এমপি লিটন হত্যা মামলার রায়ে সন্তুষ্ট এমপি লিটনের পরিবার

S M Ashraful Azom
0
এমপি লিটন হত্যা মামলার রায়ে সন্তুষ্ট এমপি লিটনের পরিবার
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি: বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকরগাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রয়াত এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলার রায়ে ৭ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- ওই আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ওঅবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আব্দুল কাদের খান এবং তার পিএস শামছুজ্জোহা, গাড়ি চালক হান্নান, ভাতিজা মেহেদি, শাহীন, রানা ও চন্দন কুমার রায়। এদিকে আদালত দন্ডপ্রাপ্ত আসামি চন্দ্রন কুমার রায়কে পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। যেদিন তাকে গ্রেফতার করা হবে সেদিন থেকেই তার রায় কার্যকর হবে বলে বিচারক তার রায়ে উলে¬খ করেন।

এসময় কাদের খানসহ ৬ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এদেরমধ্যে দন্ডপ্রাপ্ত আসামি চন্দন কুমার রায় ভারতে পলাতক রয়েছে। এছাড়া মামলার অপর আসামি কসাই সুবল স¤প্রতি কারাগারে অসুস্থ্য অবস্থায় মারা যায়। জেলা ও দায়রা জজ দিলীপ কুমার ভৌমিক তাঁর আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবিদের দীর্ঘ ১৮ মাস যুক্তিতর্কের পর এই রায় ঘোষণা করা হয়।
উলে¬খ্য যে, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনায় ৮ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করে লিটনের বড় বোন ফাহমিদা কাকুলী বুলবুল। তদন্ত শেষে কাদের খাঁনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৭ সালের ২১ ফেব্র“য়ারী বগুড়া বাসা থেকে গ্রেফতারের পর থেকে কাদের খাঁনকে গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকেই তিনি গাইবান্ধা জেলা কারাগারে আটক রয়েছেন।

উলে¬খ্য, এই হত্যাকান্ডের পর পুলিশ দুটি মামলা দায়ের করে। একটি অস্ত্র মামলা ও অপরটি হত্যা মামলা। ইতোমধ্যে অস্ত্র মামলার রায়ে একমাত্র আসামি ওই আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ও অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আব্দুল কাদের খানকে গত ১২ জুন যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আলোচিত এ মামলা ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল প্রথম দফায় আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। বাদি, নিহতের স্ত্রী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ এ পর্যন্ত ৫৯ জন সাক্ষীর সাক্ষগ্রহণ করেছে আদালত। গত ৩১ অক্টোবর মামলার সাক্ষী গ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়। এই মামলায় কাদের খানসহ পলাতক চন্দন কুমার রায় ছাড়া অন্য ৫ জন আসামি শামছুজ্জোহা, হান্নান, মেহেদি, শাহীন, রানা এই হত্যাকান্ডে তাদের সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। চলতি বছরের গত ১৮ ও ১৯ নভেম্বর মামলার যুক্তিতর্কউপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি পিপি শফিকুল ইসলাম শফিক।

২০১৮ সালের ৭ ফেব্র“য়ারী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালতের বিচারক।

এদিকে এমপি লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের আবেগ আপ¬ুত হয়ে তার বক্তব্যে উলে¬খ করেন তিনি এই রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। কাদের খানের ক্লিলাররা তার বাড়িতে ঢুকে নির্মমভাবে তার স্বামী এমপি লিটনকে হত্যা করে। সেজন্য কাদের খান এবং তার সহযোগীদের একমাত্র ফাঁসি তারা কামনা করেছেন। এছাড়া তিনি তার বক্তব্যে উচ্চ আদালতেও এই ফাঁসির রায় বহাল থাকবে এবং এই রায় দ্রুত কার্যকর করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সেইসাথে তিনি কাদের খানসহ দন্ডপ্রাপ্ত সকল খুনিদের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সরকারের কাছে আবেদন জানান। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যার শাসনামলেই এদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলেই তিনি দ্রুততম সময়ে তার স্বামীকে হারানোর বিচার পেয়েছেন।

এই মামলার বাদি লিটনের বড় বোন ফাহমিদা কাকুলী বুলবুল বলেন, রায় দ্রুত কার্যকরে তিনি এবং লিটনের পরিবার খুশি হয়েছেন। এজন্য তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং এই রায় যাতে দ্রুত কার্যকর হয় তা প্রত্যাশা করেন।

এব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি পিপি শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, তিনি এবং বাদি সহ প্রয়াত এমপি লিটনের পরিবারের সদস্যরা এই রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। আদালতে এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেননা মূল আসামি কাদের খানসহ আরও ৫ জন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে প্রমাণ করেছেন তারা এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন উচ্চ আদালতে এই রায় বহাল থাকবে।

আসামি পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট নই, কেননা আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। এমপি লিটনকে যেভাবে ষড়যন্ত্রকরে হত্যা করা হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে আসামি কাদের খাঁনকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তিনি উলে¬খ করেন, কেননা হত্যাকান্ডের সময় কাদের খাঁন দেশের বাইরে ছিলেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো।

এই রায় ঘোষণার সময় উৎসুক মানুষ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আদালতে ভীড় জমায়। রায় ঘোষণার পর তাদের সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এসময় আদালত চত্বরে আইন শৃঙখলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্য দিয়ে আসামিদের আদালতে হাজির করেন এবং রায় ঘোষণার পর দ্রুত তাদের আদালত থেকে গাইবান্ধা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতে হাজির হওয়ার সময় মূল আসামি কাদের খানের মুখে কোন উদ্বেগ ছিল না। বরং মৃদু হাসি মুখে ফুটিয়েই তিনি আদালত চত্বরে প্রবেশ করেন। রায় ঘোষণার পরেও কাদের খানের মুখ ছিল বিমুর্ষ এবং চিন্তাযুক্ত।



 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top