অবৈধ সম্পদ উপভোগের দিন আর নেই: দুদক চেয়ারম্যান

S M Ashraful Azom
0
অবৈধ সম্পদ উপভোগের দিন আর নেই দুদক চেয়ারম্যান
সেবা ডেস্ক: অবৈধ সম্পদ নির্বিঘ্নে উপভোগের দিন শেষ। অপরাধলব্ধ সম্পদ দুর্নীতিবাজদের ভোগ করতে দেওয়া হবে না। তাদের সম্পদ যাবে সরকারি কোষাগারে। আদালতের নির্দেশে অবরুদ্ধ, ক্রোক বা বাজেয়াপ্ত সম্পদ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের কার্যক্রম শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সূত্র জানায়, দুদকের নতুন সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) অনুযায়ী চলতি বছরের শুরুতেই অপরাধীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু করেছে দুদক। এর তত্ত্বাবধানে থাকবেন দুদক সচিব। দুদক পরিচালক মনিরুজ্জামান খানের নেতৃত্বে ছোট্ট পরিসরে কাজ শুরু হলেও শিগগির জনবল ও প্রযুক্তিগতভাবে এ ইউনিটকে শক্তিশালী করা হবে।

অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট চলতি বছরে অভিযুক্ত ও আসামিদের জব্দ, ক্রোক, অবরুদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত সম্পদের হিসাবনিকাশ করছে। পর্যায়ক্রমে বিগত বছরের সম্পদের হিসাব করা হবে। সম্পদগুলো রেজিস্টারভুক্ত করা হচ্ছে। কোনো কোনো সম্পদ দেখভাল করার জন্য আদালত থেকে দুদককে রিসিভার (গ্রহীতা) নিযুক্ত করা হয়েছে। তারা কীভাবে সম্পদগুলো পরিচালনা করছে, সেগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। অপরাধলব্ধ সম্পদের ওপর রাষ্ট্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতেই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট গঠন- এমনটাই বলেছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, সব কিছু করা হবে আদালতের চূড়ান্ত রায়ের পর। এর আগ পর্যন্ত জব্দ, ক্রোক, অবরুদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত সম্পদ দেখভাল করবে কমিশনের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট। অবৈধ সম্পদ নিয়ে আনন্দ করার সুযোগ আর রাখা হবে না। এ কারণে কমিশন শতভাগ মামলায় শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দিন দিন জব্দ, ক্রোক ও বাজেয়াপ্ত সম্পদের পরিমাণ বাড়ছে। এর মধ্যে নগদ অর্থ, বাড়ি-ফ্ল্যাট, শিল্প-কলকারখানা, ধানী জমিসহ নানা ধরনের সম্পদ রয়েছে। সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে দুর্নীতিবাজদের এসব সম্পদ। দুদকের জনবল সংকটের কারণে এগুলো সংরক্ষণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে টেন্ডারের মাধ্যমে অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সেটি অবশ্যই আদালতের অনুমতি নিয়ে করা হবে।

দুদক সূত্র জানায়, জব্দ বা বাজেয়াপ্ত করা সম্পদ কোনো শিল্প-কলকারখানা হলে সেগুলো বন্ধ করা হবে না। চালু রাখার জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে অভিজ্ঞ লোক নিযুক্ত করা হবে। কারখানার শ্রমিক যাতে বেকার না হন, সম্পদ যাতে নষ্ট না হয়, সে ব্যবস্থা করা হবে। সব সম্পদই রাষ্ট্রের। এগুলোর রিসিভারের দায়িত্বে থাকবে দুদক। চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত জব্দ ও বাজেয়াপ্ত সম্পদ সরকারের কোষাগারে যাবে না। কারণ, চূড়ান্ত রায় আসামির পক্ষে গেলে ওইসব সম্পদ এবং তা থেকে আয়ের অর্থ আসামিকে ফেরত দিতে হবে। এর আগ পর্যন্ত সম্পদের হিসাব দুদকের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট সংরক্ষণ করবে।

সূত্র জানায়, ২০০৯ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ১১ বছরে দেড় হাজারের অধিক মামলায় অপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ কত, তার হিসাব এখন পর্যন্ত নির্ণয় করা হয়নি।

