যাটারি বানায়।

মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহীন আহমেদ বলেন, এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করলে তা আশপাশে থাকা মানুষের শরীরে পয়জনিং (রক্তকণিকা ও মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতি করা) সৃষ্টি করে। এর ফলে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন হতে পারে।

এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাঈনুল হক বলেন, অবৈধ কারখানায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top