বেবি ফ্যাক্টরি: যেখানে নারীদের ধরে এনে সন্তান ‘উৎপাদন’ করায়

S M Ashraful Azom
0
বেবি ফ্যাক্টরি যেখানে নারীদের ধরে এনে সন্তান ‘উৎপাদন’ করায়
সেবা ডেস্ক: ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে নেয়া হয় এক অচেনা স্থানে। পরবর্তীতে তাদের বাধ্য করা হয় যৌনকর্মে লিপ্ত হতে। অতঃপর তারা যখন গর্ভবতী হন তখন তাদেরকে গৃহ বন্দী করে রাখা হয়। এবার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পালা। তারপরই তো তাদেরকে বিক্রি করা হবে। দশ মাস যাকে গর্ভে ধারন করেছে মা, তাকে হয়ত কখনো দেখা হবে না। মা ডাক শোনার তো প্রশ্নই আসে না!

অতঃপর চড়া দামে বিক্রি করা হয় ওই নবজাতকদের। এমনই নৃশংস ঘটনা ঘটে দুই নারী ৪০ বছর বয়সী হ্যাপিনেস উকুয়োমা ও ৫৪ বছর বয়সী শেরিফাত ইপিয়ার সঙ্গে। তারা দু’জনই নাইজেরিয়ার বাসিন্দা। তাদের অভিজ্ঞতা শুনলে আপনি অবাক হবেন বৈ-কি। অঝোরে চোখের জলও পড়তে পারে! তারা বলেছিলেন, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে লাগোসে নিয়ে যাওয়া হয় তাদেরকে। শুধু তারাই নন, লাগোসে গৃহকর্মীর চাকরির কথা বলে অনেক কিশোরীকেই এভাবে পাচার করা হয়।

সেখানে জন্ম নেয়া ছেলে শিশুরা পাঁচ লাখ ও মেয়ে শিশুরা তিন লাখ স্থানীয় মুদ্রায় বিক্রি হয়। বাংলাদেশি টাকায় ছেলে শিশুদের প্রায় দেড় লাখ ও মেয়ে শিশুদের মূল্য ৮০ হাজার টাকার মতো দাম ওঠে। সম্প্রতি, সেখানকার পুলিশ ১৯ বন্দী নারী এবং ৪ শিশুকে উদ্ধার করে। তাদের মধ্যকার দুই নারী হ্যাপিনেস উকুয়োমা ও শেরিফাত ইপিয়ার জানিয়েছেন তাদের সঙ্গে ঘটা নৃশংস ঘটনা।

‘আমরা কেবল রাতেই পুরুষদের সঙ্গে ঘুমাতাম। সেখানে থাকাকালীন সময়ে গ্রাহকরা কেবল রাতে আমাদের সঙ্গে থাকত। এসময় হ্যাপিনেস জানান, সাত পুরুষের সঙ্গে ঘুমানোর পর আমি জানতে পারি মা হতে চলেছি। আমাকে যিদিও বলা হয়েছিল, প্রসবের পরে আমাকে টাকা দেয়া হবে। এমনকি আমি চাইলে সেখান থেকে চলেও আসতে পারি। বর্তমানে আমার গর্ভাবস্থার ছয়মাস চলছে। 

কেন তিনি তার আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি  বলেন, সেখানে নেয়ার পর আমার মোবাইল তারা নিয়ে নেয়। কারো সঙ্গে যোগাযোগের কোনো সুযোগ সেখানে ছিল না। আমাদেরকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। এছাড়াও কড়া পাহারায় রাখা হত। হ্যাপিনেসের মত অন্যান্য নারীরাও বাধ্য হয়ে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়তেন। সঙ্গে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য তাদেরকে ব্যবহার করা হত। তবে দুঃখের বিষয় তার এক বান্ধবীই তাকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সেখানে নিয়ে আসে।

নাইজেরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর লাগোসে ছিল এমনই একটি বেবি ফ্যাক্টরি। যেখানে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ১৫ থেকে ২৮ বছর বয়সী ওই নারী ও কিশোরীদের নাইজেরিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে লাগোসে আনা হয়। যখনই তাদের মধ্যে কেউ গর্ভবতী হতেন তখন কিছু নার্স তাদের দেখভাল করতেন। তারা প্রসবের আগে পর্যন্ত গর্ভবতী নারীদের তদারকি করতেন। প্রসবের পরে, বাচ্চাদের তিনটি পৃথক বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাদের প্রস্তুত ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়।

ওলুগবিহুন স্ট্রিট, ওলাকুনলে বাস স্টপ আবারাঞ্জা, আনোমো স্ট্রিট, আবারাঞ্জা এবং ইকোটুনের  আদিসা স্ট্রিট আয়ানওয়াল অঞ্চল, সমস্তই লোগোস রাজ্যে। এসব জায়গায় অপহৃত নারীদের লুকিয়ে রাখত অপরাধীরা। তবে সেখানকার বাসিন্দারা বিভিন্ন সময়ে গর্ভবতী নারীদের উপস্থিতি বেশি দেখায় সন্দেহ পোষণ করেন। এরপর তাদের করা একাধিক অভিযোগের পরে সিন্ডিকেটটি পুলিশের নজরে আসে।

সিন্ডিকেটটি কীভাবে ধরা হয়েছিল তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে, লাগোসের রাজ্য পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা, ডিএসপি এলকানা বালা গণমাধ্যমকে বলেন, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪ টার দিকে একটি নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকেই ১৯ গর্ভবতী নারীদের উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরো জানান, গর্ভবতী নারীদের নদী, ক্রস নদী, আকওয়া ইবম, আনামব্রা, অ্যাবিয়া এবং ইমো স্টেটস থেকে আনা হয়েছিল। গ্রেপ্তারকৃত সন্দেহভাজনদের মধ্যে কিছু নার্সও ছিলেন। যারা আনুষ্ঠানিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ ছাড়াই নার্স হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন। তারা যথাক্রমে ইমো এবং এপি, লোগোস রাজ্যের  স্থানীয়। এই ফ্যাক্টরির মূল হোতা ছিলেন ম্যাডাম ওলুচি। তিনি নিজেও পাঁচটি সন্তানের মা ছিলেন। এ বাচ্চাগুলোকেও তিনি বিক্রি করে দেন বিভিন্ন জায়গায়। উদ্ধার অভিযানে তাকেও পুলিশ গ্রেফতার করে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top