দুদক সূত্র জানায়, বিভিন্ন মামলায় কমিশন ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৬৫টি ব্যাংক হিসাবের ২০ কোটি ১৮ লাখ টাকা জব্দ করেছে। একই সময়ে বহুতল ২১টি বাড়ি, ২৪টি ফ্ল্যাট, ৭৭ একর জমি, ৫টি বিলাসবহুল গাড়ি ক্রোক করা হয়েছে। ২০১৩ থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত আদালতের আদেশে মানি লন্ডারিং মামলায় ৫৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেগুলো পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে।

জানা গেছে, মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্টের (এমএলএআর) মাধ্যমে দুটি মানি লন্ডারিং মামলায় হংকংয়ে ১৬ মিলিয়ন হংকং ডলার ও যুক্তরাজ্যে শূন্য দশমিক ৮০ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড জব্দ করা হয়েছে। ওই অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর আগে দেশে-বিদেশে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে সিঙ্গাপুর থেকে ২ দশমিক শূন্য ৬ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার ও শূন্য দশমিক ৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে ফেরত আনা হয়েছে।

জানা গেছে, মামলার রায়ে অপরাধীর সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে ক্রোক, অবরুদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত করার পর সেগুলো দেখভাল করতে সরকারের যে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে রিসিভার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এরপর থেকে ওই সব সম্পদ থেকে আয়ের অর্থ নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা হতে থাকে। আদালত সম্পদ বাজেয়াপ্তের রায় দিলে সংশ্নিষ্ট ব্যক্তি পরে সাজা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আপিল করে থাকেন। হাইকোর্টে হেরে গেলে তারা যান আপিল বিভাগে। আপিল বিভাগে আসামির বিরুদ্ধে রায় হলে সংশ্নিষ্ট অপরাধীর সম্পদ চূড়ান্তভাবে বাজেয়াপ্ত হয়। এরপর ওইসব সম্পদের রাষ্ট্রীয় মালিকানা নিশ্চিত হয়। তখন এই সম্পদ থেকে আয়ের অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের আগে সম্পদের ওপর পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় মালিকানা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। তখনও আইনি প্রক্রিয়ার একাধিক ধাপ থেকে যায়। সব ধাপ পার হওয়ার পর অপরাধলব্ধ সম্পদের ওপর পুরোপুরিভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়।

দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা বিচারাধীন অবস্থায় অপরাধলব্ধ সম্পদ ক্রোক, অবরুদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত করা হয়ে থাকে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের আদেশে স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়। পরবর্তী সময়ে মামলার রায়ে স্থাবর-অস্থাবর দুটি পর্যায়ের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়। অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে দুদকের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা নিজ আইনি ক্ষমতাবলে অভিযুক্তের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করতে পারেন। মানি লন্ডারিং মামলার ক্ষেত্রে আদালতের রায়ের আগেও অভিযুক্তের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা যাবে। এ ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তাকে বাজেয়াপ্তের অনুরোধ জানিয়ে আদালতে আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে।

আবজালের ক্রোক হওয়া সম্পদ :স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরখাস্ত হওয়া হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেনের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুদককে রিসিভার হিসেবে নিযুক্ত করেছেন আদালত। এই সম্পদের মধ্যে ঢাকার উত্তরায় ছয়তলার দুটি বাড়ি ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট রয়েছে। বাড়ি ও ফ্ল্যাট থেকে আদায়কৃত ভাড়ার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আবজালের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি তদন্তাধীন। চূড়ান্ত রায়ে কে হারবে, কে জিতবে, এখনই তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ওই দুটি বাড়ি ও ফ্ল্যাটের ভাড়ার টাকা কোথায় জমা করা হবে, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট থেকে এ ব্যাপারে কমিশনের আইন শাখার মতামত চাওয়া হয়েছে।

গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সম্পদ বাজেয়াপ্ত :মানি লন্ডারিং মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিদেশে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছেন আদালত। আদালতের এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন মামুন। চূড়ান্ত আপিল নিষ্পত্তির পর রায় দুদকের পক্ষে গেলে তার সম্পদ দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে। বিদেশে মামুন পাচার করেছেন ৬ কোটি টাকার ওপরে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top