অনন‌্য অসাধারন গ্রাজু‌য়েট মেধাবীর গল্প

S M Ashraful Azom
0
অনন‌্য অসাধারন গ্রাজু‌য়েট মেধাবীর গল্প
শামীম তালুকদার: একজন সহ‌যোগীর সাহায্য নি‌য়ে যে ছেলেটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে হয়, যে কিনা মুখে কলম ধরেই সম্মানের সহিত অতিক্রম করেছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। বলছি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অতিপরিচিত মুখ হাফিজুর রহমানের কথা।যি‌নি জন্মগতভাবেই অপ‌রিস্ফুটিত দুই হাত ও দুই পার অ‌ধিকারী।

হাফিজুর রহমান ১৯৯৩সালে বগুড়ার ধুনট উপজেলার বেলকুচি গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেন ।বা           

বাবা পৌঢ় পক্ষাপঘাতের রোগী মো. মফিজ উদ্দিন পেশায় সাধারণ কৃষক, মা ফিরোজা বেগম গৃহিণী।

ছোটবেলায় বাবার কাছেই ‘বর্ণ পরিচয়’ শেখা হাফিজুরের।বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ব্র্যাক স্কুলে শুরু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন। সে সময় বেয়ারিংয়ের গাড়িতে করে সহপাঠীরা স্কুলে নিয়ে যেত তাকে। এভাবেই স্কুলে যাওয়া-আসার মধ্যে ২০০৯ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.১৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হন জ্ঞানপিপাসু হাফিজুর। তারপর অত্র উপজেলার ধুনট ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ ৩.৬০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।

২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে কোনও ভর্তি কোচিং না করেই জবির ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান করে নেন হাফিজুর। ভর্তি হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে। পরীক্ষার হলে মেঝেতে পাটিতে বসে ছোট টুলে খাতা রেখে মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিয়ে গেছেন এই শিক্ষার্থী।

ছোটবেলা থেকেই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া হাফিজুরের পড়ালেখা ও যাবতীয় ভরণপোষণ হয়েছে পরনির্ভশীলতায়। মাঝে সরকারের দেওয়া ভাতা, গ্রামের সাহায্য সহযোগিতা ও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের টিউশনি করিয়ে নামমাত্র অর্থ উপার্জন করেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বিয়ে করে সংসার নিয়ে ব্যস্ত হাফিজের তিন ভাই। তারাও কৃষি কাজ করেই নিজ নিজ সংসার চালাচ্ছেন।

হাফিজুর বলেন, একসময় সবাই বলত আমার পক্ষে উচ্চশিক্ষা নেয়া সম্ভব নয়, হাল ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনও পরিকল্পনা করতে। কিন্তু আজ আমি মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। এটা জেনে আমার এলাকার অনেকেই গর্ব বোধ করে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উদ্দেশে হাফিজুর বলেন,  আমাদের উচিত লক্ষ্য স্থির করা। তাহলে আমরা সমাজের বোঝা হয়ে থাকব না। আমরা প্রতিযোগিতায় সাধারণ মানুষের মতোই অংশগ্রহণ করতে চাই।

আপাতত নিজের পড়ালেখার খরচ ও অসুস্থ বাবা-মাকে সহযোগিতা করার জন্য ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত  টি-শার্ট, ব্যাগ,হুডি, ব্যাজ ও বগুড়ার দই বিক্রয় করছেন হাফিজুর।

হাফিজুর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইবোনদের যতো ব্যাগ ও শার্ট লাগে তা আমার এখান থেকেই কিনবেন। এতে আমি একজন অসহায় ভাই হিসেবে কিছু উপার্জন করার সুযোগ পাব। ভালোভাবে শেষ করতে পারব নিজের  বাকি পড়ালেখাও।

তিনি বলেন, বন্ধুরা যখন লাইব্রেরিতে বসে চাকরির পড়ালেখায় মনোনিবেশ করছে,আমি তখন দুটো টি-শার্ট বিক্রির জন্য ব্যস্ত। আমি জানি না আমার এই দুঃসহ জীবনের শেষ কোথায়!

এদিকে ২০০৯ সালে মুখে কলম ধরে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারণার সুবাদে বেশ ক'জন ব্যক্তি ও সংস্থা তার লেখাপড়া চালিয়ে যাবার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে মাঝে মাঝে সরকারের দেওয়া কিছু শিক্ষাবৃত্তিও পেতেন এই মেধাবী যুবক। তবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে তা আর নেই।

ঢাকায় তার দৈনন্দিন চলাফেরা ও উচ্চমাধ্যমিকে অধ্যয়নরত ভাতিজা মো. ইব্রাহিমের পড়ালেখার খরচও বহন করেন

যখন ঢাকায় টি-শার্ট বিক্রি করে ভাতিজাসহ দৈনন্দিন জীবন-যাপনেই হাফিজুর ক্লান্ত। তখন গ্রামে বার্ধক্যগ্রস্ত ও পক্ষাঘাত রোগাক্রান্ত পিতা ও বৃদ্ধা মা নূন্যতম খেয়ে পরে ভালো কিছুর আশায় এই হাফিজুরের দিকেই চেয়ে আছে।

সাধারণত হাত-পা বিকল হওয়া মানুষগুলো সমাজের বোঝা হয়েই বাঁচে। এক্ষেত্রে সকল হাত-পা অকেজো হওয়া জবি শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান ছিলেন ব্যতিক্রম। নিজের অদম্য সাহস, প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় সংকল্প আজ হাফিজুরকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। সমাজের আর দশজন প্রতিবন্ধী লোকের জন্য সে আজ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছে।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যদি আমাকে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও চাকরি দেওয়া হয় তবে আমার ও আমার পরিবারের জন্য বড় উপকার হয়। ইতোমধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে সেকশন অফিসারের পদের জন্য আবেদন জানালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও সাড়া পাননি তিনি।

গতকালের মহামান‌্য রাষ্টপ‌তির সমাবর্তন ভাষণ এর মধ‌্যদি‌য়ে জগন্নাত বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ের সমাবর্তন অনু‌ষ্ঠিত হ‌য়ে‌ছে সারাদে‌শে প্রায় সকল প‌ত্রিকা ও সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ‌্যমে ভাইরাল হ‌য়ে‌ছেন এ মেধাবী মানুষ‌টি।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top