আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠী বিষয়ে গাইবান্ধায় মতবিনিময়

S M Ashraful Azom
0
আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠী” বিষয়ে গাইবান্ধায় মতবিনিময়
ছবি- সেবা হট নিউজ
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি: গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনাতনে বাংলাদেশের “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠী” শীর্ষক মতবিনিময় সভা জনউদ্যোগ, গাইবান্ধার আয়োজনে আজ ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়।

জনউদ্যোগের আহবায়ক অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বীরমুক্তিযোদ্ধা গৌতম চন্দ্র মোদক, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আমিনুল ইসলাম গোলাপ, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহবায়ক এ্যাড.সিরাজুল ইসলাম বাবু, জনউদ্যোগের সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, সম্প্রীত ফোরামের সভাপতি জিয়াউল হক কামাল, আদিবাসী নেতা গৌর চন্দ্র পাহাড়ী, সুফল হেমব্রম, উদীচীর সাধারন সম্পাদক মাহমুদুল গণি রিজন, আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুর্মু, নারী নেত্রী সুমিতা রবিদাস, হরিজন যুব ঐক্য পরিষদের নেতা রাজেশ বাশফোর, বিডিআরইএম এর সাধারণ সম্পাদক খিলন রবিদাস প্রমুখ।

বক্তরা বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের জাতীয় বীর। তাঁদের চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে আদিবাসী, দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ, স্বাধীনতাকামী জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। নয়মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে শহীদ হয়েছে ৩০ লাখ মানুষ, ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হয়েছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা বহন করে চলেছে আজো অগণিত মানুষ। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অবিস্মরণীয় অবদান আমাদের ইতিহাসে আরেক অনালোচিত অধ্যায়। এ জনপদের মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি পর্বে আদিবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আমাদের শোষণ, বঞ্চনার লড়াইকে শুধু প্রাণিতই করেনি, শাণিতও করেছে।

ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তানের বহুবিধ বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সর্বোপরি বাংলা নামে একটি দেশের আত্মপ্রকাশের সংগ্রামে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অবিস্মরণীয় সক্রিয় অংশগ্রহণ মুক্তির সুবাতাস প্রবাহের স্বপ্ন আর প্রত্যাশাকে প্রসারিত ও জাগ্রত করে তুলেছিল।

বাংলাদেশের দলিত স¤প্রদায় জাতপাত অস্পৃশ্যতার কারণে সবচেয়ে পশ্চাৎদ জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। আধা কোটির উপরে দলিত জাত পাতের কারণে শত শত বছর ধরে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে শোষিত নিপীড়ণের শিকার। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অস্পৃশ্যতার গøানি নিয়ে তাদের সমাজে সবচেয়ে নিচু শ্রেণির মানুষের পরিচয়ে পরিচিত করে এবং তারা বঞ্চিত হয় মৌলিক নাগরিক সুবিধা থেকে। দলিতদের শিক্ষা ও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরি দিতে হবে, সরকারি ও বেসরকারি যেকোনো চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে দলিতদের প্রতি জাত-পাত ভিত্তিক বৈষম্য বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেবলমাত্র ধর্ম, বর্ণ গোষ্ঠী, নারী-পুরুষ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাদের সঠিক স্থান না হওয়ার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র এককভাবে এই অসমতাকে অনুমোদন দেয়। জাতি, ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, অঞ্চলভিত্তিক নিরপেক্ষতাই আসলে আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানেই বৈষম্যহীন সমাজের জন্য কাজ করা, সমাধিকার এবং ভ‚মি এবং ইতিহাসের মালিকানায় উত্তরাধিকারী হওয়া। তাই এই ভ‚খন্ডে জঙ্গল, জমি, জলা, বন্দর, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খনিজসম্পদ সকল রক্ষা করার দায়িত্ব আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে জমি দখল, জঙ্গল চুক্তি, সংখ্যালঘুর ওপর আক্রমণ, লিঙ্গীয় সংখ্যালঘুর ওপর আঘাত, মুক্ত চিন্তার ওপর নজরদারি, আদিবাসী স্বীকৃতির দাবির বিপরীতে অনড়তা, নারী ও সংখ্যালঘুর ওপর মানসিক চাপ তৈরি- কোনোভাবেই গ্রহণীয় নয়। বরং এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত এবং সংঘর্ষমূলক।


 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top